জাপানে ইনফ্লুয়েঞ্জা ঋতু স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় পাঁচ সপ্তাহ আগে শুরু হওয়ায় দেশব্যাপী মহামারী ঘোষণা করা হয়েছে। রোগের বিস্তার তীব্র হওয়ায় স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।

টোকিও: জাপানে ইনফ্লুয়েঞ্জা ঋতু স্বাভাবিকের চেয়ে আগে শুরু হয়েছে। ৪,০০০-এর বেশি কেস রিপোর্ট হওয়ার পর দেশব্যাপী ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারী আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস দেশে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া সপ্তাহে দেশজুড়ে প্রায় ৩,০০০ হাসপাতাল থেকে ৪,০৩০টি ফ্লু-এর কেস রিপোর্ট করা হয়েছে। ওকিনাওয়াতে সবচেয়ে বেশি কেস রিপোর্ট করা হয়েছে। এর পরেই রয়েছে টোকিও এবং কাগোশিমা। শিশুদের মধ্যে রোগের বিস্তার তীব্র হওয়ায় কর্তৃপক্ষ ১০০টিরও বেশি স্কুল, কিন্ডারগার্টেন এবং শিশু যত্ন কেন্দ্র বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।

পাঁচ সপ্তাহ আগে

এ বছর জাপানে ইনফ্লুয়েঞ্জা ঋতু স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় পাঁচ সপ্তাহ আগে শুরু হয়েছে। কোভিড-পরবর্তী বিশ্বে ভাইরাসের চরিত্রে পরিবর্তনের বিষয়ে এটি উদ্বেগ বাড়িয়েছে। জাপানের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ৩ অক্টোবর রিপোর্ট করেছেন যে গত সপ্তাহের তুলনায় ফ্লু-এর কেস চারগুণ বেড়েছে।

অনিয়মিত আবহাওয়ার ধরন, ফ্লু ভাইরাসের চরিত্রের পরিবর্তন এবং কম টিকা দেওয়ার হার সহ বিভিন্ন কারণ এই বৃদ্ধির জন্য দায়ী হতে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে বিশ্বব্যাপী পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে আগামী বছরগুলিতে সময়ের আগে এবং তীব্র রোগের প্রাদুর্ভাব সাধারণ হয়ে উঠতে পারে।

প্রতিরোধের জন্য টিকা জরুরি

জাপানের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা নাগরিক এবং পর্যটকদের ফ্লু-এর টিকা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। টিকা সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে এবং রোগের তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে। শিশু, বয়স্ক এবং অন্যান্য রোগে আক্রান্ত দুর্বল শ্রেণীর জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরামর্শ দিয়েছে যে গর্ভবতী মহিলাদের অবশ্যই ফ্লু-এর টিকা নেওয়া উচিত, কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নিষ্ক্রিয় ফ্লু ভ্যাকসিন গর্ভাবস্থার যেকোনো পর্যায়ে নিরাপদ।

আত্ম-সুরক্ষার উপায়

টিকা ছাড়াও, ঘন ঘন হাত ধোয়া, কাশির সময় মুখ ঢাকা, এবং নিয়মিতভাবে বিভিন্ন পৃষ্ঠতল জীবাণুমুক্ত করা ভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে সাহায্য করবে। মাস্ক পরা, বিশেষ করে গণপরিবহন এবং ভিড়ের জায়গায়, সুরক্ষা বাড়াতে পারে। জ্বর, কাশি, শরীরে ব্যথার মতো সামান্য লক্ষণ থাকলেও অন্যদের মধ্যে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকায় সেলফ-আইসোলেশনে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ। লক্ষণগুলি গুরুতর হলে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। প্রথম ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ খাওয়া দ্রুত আরোগ্য লাভে সাহায্য করতে পারে।

ভারতের পরিস্থিতি ও প্রতিরোধের উপায়

বর্তমানে ভারতে ভয়ের কোনো পরিস্থিতি নেই। তবে, শীতের মাস ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে আবহাওয়ার আকস্মিক পরিবর্তন ভারতে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গের সংখ্যা বাড়াতে পারে। এই পরিবর্তনের সময়ে সতর্ক থাকা অপরিহার্য।

সর্দি ও ফ্লু প্রতিরোধের কিছু টিপস

ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সাহায্য করতে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।

টিকা নিন।

ধূমপান এড়িয়ে চলুন এবং মদ্যপান সীমিত করুন।

সুস্থ থাকতে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন।

নিয়মিত হাত ধোবেন, কাশির সময় মুখ ও নাক ঢাকুন এবং ভ্রমণের সময় অ্যালকোহল-যুক্ত স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।

বেশিরভাগ সুস্থ ব্যক্তির জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জা বিপজ্জনক হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে, এই ফ্লু ঋতুতে সুস্থ থাকতে টিকা নেওয়া এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অনুসরণ করা সহায়ক হতে পারে।