সংক্ষিপ্ত

রথযাত্রা উপলক্ষে কলকাতায় এবার অতিরিক্ত নজরদারি রাখা হচ্ছে। বিশেষ করে ইসকনের রথযাত্রা-কে নিয়ে আলাদা করে প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। অন্যদিকে ইসকন কর্তৃপক্ষও প্রশাসনকে সাহায্য করতে প্রস্তুত। 
 

২ বছরের অতিমারির পর ফের স্বাভাবিক ছন্দেই ফিরছে রথযাত্রার উন্মাদনা। এখনও পর্যন্ত রথযাত্রাকে ঘিরে নতুন করে কোনও কড়াকড়ি কোভিড বিধি লাগু করা হয়নি। ইতিমধ্যেই রথযাত্রাকে ঘিরে অন্তত কয়েক লক্ষ মানুষ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করছেন। কলকাতায় ইসকনের রথেও এবার কয়েক লক্ষ ভক্তের সমাগম হওয়ার সম্ভাবনা। যার ফলে নিরাপত্তায় কোনও গাফিলতি রাখতে চাইছে না পুলিশ প্রশাসন। সম্প্রতি পানিহাটিতে দণ্ড মহোৎসবে যেভাবে ভিড়ের চাপে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে ৩ জনের মৃত্যু হয় এবং অসংখ্য আহত ও অসুস্থ হন, রথযাত্রাকে ঘিরে তেমন কোনও পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কাকে আগে থেকেই নির্মূল করতে চাইছে পুলিশ। আর সেই কারণেই জায়গায় জায়গায় নজরদারি রাখা এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত পুলিশ রাখা হচ্ছে। এই নজরদারি উল্টোরথের দিন পর্যন্ত চলবে।

ইসকনের রথযাত্রায় কলকাতায় শুরু হবে গুরুসদয় দত্ত রোডে সংস্থার দফতর থেকে। সেখান থেকে ময়দানে যাবে রথ। ৭ দিন পরে অর্থাৎ ৯ জুলাই গুরুসদয় দত্ত রোডে ইসকনের দফতরে ফিরে আসবে। এই কয় দিনে মোট ২০ থেকে ২১ লক্ষ ইসকন ভক্তের সমাগম হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই জগন্নাথদেবের প্রসাদ ভোগের জন্য ইসকন হাউসে বিশাল বিশাল উনুন তৈরি করা হয়েছে। এই খানে যে প্রসাদ তৈরি হবে জগন্নাথদেব, বলরাম ও সুভদ্রার জন্য তাই ভক্তদের মধ্যে বিলি করা হবে।  

কলকাতা ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমন দাস জানিয়েছেন, 'যুক্তরাজ্য, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া ও সিঙ্গাপুর থেকে ভক্তরা ইতিমধ্যেই কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছেন। এমনকী আফ্রিকার বেশকিছু দেশ থেকেও অসংখ্য ভক্ত এসেছে।'মায়াপুর যা ইসকনের গ্লোবাল হেডকোয়ার্টার্স সেখানেও রথযাত্রার দিনে অন্তত দেড় লক্ষ মানুষের ভিড় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। শ্রীরামপুরের মাহেশেও এবার লাখ খানেকের বেশি ভক্তের সমাগমের সম্ভাবনা রয়েছে।     

ইসকন মায়াপুরের মুখপাত্র সুব্রত বিশ্বাস জানিয়েছেন, '২ বছর পর ফের স্বাভাবিক ছন্দে রথযাত্রা পালিত হচ্ছে। এর জন্য ভক্তরা খুবই আবেগতাড়িত এবং উত্তেজিত। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা তাই এখন ছুটে আসছেন বাংলাকে লক্ষ্য করে।'  

মায়াপুরের ইসকন এবারেরর রথযাত্রায় বলরামের রথ তালধ্বজ-এর উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। যার জন্য এই খানকার রথে বলরাম-এর রথে এবার মায়াপুর ইসকন চমক দেবে। মায়াপুর ইসকনের শ্রীলা প্রভুপদা সমৃদ্ধি -তে এবার গুন্ডিচা মন্দির বানানো হয়েছে। রথযাত্রার পর ৭ দিন এইখানে থাকবে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা। এইখানেই ভক্তরা দর্শনের সুযোগ পাবে। জানা গিয়েছে ৯৫টি দেশ থেকে ভক্তরা এবার এসেছে। এই সব দেশের মধ্যে রয়েছে আমেরিকা, ইটালি, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আর্জেন্টিনা, চিলি, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি এবং চিন। এরা সকলেই রথের দড়ি টানাতে অংশ নেবে বলেই নাকি প্রস্তুত। গুন্ডিচা মন্দিরে থাকার সময় জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রাকে মোট ছাপ্পান্ন ভোগের প্রসাদ দেওয়া হবে। এরমধ্যে রয়েছে বাঙালি রসনা। যেমন- পোস্ত, শাক, ভাজা, পোলাও, লুচি। থাকছে কন্টিন্টাল ডিশ-ও। যেমন পাস্তা, পিৎজা, ম্যাকারোনি, কেক, বার্গার। 

মাহেশের রথ এবার ৬২৬ তম বর্ষে পদার্পণ করছে। গত দুই বছরে সেভাবে এই রথ যাত্রায় মানুষ মেতে উঠতে পারেনি। মাহেশ রথ উদযাপন কমিটি জানিয়েছে, দুই বছর পরে স্বাভাবিক গতিতে রথ যাত্রা উৎসব হওয়ায় এইবারটা বেশ স্পেশাল। প্রচুর ভক্ত সমাগমের আশা করা হচ্ছে। যেমন ইতিমধ্যেই বিহার, অসম থেকে অসংখ্য ভক্ত মাহেশে এসে পৌঁছেছে বলেও জানা গিয়েছে।  
আরও পড়ুন- নব নীলাচল নামে খ্যাত মাহেশ, বাংলার প্রাচীনতম এই রথযাত্রা নিয়ে রইল নানান রোমাঞ্চকর কাহিনি 
আরও পড়ুন- রথযাত্রার পুণ্য তিথিতে সকলের সকলকে পাঠান শুভেচ্ছা বার্তা, দেখে নিন কী লিখবেন 
আরও পড়ুন- সোনার ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করার পরই চাকা গড়ায় রথের, জেনে নিন রথযাত্রায় রাজার ভূমিকা