সংক্ষিপ্ত

২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে আসেন বিজেপি বিধায়ক মুকুল রায়। অন্যদিকে, যে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি বুকে আকড়ে তৃণমূল ছেড়েছিলেন তিনিও ফিরে এসে এখন ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। 
 

দুজনেই একটা সময় তৃণমূল কংগ্রেসের হেভিওয়েট নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। একজন তৃণমূল কংগ্রেসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন। আর অন্যজন তৃণমূল কংগ্রেসে তরুণ তুর্কি শিক্ষিত মার্জিত নেতাদের মুখ ছিলেন। কিন্তু, একজন দল ছেড়েছিলেন সারদা চিটফান্ড কেসে তৈরি হওয়া বিতর্ক এবং সিবিআই জেরার জেরে শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্কের শিথিলতা আসায়। আর একজন দল ছেড়েছিলেন একাধিক দলের এক গোষ্ঠীর নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়ে। আর সেটা ছিল ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে। কিন্তু, ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পরই দুজনেরই প্রত্যাবর্তন ঘটেছে তৃণমূল কংগ্রেসে। এদের এক জন মুকুল রায়। অন্যজন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। 

দলে ফেরার পর সেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দেখা যায়নি মুকুল রায় এবং রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যেদিন মুকুল রায় তৃণমূল কংগ্রেসে পুনরায় ফিরে এসেছিলেন সেদিন তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনে উপস্থিত ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একনিষ্ঠ ভক্ত বলে পরিচয় দেওয়া রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি তৃণমূল ছাড়ার দিনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশাল ছবি বুকে ধরেছিলেন তাঁর সঙ্গে তৃণমূলনেত্রীর সাক্ষাৎ হয়নি ২০২১-এর নির্বাচনের পর। রাজীব সম্পর্কে তাঁর কাছে সব খবরই পৌঁছেছে কিন্তু একটা সময়ের ঘনিষ্ঠ ভরসাযোগ্য রাজীব-মমতা সাক্ষাৎটা ছিল অধরা। মাঝে রাজীব একটি অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যাওয়ার সুযোগ পেলেও সামনে যেতে পারেননি। এবার দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কালীঘাটের বাড়িতেই দুই হেভিওয়েট নেতার সঙ্গে শুভ বিজয়া সেরেছেন বলে সূত্রের খবর। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভ বিজয়া ঘটেছিল একাদশীতে বলে সূত্রে খবর। আর মুকুল রায়ের সঙ্গে মমতার শুভ বিজয়ার কুশল বিনিময় হয়েছিল দ্বাদশীতে। রাজনৈতিক মহলের মতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে মুকুল ও রাজীবের সঙ্গে সাক্ষাৎ যথেষ্টই তাৎপর্য বহন করছে।  

২০১১ সালে রাজ্যে পালা বদলের পর তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠন ৫০০ গুণ বাড়ার পিছনে এবং একের পর এক পুরসভাকে তৃণমূল কংগ্রেসের পকেটে আনার ক্ষেত্রে মুকুল রায়ের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। সাংগঠনিক কাজে দক্ষ মুকুল রায় সেই সময় চাণক্যের তকমাও পেয়েছিলেন। বলতে গেলে তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠনের কোথায় কি হবে, কে কোন পদে থাকবে তার পুরোটাই নিয়ন্ত্রিত হত মুকুল রায়ের হাত ধরে। সুতরাং, দলে ফিরে আসার পর মুকুল রায়-কে ব্যবহার না করাটা অনেকেই মানতে পারছেন না। এর সঙ্গে অবশ্যই রয়েছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। একটা সময় তাঁর হাতে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলার সংগঠনের দেখভালের দায়িত্ব ছিল। অন্ধের মত রাজীবের উপরে ভরসা করতেন মমতা-ও। কিন্তু, ভুল স্বীকার করে দলে ফিরে এলেও রাজীব এখন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে সেভাবে সক্রিয় নন। তাঁকে ব্যবহার করা হচ্ছে ত্রিপুরার রাজনীতিতে তৃণমূলের জায়গা তৈরির ক্ষেত্রে। 

সূত্রের খবর, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শেই মুকুল ও রাজীব-কে রিঅ্যাক্টিভ করার জন্য মোটামুটি একটা পরিকল্পনা করে ফেলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তারপরই রয়েছে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি। তাই আগেভাগেই অভিজ্ঞ ও বহু যুদ্ধে পোড়খাওয়া  দুই নেতাকে এবার পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে চাইছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শোনা যাচ্ছে মুকুল রায়কে নদীয়া-র একটা অংশ এবং উত্তর ২৪ পরগণার একটা বড় অংশের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। কেমন পারফর্ম করবেন মুকুল রায় তার মার্কশিট তৈরিটা শুরু হবে পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকেই। অন্যদিকে, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে দক্ষিণবঙ্গের একটি জেলা এবং উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় ফের পাঠানো হতে পারে। তাঁরও মার্কিশিট তৈরি হবে পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে। যার পুরো হালহকিকত এবং নিয়ন্ত্রণ থাকবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। আর সেই মার্কশিটের চূড়ান্ত ফল পৌঁছে দেওয়া হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। এর ভিত্তিতেই তিনি ভোটযুদ্ধের ঘুটি সাজাবেন বলেই সূত্রের খবর। 

গরু পচারকাণ্ডের জেরে অনুব্রত-র গ্রেফতারির পর বীরভূমে এই মুহূর্তে তৃণমূল কংগ্রেসের হাল ধরার কেউ নেই। বারবার সামনে আসছে জেলার নেতাদের পারস্পরিক বিরোধে ভরা বয়ান। এই অবস্থায় সেখানে একজনকে লাগবে যিনি ওই জেলাকে হাতের তালুর মতো চেনেন এবং নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। অন্যদিকে, মানিক ভট্টাচার্যের গ্রেফতারি নদিয়ার একটা অংশেও তৃণমূল কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতাকে অনেকটাই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এর সঙ্গে রয়েছে বনগাঁ এবং নদীর একটা অঞ্চলে মতুয়া ভোটব্যাঙ্কে বিজেপি-র প্রভাব। পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই সব এলাকায় এখন থেকে ঘুটি সাজাতে তৎপর তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লক্ষ্য লোকসভা নির্বাচনের আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিরঙ্কুশ আধিপত্য বজায় রাখা। বিরোধীরা যাতে কোনওভাবেই দাঁতা ফোঁটানোর মতো জায়গায় না থাকেন তার জন্য দলের ভরসাযোগ্য, সংগঠনে সক্ষম নেতাদের এখনই ময়দানে নামাচতে তৎপর মমতা। আর সেই কারণেই কি কালীঘাটে বিজয়া সম্মিলনীর অন্যতম কুশীলব হলেন মুকুল ও রাজীব! সময়-ই তার উত্তর দেবে।  
আরও পড়ুন-  
'বিরোধিতা করতে হলে গান গেয়ে করব!' অভিনব উপায় রাজনৈতিক তরজা 'কালারফুল' মদনের
  
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের 'মানিক-যোগ', অনুমান প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতির শিকড়ের সন্ধান দিতে পারেন তৃণমূল বিধায়ক 
Mominpur Violence : মোমিনপুরের ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন দিলীপ ঘোষ