Iran Israel Conflict: ইরানের হরমুজ প্রণালি বন্ধে পারস্য উপসাগরের সঙ্গে আরব সাগরের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে চলেছে। পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে একমাত্র সংযোগ পথ বন্ধে তেল আমদানিতে কতটা ক্ষতি ভারতের? বিশদে জানতে পড়ুন সম্পূর্ণ প্রতিবেদন… 

Iran Israel Conflict: প্রথমে ইউক্রেন-রাশিয়া। তারপর লেবানন- গাজা। আর এবার সম্মুখ সমরে ইরান বনাম ইজরায়েল। সঙ্গে দোসর মার্কিন হামলায় একেবারে মহাযুদ্ধের অশনিসঙ্কেত। বেছে-বেছে ইরানের পরমাণু ঘাঁটিগুলিতে হামলা চালিয়েছে মার্কিন সেনাবাহিনী। তবে এখানেই থেমে থাকেনি আমেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানকে ফের হুঁশিয়ারি দিয়েছে যদি ইরান অবিলম্বে ইজরায়েলের সঙ্গে সংঘর্ষ বিরতিতে না যায় তাহলে ভবিষ্যতে আরও কঠিন মূল্য চোকাতে হবে আয়াতোল্লা খামেনিকে। অন্যদিকে ইজরায়েলের উপর আক্রমণের ঝাঁজ আরও বাড়িয়েছে ইরান। আর এতেই তেল ও গ্যাস সরবরাহে বিশ্বজুড়ে অশনিসঙ্কেত দেখছে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলি। কেন অশনি সঙ্কেত দেখছে? তাহলে কী আন্তর্জাতিক বাজারে ফের বাড়তে চলেছে তেলের দাম? মধ্যপ্রাচ্যের এই সঙ্ঘাতে তেলের দাম বাড়লে ভারতের কতটা লাভ আর লোকসান হবে? ত্রিমুখি এই সঙ্কটে ভারতের অবস্থান ঠিক কী?

ইরান-ইজরায়েল সঙ্ঘাতে ভারত এখনও পর্যন্ত নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছে। এমনকি সাংহাই গোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধ থামানোর বিষয়ে ইরান-ইজরায়েলের প্রতি যৌথ বিবৃতি না দিয়ে ভারত কিন্তু সন্তপর্ণে নিজেদের নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছে। কারণ, সাংহাই গোষ্ঠীর দেশগুলি মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই দেশের মধ্যে চলমান যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে বিবৃতি দিলেও ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে আলাদা করে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে তাহলে কী ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধে তেলের দাম যে বৃদ্ধি পেতে পারে একথা আগেই আশঙ্কা করা হয়েছিল। তাহলে কী তেলের দামে উদ্বিগ্ন ভারতও?

এদিকে এই ত্রিফলা সঙ্কটে রবিবারই হরমুজ প্রণালী বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান। এই হরমুজ প্রণালী হল পারস্য উপসাগরের সঙ্গে আরব সাগরের যোগাযোগের একমাত্র সংযোগস্থল। ফলে থমকে যাবে পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে সংযোগের একমাত্র জলপথ। আর সেইসঙ্গে সহ্কটের মেঘ কী তাহলে ঘণীভূত হবে জ্বালানি রাজনীতির আকাশে? কারণ, মার্কিন হামলার পরই আন্তর্জাতিক বাজারে চড়তে শুরু করেছে অপরিশোধিত তেলের দাম। একদিকে ব্রেন্ট ব্যারেল প্রতি ৭৭ ডলার ছাপিয়ে গিয়েছে। তেমনই মার্কিন ডব্লউটিআই পৌঁছেছে ৭৪.০৪ ডলারে। যদিও বিশ্বে সবথেকে বেশি পরিমাণ অপরিশোধিত তেল আমদানি করে ভারত। প্রতিদিন প্রায় ৫১ লক্ষ ব্যারেল। রুশ ইউক্রেন । যুদ্ধের সময়ও রাশিয়া থেকে সর্বোচ্চ ১৯ লক্ষ ৬০ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করেছিল ভারত। আর আমদানির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দেশ আমেরিকা।

ইরানের হরমুজ প্রণালী বন্ধের আশঙ্কা থেকে ভারত কিন্তু আগে থেকেই রাশিয়া ও আমেরিকা থেকে তেল আমদানির বহর বাড়িয়েছে। কারণ, এই দুই উপমহাদেশ থেকে তেল আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় না হরমুজ প্রণালী। সেক্ষেত্রে হরমুজ প্রণালী বন্ধ হলে প্রথম ধাক্কা ভারত খাবে না। কিন্ত এক্ষেত্রেও অবশ্য দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে। কারণ, এমনিতেই আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ছে অপরিশোধিত তেলের দাম। তার উপর পারস্য উপসাগরের রুট বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্বজুড়ে তেল সরবরাহে তা যে বড় ধাক্কা এই কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তার উপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতোন আমেরিকা থেকে নয়াদিল্লি যে তেল আমদানি করবে সেই রুটও একেবারে নিরাপদ নয়। রয়েছে ইরানের পাল্টা হামলার আশঙ্কা। পশ্চিম এশিয়ার অন্যান্য বিছিন্নতাবাদী কট্টরপন্থী দেশগুলি আরও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।

তাহলে বোঝাই যাচ্ছে যে আমেরিকা থেকে ভারত তেল সরবরাহ করলেও সেই পথও মোটেও সুরক্ষিত নয়। কারণ, আমেরিকাকে ভারতে তেল সরবরাহ করতে গেলে যে রুট দিয়ে প্রবেশ করতে হবে সেটি হল- আরব সাগরে আসতে গেলে আমেরিকাকে প্রথমে ভূমধ্য সাগর, লোহিত সাগর হয়ে আসতে হবে। আর সেখানেই মার্কিন কার্গোকে পার করতে হবে বাব-আল-মান্দেব প্রণালী। আর এটি হল ইয়েমেনের প্রণালী। ইয়েমেনের এই উপকূল অঞ্চল যেহেতু ইহুদিদের দখলে ফলে ইরানের নির্দেশে তারা মার্কিন জাহাজে হামলা চালাতেই পারে। অর্থাৎ তেল আমদানির ক্ষেত্রে তখন এই রুটও নিরাপদ থাকবে না। ফলে হামলার আশঙ্কা, সাপ্লাইলাইনে ধাক্কা খাওয়ার পাশাপাশি তেলের দাম দ্রুত হারে বৃদ্ধির একটা আশঙ্কা কিন্ত থেকেই যাচ্ছে!

তাহলে এবার কী হবে? বর্তমানে ভারতের কাছে যে পরিমাণ তেল মজুত রয়েছে তাতে হয়ত দিন দশেক তেল নিয়ে ভাবতে হবে না নয়াদিল্লিকে। কারণ, আপাতত সেই স্টক করে ফেলেছে ভারত সরকার। কিন্তু তারপর কী হবে? অর্থাৎ সঙ্কট কিন্তু বাড়ছেই। সঙ্কট বাড়ছে বিশ্বজুড়ে তেলের। বাড়বে আরও আর্থিক সঙ্কট? এখন দেখার হরমুজ বন্ধে কতটা প্রভাব পড়ে ভারতের তেলের বাজারে।

আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।