সংক্ষিপ্ত

শতবর্ষ জন্মদিন উপলক্ষে রইল মান্না দে-র সঙ্গীত জীবনের কিছু বিশেষ মুহুর্ত, শ্রেষ্ঠতম পুরষ্কারের শীরোপা মাথায় নিয়ে দীর্ঘ ৯৪ বছর জীবন সীমায় প্রতিনিয়ত সঙ্গীত জগতকে তিনি করে তুলেছিলেন পুষ্ট।

কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, নেই চলচ্চিত্র জগতের সেই ষাঠের দশকের স্বর্ণযুগও। যখন সিলভার স্ক্রিন জুড়ে চলত সাদা কালোর মায়াবী খেলা। আর মনের অচীরে দানা বাঁধত কিংবদন্তী গীতিকার-সুরকারের সুর, তাল, লয়। তবে সে স্মৃতি আজও মনের মনিকোঠায় আগলে রেখেছে বহু মানুষ। বদল ঘটেছে সময়ের, অতিক্রান্ত হয়েছে অনেকটা পথ, সাংস্কৃতিক মহলে বিপর্যয় নেমেছে বহু বার। মানুষ একে একে হারিয়েছে তাদের প্রিয় শিল্পীদের। তবুও তারা অমর।

দিনটা ছিল ১লা মে, উত্তর কলকাতার এক সাধারণ ঘরে জন্ম নেয় প্রবোধ চন্দ্র দে। প্রিয়জনরা তাকে মান্না বলেই ডাকত। সেই সুত্রেই ভবিষ্যতে মান্না দে নামেই পরিচিতি ঘটে তাঁর। আজ তাঁর একশত বছর জন্মদিন উপলক্ষে রইল ওঁনার জীবন থেকে তোলা কিছু টুকরো কোলাজ।

সঙ্গীত জগতে হাতেখড়ি  

প্রথমজীবনে তার কাকা বিশিষ্ট সঙ্গীতাচার্য কৃষ্ণ চন্দ্র দে-র কাছেই তালিম নেন মান্না দে। পরবর্তীতে নিজের সুরেলা গলায় পরিচিতি তৈরি করেছিলেন পরিজন ও বন্ধু মহলে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকা সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ তাকে ক্রমেই এগিয়ে দেয় সঙ্গীত সাধনার পথে। পরবর্তীতে ওস্তাদ দাবীর খানের কাছে নিয়োমিত রেওয়াজ করতেন তিনি। এরপর ১৯৪২ সালে কাকার হাত ধরে পারি দেওয়া বলিউডে (বম্বে)। বেশ কয়েকদিন কৃষ্ণ চন্দ্র দে-কে সংগত দেওয়ার পর বিখ্যাত সুরকার শচীন দেব বর্মনের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পান তিনি। আর সেখান থেকেই শুরু হয় সঙ্গীত জগতের পাঠ নেওয়ার পালা। ১৯৪৩ সালে তামান্না ছবিতে তিনি প্রথম গান করেন, এবং ১৯৫০-সালে শচীন দেব বর্মনের সুরে মশাল ছবিতে গান গেয়ে সকলের নজর কারেন তিনি।

রবীন্দ্র সঙ্গীত ও মান্না দে

শিশুকাল থেকেই মান্না দে-র শাস্ত্রীয় সংঙ্গীতের প্রতি আকর্ষণ ছিল যথেষ্ঠ। তিনি অনায়াসে কবিতার ছন্দ ও গানের সুরের মেলবন্ধ ঘটাতে পারতেন। তাই তাঁর গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত পেয়েছিল এক ভিন্ন মাত্রা। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে মোটের ওপর প্রায় ৪৭টি রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়েছিলেন মান্না দে। যার শুরুটা ছিল ১৯৬১ সালে বহে নিরন্ত দিয়ে। ২০০২ সালে তিনি সর্বাধিক রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড করেছিলেন।

মান্না দে ও কিশোর কুমার যুগল বন্দী

কিশোর কুমার ও মান্না দে-কে একই গানে দর্শক তথা শ্রোতাকূল পেয়েছে মাত্র ছয়টি গানে। ১৯৬৮ সাল অবধি এই দুই কিংবদন্তী শিল্পী শচীন দেব বর্মনের সুরে গান করছিলেন তিনটি, তার মধ্যে অন্যতম ছিল বাপী লাহিড়ির কম্পোজিশনে শোলে সিনেমার বিখ্যাত গান ইয়ে দোস্তি, হাম নেহি তোরেঙ্গে। এছাড়াও বাবু সামঝো ইসারে, কিংবা রাহুল দেব বর্মনের সুরে এক চতুর নর আজও মানুষের মনে তরতাজা হয়ে আছে।

মান্না দে ও লতা মঙ্গেশকর

মান্না দে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন শলীল চৌধুরীর সুরে বিছুয়া গানটি যখন রেকর্ড করা হচ্ছিল, তখন আমাদের বলা হয় এমন আবেগ ধরে রাখতে যাতে এটাকে প্রকৃত পাহাড়ি গান হিসেবে তুলে ধরা যায়, তৎক্ষণাত লতা মঙ্গেশকর উই উই উই উই কথাটা যোগ করে আর আমি মুগ্ধ হয়ে চুপ করে থাকি। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে বেশ কয়েকটি গান এই দুই জুটি বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গান উপহার দিয়েছিলেন দর্শক মহলকে। যার মধ্যে বাংলায় অন্যতম ছিল ছদ্মবেশী সিনেমার গান কে প্রথম কাছে এসেছে।

বাংলা চলচ্চিত্র জগতে মান্না দে

১৯৯২ সালে তিনি নিজেকে হিন্দি চলচ্চিত্র জগত থেকে সরিয়ে নিলেও বাংলা সঙ্গীত জগতে তখনও তিনি একের পর এক গান গেয়ে গেছেন। সঙ্গে বিভিন্ন ভাষায় তিনি গজল, ভজন গেয়েও মন জয় করেছেন সকলের। যদিও ২০০৬ সালে পুনরায় তিনি একটি হিন্দি গান রেকর্ড করেন। এরই মাঝে মান্না দে নানান সঙ্গীতানুষ্ঠানে যোগ দেওয়া শুরু করেন এবং সারা দেশ জুড়ে শহরে শহরে পারি দিতেন তারই সুবাদে। উত্তমকুমার অভিনীত অ্যান্টনী ফিরিঙ্গি ছবিতে আমি যে জলসা ঘরে গানটি গেয়ে সর্বাধিক প্রসংশীত হয়েছিলেন তিনি।