১১ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে একটি বিশাল ব্ল্যাক হোল একটি দৈত্যাকার নক্ষত্রকে গিলে ফেলেছে। এই ঘটনার সময়, সূর্যের চেয়ে ১০ ট্রিলিয়ন গুণ বেশি উজ্জ্বল একটি আলোর ঝলকানি নির্গত হয়েছিল। এই ঘটনাটিকে 'স্প্যাগেটিফিকেশন' বলা হয়।

একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল (Supermassive Black Hole) তার কাছাকাছি আসা একটি বিশাল নক্ষত্রকে গিলে ফেলার সময়, সূর্যর চেয়ে বহুগুণ বেশি শক্তিশালী আলোর ঝলকানি (Flare) নির্গত হতে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় ১১ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে একটি গ্যালাক্সিতে (Galaxy) থাকা এই ব্ল্যাক হোলটির ভর সূর্যের চেয়ে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন গুণ বেশি। সেখান থেকেই এই আলোর ঝলকানি বেরিয়ে এসেছে।

সূর্যের চেয়ে বহুগুণ উজ্জ্বল আলো

গবেষকরা জানিয়েছেন যে এই আলোর ঝলকানিটি তার সর্বোচ্চ অবস্থায় সূর্যের চেয়ে ১০ ট্রিলিয়ন গুণ বেশি উজ্জ্বল ছিল। এটি আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা ব্ল্যাক হোলের চেয়ে অনেক বড়। আমাদের মিল্কিওয়ে কেন্দ্রের ব্ল্যাক হোলটির ভর সূর্যের চেয়ে মাত্র ৪ মিলিয়ন গুণ বেশি।

গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে, ভুলবশত খুব কাছে চলে আসা একটি দৈত্যাকার নক্ষত্রকে এই ব্ল্যাক হোলটি তার মহাকর্ষীয় শক্তি দিয়ে টেনে নেওয়াই এই আলোর ঝলকানির সবচেয়ে সম্ভাব্য কারণ। যখন সেই দুর্ভাগা নক্ষত্রের অংশগুলি ব্ল্যাক হোলের 'পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন' (Point of No Return) বা যেখান থেকে ফেরা যায় না, সেখানে পৌঁছায়, তখন সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণ শক্তি ছিটকে বেরিয়ে আসে।

গিলে ফেলা দৈত্যাকার নক্ষত্র

গবেষকদের মতে, গিলে ফেলা নক্ষত্রটির ভর সূর্যের চেয়ে কমপক্ষে ৩০ থেকে ২০০ গুণ বেশি হতে পারে। "কীভাবে এটি ঘটেছে তা নির্বিশেষে, যখন নক্ষত্রটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের কাছাকাছি এসেছিল, তখন এটি ব্ল্যাক হোলের তীব্র মহাকর্ষীয় শক্তির দ্বারা লম্বা এবং পাতলা হয়ে ছিঁড়ে গিয়েছিল। এই ঘটনাটিকে 'স্প্যাগেটিফিকেশন' (Spaghettification) বলা হয়," গবেষণা পত্রের সহ-লেখক এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী কে. ই. সাভিক ফোর্ড ব্যাখ্যা করেছেন।

এইভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া নক্ষত্র থেকে নির্গত গ্যাস ব্ল্যাক হোলের মধ্যে পড়ার সময় উত্তপ্ত হয়ে আলোর ঝলকানির মতো জ্বলে ওঠে। ফোর্ড আরও বলেন, এত বিশাল ভরের নক্ষত্রের জন্ম হওয়া খুবই বিরল। কারণ ছোট নক্ষত্রই বেশি জন্মায় এবং বেশি ভরের নক্ষত্রের আয়ু খুব কম হয়।

১১ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে

এই গবেষক দলটি ক্যালিফোর্নিয়া, অ্যারিজোনা এবং হাওয়াইয়ের টেলিস্কোপের মাধ্যমে এই আলোর ঝলকানি পর্যবেক্ষণ করেছে। আলোর ভ্রমণের সময়কালের কারণে, বিজ্ঞানীরা যখন ১১ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের এই ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করছেন, তখন তারা আসলে মহাবিশ্বের একেবারে শুরুর সময়টাকে দেখছেন। পর্যবেক্ষণের সময়, এই আলোর ঝলকানি ৪০ গুণ বেড়ে গিয়েছিল। এটি ২০১৮ সালের জুনে শীর্ষে পৌঁছেছিল। এটি আগে পর্যবেক্ষণ করা ব্ল্যাক হোলের আলোর ঝলকানির চেয়ে ৩০ গুণ বেশি উজ্জ্বল ছিল। এই ঘটনাটি এখনও চলছে, তবে এর উজ্জ্বলতা ধীরে ধীরে কমে আসছে। এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হতে প্রায় ১১ বছর সময় লাগতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।