সংক্ষিপ্ত
এসএসসি-র নিয়োগ দুর্নীতিতে তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই ও ইডি। এই ঘটনায় একাধিকবার ডেকে পাঠানো হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় এবং পরেশ অধিকারীকেও। কারণ, যে সময় এই নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছিল তখন শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়। শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রীর পদে রয়েছেন পরেশ অধিকারী।
২১ জুলাই শহিদ দিবসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ডাক দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়। এমনকি খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর ভাষণে বিজেপি-র বিরুদ্ধে দুর্নীতির ইঙ্গিত রেখেছিলেন। কিন্তু, শহিদ দিবসের এই ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টাও কাটলো না শুক্রবার সকালে ইডি কড়া নাড়ল তৃণমূল কংগ্রেসের দুই মন্ত্রীর বাড়িতে। আর সেই সঙ্গে রাজ্যের ১৩টি জায়গায় ইডি তল্লাশি অভিযানে নেমেছে। যে দুই মন্ত্রীর বাড়িতে ইডি শুক্রবার সকালেই হাজির হয়েছে তাঁর হলেন পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় এবং পরেশ অধিকারী। পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় এখন অন্য দপ্তরের মন্ত্রীত্ব সামলালেও একটা সময় শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব সামলিয়েছিলেন। আর এসসিসি-র দুর্নীতি মামলায় তাঁর নাম জড়িয়েছে। অন্যদিকে পরেশ অধিকারীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেআইনিভাবে নিজের মেয়েকে এসএসসি-র প্যানেলে নাম ঢুকিয়ে দিয়ে চাকরির দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
শুক্রবার সকালেই কলকাতার নাকতলায় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের বাড়িতে হাজির হন ইডি-র আধিকারিকরা। সেখানে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়কে জেরা করেন ইডি তদন্তকারী অফিসাররা। পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের বাড়িতে ইডি-র তল্লাশি-র খবর পেতেই সেখানে হাজির হয় কলকাতা পুলিশের একটি দল। তারা পুরো পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে। পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় রাজ্যের একজন মন্ত্রী এবং কলকাতা পুলিশের হাতে তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্ব রয়েছে। সেই কারণেই কলকাতা পুলিশের দলটি পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের বাড়িতে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যদিও, কলকাতা পুলিশের দলটি ইডি-র কাজে কোনও বাধা তৈরি করেনি। ইডি-র পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের বাড়িতে যাওয়ার আগে কোনও নোটিস পাঠিয়েছিল কি না তা নিয়ে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। অথবা ইডি-র কাছে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের বাড়িতে তল্লাশি এবং জেরার কোনও ওয়ারেন্ট রয়েছে কি না তা নিয়েও কিছু জানা যায়নি।
কোচবিহারের মেখলিগঞ্জেও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর বাড়িতে তল্লাশি অভিযান চালায় ইডি। পরেশ অধিকারীকেও জেরা করে ইডির দলটি। এসএসসি দুর্নীতি মামলায় উঠে এসেছে বেআইনিভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগও। অনৈতিকভাবে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অর্থ ঘুষ নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ আর এই বেআইনি আর্থিক লেনদেনর হিসাবটা কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলেই অনুমান করা হচ্ছে। এত অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়ে থাকলে তা কোথায় গেল, কারা এর ভাগ পেল- এই নিয়ে তদন্তে নেমেছে ইডি। আর এর জন্যই এসএসসি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের সমানে জেরা করা এবং তাঁদের ব্যাঙ্ক লেনদেনের হিসাবও খতিয়ে দেখছে ইডি।
ইডির আর একটি দল এদিন সকালে দক্ষিণ কলকাতার ই এম বাইপাস লাগোয়া সার্ভে পার্কে প্রাক্তন পর্ষদ সভাপতি শান্তিপ্রসাদ সিনহার বাড়িতেও তল্লাশি চালায় এবং তাঁকে জেরা করে। এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি যে সময় হয়েছিল তখন কমিটির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন শান্তিপ্রসাদ। একই সঙ্গে প্রাথমিক টেট দুর্নীতিতেও অপসারিত প্রাথমিক পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের যাদবপুরের বাড়িতেও তল্লাশি এবং জেরা শুরু করে ইডি। আধা সেনা নিয়ে প্রতিটি জায়গায় তল্লাশি এবং জেরা চালানো হচ্ছে। এসএসসি দুর্নীতিতে পর্ষদের আরও আধিকারিক রত্না চক্রবর্তীর বাড়িতেও তল্লাশি এবং জেরা করা হচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগণার বাগদাতেও তল্লাশি অভিযান চলছে। জানা গিয়েছে রাজ্য জুড়ে এই তল্লাশি অভিযানে ইডি-র ৮০ থেকে ৯০ জন অফিসার রয়েছেন। তল্লাশি অভিযানে নামার আগে ইডি বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে সিবিআই-এর কাছ থেকে। কীভাবে কোন অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে অর্থ গিয়েছে তার প্রামাণ্য তথ্যও সিবিআই-এর কাছ থেকে সংগ্রহ করে তারা। এরপরই এই তল্লাশি অভিযানে নেমেছে তারা। এর আগে পার্থ চট্টোপাধ্য়ায় সিবিআই-কে জেরায় বলেছিলেন যে নিয়োগ কমিটির কথা বলা হচ্ছে তা সরকারি কোনও সিলমোহর ছিল না, কারণ তিনি জানতেনই না এমন কোনও কমিটি তৈরি হয়েছিল।
আরও পড়ুন-
'পাঁচশ-হাজার টাকা দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করছে সরকার', এসএসসি টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভ
এসএসসি পরিক্ষার নোটিফিকেশন প্রকাশের দাবিতে বিক্ষোভ বারাসতে
'চোর ধরো জেল ভরো', এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতিতে বাম মহিলা সংগঠনের মশাল মিছিল