সংক্ষিপ্ত
- নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিক্ষোভে একাদিক ক্ষয়ক্ষতি
- আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে রাজ্য সরকার কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে
- আরও বিশদে রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট
- আজ দুপুর ২ টোয় রিপোর্ট দিতে বলেছে কোর্ট
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও এনআরসি'র বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে প্রতিবাদ, বিক্ষোভের জেরে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে রাজ্য সরকার কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে, আরও বিশদে রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি থোট্টাথিল ভাস্করণ নায়ার রাধাকৃষ্ণন এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারকে শুক্রবার দুপুর ২ টোয় রিপোর্ট দিতে বলেছে৷
কেন্দ্রের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন, সে বিষয়েও সরকারের বক্তব্য রাজ্যের অ্য়াডভোকেট জেনারেল(এজি) কিশোর দত্তকে কোর্টে এদিনই জানাতে হবে৷ এ ছাড়া, বিক্ষোভকারীদের ভাঙচুর, আগুন লাগানোর জেরে রেলের সম্পত্তি ক্ষয়ক্ষতিতে রাজ্য সরকারের ক্ষতিপূরণের বিষয় নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, রেল নিজেই একটা ইন্সটিটিউশন ৷ নিজের সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য রেলের(আরপিএফ, আরপিএসএফ বাহিনী) ব্যবস্থা রয়েছে। রেল নিজের সম্পত্তি রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে আদালত সেক্ষেত্রে কী করতে পারে? আদালত শুধু রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত৷
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও এনআরসি'র বিরুদ্ধে গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অবরোধকারীদের বিক্ষোভ আছড়ে পড়ে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও আরও এক মন্ত্রীর (ফিরহাদ হাকিম) বিরোধিতার কারণে বিক্ষোভকারীরা রাজ্যে তাণ্ডব চালাচ্ছে অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়৷ বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মামলাগুলির শুনানির সময় অন্যতম মামলাকারী সুরজিৎ সাহার আইনজীবী স্মরজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, হাইকোর্টে মামলা হওয়ার পর রাজ্যে বেশ কিছু পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। প্রায় ৪ দিন ধরে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ কয়েকটি জেলায়।
বহু দূরপাল্লার ট্রেন বাতিল হয়েছে৷ ফলে বাস, বিমানের টিকিটের দাম বেড়েছে। সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু এজি কিশোর দত্ত কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সরকারের দেওয়া রিপোর্ট পেশ করে জানান, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে৷ এদিকে, এই একই ইস্যুতে আরও এক মামলাকারীর আইনজীবী নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য প্রশ্ন তোলেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে কেন্দ্রীয় একটি আইনের বিরোধিতা কি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিজ্ঞাপন দিয়ে করতে পারেন? এছাড়া রাজ্যের আরও এক মন্ত্রী (ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য) যেভাবে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও এনআরসি'র বিরোধিতা করে মন্তব্য করেছেন সেটাও কতটা আইনসঙ্গত?
গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভকারীরা রেলপথ, সড়কপথে ভাঙচুর চালায়, আগুন লাগায়। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে(কোর্ট চেয়েছিল রিপোর্ট) রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের কমিশনার নির্মাল্য ঘোষালের তরফে দেওয়া রিপোর্ট কোর্টে পেশ করেন এজি৷ রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, এ রাজ্য তথা দেশজুড়ে বর্তমানে যে বিক্ষোভ চলছে তা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই হচ্ছে৷ বিক্ষোভ প্রথমে অসম এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে শুরু হয় এবং পরে তা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এ রাজ্যে গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে প্রতিবাদ শুরু হয়। প্রতিবাদ, বিক্ষোভের জেরে কোনও প্রাণহানির ঘটনা এখনও ঘটেনি। এমনকী কারও গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনাও নথিবদ্ধ হয়নি। প্রতিবাদ, বিক্ষোভের জেরে কোথাও কোনও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাও তৈরি হয়নি৷ রাজ্য সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে। এই ঘটনার জেরে এখনও পর্যন্ত ৬৪ টি কেস নথিবদ্ধ হয়েছে এবং ৯৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া ওই ধরনের ঘটনাকে এড়াতে সরকার আরও নানা পদক্ষেপ নিয়েছে৷
সরকারের পেশ করা রিপোর্ট থেকে আরও জানা গেছে, সারা রাজ্যে মোট ৭১৫ টি রেল স্টেশন রয়েছে৷ কিন্তু বিক্ষোভকারীদের প্রতিবাদের ছোঁয়া লেগেছে মাত্র ৫-৬ টি খুব ছোট রেলস্টেশনে। রেলের সম্পত্তি এবং রেললাইন সুরক্ষায় রেলের আরপিএফ এবং আরপিএসএফ রয়েছে। আর রাজ্যে মোট ২৩ টি জেলা রয়েছে। তবে বিক্ষোভের জন্য সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে খুব কম জায়গা থেকেই। সরকারের দেওয়া রিপোর্ট আরও বিশদে শুক্রবার দিতে বলা হয়েছে কোর্টে।