সংক্ষিপ্ত

দেশজুড়ে ৫০টি-রও বেশি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছিল জাতীয় সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ সংস্থা এআইএ। ১০০-রও বেশি নেতা-কে গ্রেফতারও করা হয়। এরপর থেকেই জল্পনা চলছিল যে পপুলার ফ্রন্টকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার বিষয়টি কবে সর্বসমক্ষে নিয়ে আসবে সরকার। অবশেষে সেই ঘোষনা করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। 
 

সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে কেন্দ্র যে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে তা বারবারই সুস্পষ্ট করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে ভারত বারবারই তাঁর কড়া অবস্থানের কথা বিশ্বের সামনে নিয়ে এসেছে। এই জিরো টলারেন্সের আওতায় ভারত উরি এবং পুলওয়ামার পর পাক দখলদারিতে থাকা কাশ্মীরে সার্জিকাল স্ট্রাইক করে সন্ত্রাসবাদীদের ক্যাম্পগুলোকে গুড়িয়ে দিয়ে এসেছে। ফলে সম্প্রতি পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে ওঠা সন্ত্রাসবাদে মদতের অভিযোগে সকলেই নড়ে চড়ে বসেছিলেন। 

পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া বা সংক্ষেপে যা পিএফআই নামে পরিচিত তাকে ব্যান করার দাবিও জানাচ্ছিল একাধিক রাজ্য। সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগ দেশজুড়ে পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার দপ্তর এবং নেতাদের বাড়িতেও তল্লাশি চালায় এনআইএ এবং ইডি। এক যোগে এই তল্লাশিতে বহু চাঞ্চল্যকর নথি এবং তথ্য হাতে এসেছে বলেও দাবি করে কেন্দ্রীয় দুই তদন্তকারী সংস্থা। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই একটা খবর চাউড় হয় যে পিএফআই-এর বিরুদ্ধে ব্যান-এর সিলমোহর দিতে চলেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। বুধবার ভোরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের যে বিবৃতি মিলেছে তাতে পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ারে আপাতত ৫ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়া এবং সন্ত্রাসবাদে অর্থ জোগানোর জন্য এই নিষেধাজ্ঞা বলেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে।  

এই নিষেধাজ্ঞার জেরে পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার শাখা সংগঠন- রিহ্যাব ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন (আরআইএফ), ক্যাম্পাস ফ্রন্ট অফ ইন্ডায় (সিএফআই), অল ইন্ডিয়া ইমাম কাউন্সিল (এআইআইসি), ন্যাশনাল কনফেডারেশন অফ হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন (এনসিএইচআরও), ন্যাশনাল ওম্যানস ফ্রন্ট, জুনিয়র ফ্রন্ট, এমপাওয়ার ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন এবং রিহ্যাব ফাউন্ডেশন, কেরালা-দেরও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। 

২২ সেপ্টেম্বর এবং ২৭ সেপ্টেম্বর কেরল, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু-সহ একাধিক রাজ্যে পপুলার ফন্ট অফ ইন্ডিয়ার বিভিন্ন দফতরে এবং নেতাদের বাড়িতে তল্লাশি চালায় এনআইএ এবং ইডি। এই ইসলামিক সংগঠনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনে অর্থ জোগানোর অভিযোগ রয়েছে। প্রথম দফার তল্লাশিতে ১০৬ জন পিএফআই নেতাকে গ্রেফতার করে এনআইএ। ২৭ সেপ্টেম্বর যে দ্বিতীয়বার তল্লাশি হয় তাতে ২৪৭ জন পিএফআই কর্মীকে হয় গ্রেফতার না হয় আটক করা হয়েছিল।  
কেন্দ্রীয় সরকারের এই কড়া পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি। তাদের দলীয় নেতা কপিল মিশ্র টুইট করে বলেছেন, পিএফআই-এর উপরে নিষেধাজ্ঞা আসলে ইসলামিক সন্ত্রাবাদের বিরুদ্ধে এক তাৎপর্যপূর্ণমূলক পদক্ষেপ। 

বিজেপি-র জাতীয় মুখাপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা জানিয়েছেন, 'অত্যন্ত কঠোর এবং সময়পোযোগী সিদ্ধান্ত। ৫ বছরের জন্য পিএফআই-এর উপরে যে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তা আসলে একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। অতিতে আমরা দেখেছি যে কীভাবে কংগ্রেস থেকে শুরু করে সপা, আরজেডি, বাম-সহ আরও অনেক রাজনৈতিক দলই ভোটব্যাঙ্কের নামে কীভাবে সন্ত্রাসবাদ কার্যকলাপে মদত দিয়েছে।'
 



পিএফআই-এর বিরুদ্ধে মেগা ক্র্যাকডাউন- 
২২ সেপ্টেম্বর এনআইএ এবং ইডি ১৫টি রাজ্যের ৯৩টি লোকেশনে পিএফআই-র সমস্ত ঠিকানায় অভিযান চালায়। এই ১৫টি রাজ্য হল- কেরল, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, দিল্লি, অসম, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গোয়া, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং মণিপুর। এই প্রথম দফার তল্লাশিতে অন্তত ১০৬ জন পিএফআই কর্মী ও নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।  
এর অপারেশন অক্টোপাস নাম দিয়ে আরও এক অভিযান হয় পিএফআই-এর বিরুদ্ধে। এনআইএ-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় সংস্থা এই অভিযানে অংশ নিয়েছিল। এই যাত্রায় দিল্লি, কর্ণাটক, অসম, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট এবং তেলেঙ্গানায় তল্লাশি হয়। এই তল্লাশি অভিযানগুলির পর এনআইএ দাবি করে পিএফআই-এর সঙ্গে সন্ত্রাসবাদীদের ঘনিষ্ট যোগ রয়েছে তার প্রমাণ তারা পেয়েছেন। 


আরও পড়ুন- 
রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সভায় চিনের মুখোশ খুললেন জয়শঙ্কর, কড়া বার্তা পাকিস্তানকেও 
NIA-র তল্লাশি অভিযান কলকাতার পার্ক সার্কাসে, দেশবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ শেখ মোক্তারের বিরুদ্ধে 
9/11 Anniversary : ভাই জোসেফ-কে আজও খোঁজেন চেরিয়ান, ৯/১১- মানে তাঁর কাছে প্রিয়জনকে হারানোর দিন