সংক্ষিপ্ত
চোরাই মার্কেটে দিন দিন চাহিদা বাড়ছে ম্যানহোলের ঢাকনার। কোথায় লুকিয়ে রহস্য
১২ নভেম্বর রাতে দমদমে খোলা ম্যানহোলে (Manhole) পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় এক অটোচালকের (Auto Driver Dies)। এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত দু-দিন ধরেই রাজ্য-রাজনীতিতে চলছে ব্যাপক চাপানউতর। এমনকী একাধিক সরকারি দপ্তরের মধ্যে চলছে দায় ঠেলাঠেলি। ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা থাকায় মর্মান্তিক পরিণতির জন্য প্রাথমিক ভাবে দমদম পুরসভার(Dumdum Municipality) দিকে আঙুল উঠলেও তারা আবার ঘুরিয়ে দায় ঠেলেছে পূর্ত দপ্তরের দিকে। কলকাতার ম্যানহোলের দুরাবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, তা নিয়ে চলতি বছরের মার্চ মাসেই ফিন্যান্সিয়্যাল এক্সপ্রেসে (Financial Express)-এ একটি বিশেষ প্রতিবেদনে ভয়াবহ চিত্রের কথা তুলে ধরেছিলেন বিবেক দেবরায়। এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে নাতাশা রিয়াজার ২০১৪ সালের একটি তথ্যচিত্রের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই বেশ কিছু বছর আগে কলকাতায় কাজ করার সময় ম্যানহোল সংক্রান্ত এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেছিলেন বিবেক দেবরায়। তাঁর প্রতিবেদন অনুযায়ী- সেদিন তিলোত্তমার বুকে দাপুটে ব্যাট চালাচ্ছিল বৃষ্টি। রাস্তা ডুবে গিয়েছিল হাঁটুজলে। সেই সময়ই তাঁরই অফিসের এক সহকর্মীর সঙ্গে কলেজ স্ট্রিট দিয়ে হেঁটে ফিরছিলেন বিবেক। বৃষ্টির জলে ঝাপসা ছিল চারপাশ। দুজনে হাঁটছিলেন আগুপিছু। তখনই আচমকা দেখেন তার থেকে কয়েক গজ আগে থাকা বন্ধুটি আচমকাই অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন - আলগা হয়েছে করোনার ফাঁস, বুথ পিছু বাড়ছে ভোটার সংখ্যা
প্রথমে খানিক থমকে গেলেও পড়ে দেখা যায়, তাদের থেকে হাত কয়েক সামনেই রয়েছে একটা ম্যানহোল। যার ঢাকনটি চুরি গিয়েছে। আর তারমধ্যেই পড়ে গিয়েছেন তার বন্ধু। দেখা মাত্রই আঁতকে উঠেন বিবেক। চেঁচিয়ে জড়ো করেন আশপাশের লোকজন। তারাই তড়িঘড়ি উদ্ধার করেন তার বন্ধুকে। সেযাত্রায় বেঁচে যান তিনি। যদিও সেই দুর্বিষহ স্মৃতি আজও তাড়া করে বেড়ায় দুই বন্ধুকে। দমদমের ঘটনা যেন সেই স্মৃতিকেই নতুন করে উস্কে দিল।
আরও পড়ুন - নজরে গোয়া, মহুয়ার ব্যাটে ভর করেই গোয়ায় ঝড়ো ইনিংসের পথে মমতা
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১২ তারিখ রাতে দমদম-সিঁথি অটোরুটের অটো চালক রঞ্জন সাগা শুক্রবার রাতে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। সেইসময় ফুটপাতের উপর খোলা ম্যানহোলে পড়ে যান তিনি। কিছু সময় পড়ে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। ভোররাতে মৃত্যু হয় তাঁর। এদিকে গোটা ঘটনায় দমদম পৌরসভার দিকে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ উঠলেও, পুরসভার দাবি বারেবারে ঢাকনা লাগিয়েও কোনও কাজ হয় না। প্রতি ৬ মাস অন্তর চুরি হয়ে যায় ম্যানহোলের ঢাকনা।
আরও পড়ুন - খোলা ম্যানহোলে পড়ে প্রাণ গেল অটোচালকের, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ ফিরহাদের
এদিকে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মূলত বিভিন্ন খাতেই তৈরি করা হয়ে থাকে ম্যানহোলের ঢাকনা। পৌর কর্তৃপক্ষ, বাণিজ্যিক বা শিল্প খাত, বা ইউটিলিটি পিট হিসাবেও তৈরি হয় ঢাকনা। তৈরির ক্ষেত্রে অনেক সময়েই ঢালাই লোহা, ইস্পাত, অন্যান্য ধাতু, কংক্রিট, বা ইস্পাত-ফাইবার রিইনফোর্সড কংক্রিটও ব্যবহার করা হয়। তাই সহজভাবেই বোঝা যাচ্ছে ম্যানহোলের ঢাকনা গুলির দাম নেহাত কম নয়। চোরা বাজারে এর ভালোই দর রয়েছে। আর তাতেই সহজেই ম্যানহোলের ঢাকনার উপরে নাকি নজর পড়ে চোরেদের।