সংক্ষিপ্ত
- দলের প্রাক্তন সাংসদের মৃত্যুতে কেন্দ্রকে দায়ী করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
- কেন্দ্রের প্রতিহিংসামূলক আচরণেই মৃত্যু তাপস পালের, অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর
- রবীন্দ্র সদনে গিয়ে প্রাক্তন সাংসদকে শেষ শ্রদ্ধা জানান তিনি
তাপস পালের মৃত্যুর জন্য সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করলেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিহিংসামূলক আচরণের কারণেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে গিয়ে অকালে চলে যেতে হলো অভিনেতা এবং প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদকে। তবে শুধু তাপস পাল নন, তণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদ এবং আর এক সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীর মৃত্য়ুর জন্যও কেন্দ্রকেই দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন রবীন্দ্র সদনে গিয়ে দলের প্রয়াত প্রাক্তন সাংসদকে শেষ শ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী। এর পরেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'এই কথাগুলো আগেও বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু অনেকেই ভেবেছে আমি রাজনৈতিক কারণে হয়তো সেসব বলছি। তাপস পালের মৃত্যু সেটা আবার প্রমাণ করল। একটা এজেন্সি-র দ্বারা অত্যাচারিত হয়ে মানসিকভাবে নিজে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। হয়তো মৃত্যর আগে জানতেও পারল না তাঁর অপরাধটা কী ছিল! তাপস পালের মতো বাংলা ছবির সুপারস্টার. তাঁকে এক বছর এক মাস জেলে রেখে দেওয়া হলো। আইন আইনের পথে চলবে। কিন্তু তাপস কি দোষ করেছিল? ও একটা বিনোদন চ্যানলে বেতন নিয়ে ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করত।' মমতার অভিযোগ, চিটফান্ড মামলায় দীর্ঘ সময় জেলে থেকে এবং কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হেনস্থার কারণেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তাপস পাল। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আইন আইনের পথে চলবে। তাপসের ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় অকালে চলে যাওয়া চলচ্চিত্র জগতের অপূরণীয় ক্ষতি। শিল্পীরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রোডাকসন হাউস, কোম্পানি, চ্যানেলে কাজ করেন, ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হন। তা করতে গিয়ে যদি এ ভাবে ক্ষতবিক্ষত হতে হয়, অকালে চলে যেতে হয়, সেটা কি ঠিক?কেন্দ্রীয় সরকারের জঘন্য রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ, তা থেকে কেউ কিন্তু বাদ যাচ্ছে না।'
আরও পড়ুন- 'বাংলা সিনেমায় তোমার অবদান কেউই ভুলতে পারবে না', টুইটে শোকপ্রকাশ দেবের
আরও পড়ুন- 'দাদার কীর্তি'-র কেদারের মতোই স্বভাব ছিল বিধানের, মন খারাপ ধারাপাড়ার
এই প্রসঙ্গেই আরও দুই মৃত্যুর প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, তাপস পালের মতোই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার চাপের মুখে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন দলের আর এক সাংসদ সুলতান আহমেদ। হাওড়ার সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রীর মৃত্যুর পিছনেও একই কারণ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত চিটফান্ড মামলায় সুলতান আহমেদ এবং প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, দুই তৃণমূল সাংসদই সিবিআই এবং ইডি-র নজরে ছিলেন।
আরও পড়ুন- 'বড় অভিমান নিয়েই চলে গেলেন তাপসদা', মন খুললেন ঋতুপর্ণা
হতাশা ব্যক্ত করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'এই তিনটে মৃত্যু চোখের সামনে আমি দেখলাম। গত বছরের আগের বছর সুলতান আহমেদ মারা গেলেন। আমি সুলতানের মৃত্যুর পরে ওঁর বাড়িতেও গিয়েছিলাম। বাড়ির লোকেরা বললেন, একটা চিঠি, একটা ফোন পেল আর বাথরুমে গিয়ে মারা গেল। কেউ যদি আইন ভাঙে আইন আইনের পথে চলবে। তার মানে তো এই নয় যে লাঞ্ছনা, গঞ্জনা সহ্য করতে হবে।' এর পরেই কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আমি তাপসের মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। সুলতানের দেহও দেখিনি। মানুষ জন্মালে তাঁর মৃত্যু হবেই। কিন্তু তাপসের চলে যাওয়াটা তো সময়ে নয়। ওঁর 'দাদার কীর্তি' অমর কীর্তি হয়ে থাকবে।' মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এ দিন রোজভ্যালি জেলবন্দি প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতার কথাও শোনা গিয়েছে। মমতার দাবি, দীর্ঘদিন ধরে জেল বন্দি করে রাখাটা আসলে চাপ বাড়ানোর কৌশল। চিটফান্ড কাণ্ডে কেন দ্রুত চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে না. সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।
এ দিন রবীন্দ্র সদনে গিয়ে প্রয়াত অভিনেতা ও প্রাক্তন সাংসদের স্ত্রী নন্দিনী এবং মেয়ে সোহিনীর সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমবেদনা জানান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে উপস্থিত টালিগঞ্জের কলাকুশলীদের সঙ্গেও কথা বলেন মমতা। প্রাক্তন সাংসদের মৃত্যুতে দৃশ্যই হতাশ লাগছিল তাঁকে। মমতা বলেন, 'আমি সত্যিই আজ মর্মাহত, শোকাহত এবং দৃঃখিত।'