সংক্ষিপ্ত
- পুরনো মহল্লাগুলি থেকে ভেসে আসবে আজানের সুর আর বাতাসে ভুরভুর করে ভাসবে হালিমের গন্ধ।
- চিকেন, মটন, বিফ হালিম-কলকাত্তাইয়া বাঙালির রমজান মাসের প্রিয় ডেস্টিনেশন।
রমজান মাস এসেছে। বিকেল নামলেই নাখোদা, টিপু সুলতান পুরনো মসজিদ মহল্লাগুলি থেকে ভেসে আসবে আজানের সুর আর বাতাসে ভুরভুর করে ভাসবে হালিমের গন্ধ। চিকেন, মটন, বিফ হালিম-কলকাত্তাইয়া বাঙালির রমজান মাসের প্রিয় ডেস্টিনেশন।
হালিমের উৎপত্তি
খ্রিস্টিয় দশম শতকে ‘কিতাব আল-তাবিক’ নামে একটি বইতে প্রথম হালিম প্রস্তুতির উল্লেখ পাওয়া যায়। ভারতবর্ষে মূলত আরব সৈনিকদের হাত ধরেই হালিমের প্রবেশ। অনেকেই মনে করেন হালিম শব্দটি এসেছে হারিসা শব্দটি থেকে। কাশ্মীরে হরিসা নামক পদটি আজও খুব বিখ্যাত। মরোক্কয় এক ধরনের চাটনিকে হরিসা বলা হয়। ভারতে হালিম আসে নিজামের সময়। পরবর্তী কালে উসমান আলি খান, মেহেবুব আলি খান হালিমকে ভারতে জনপ্রিয়তা প্রদানের ব্যাপারে অনন্য ভূমিকা নিয়েছেন। বলাই বাহুল্য দুই তিন প্রজন্ম যেতে না যেতেই ভারতীয় হালিম স্বাদ ও গন্ধে স্বকীয় হয়ে উঠেছে। তার প্রমান মিলল ২০১০ সালে যখন হায়দরাবাদী হালিমকে জিআই ট্যাগ দেওয়া হল।
হালিম রান্নার কৃতকৌশল
উপাদান
মাংস
গমের আঁটা
ঘি ( দুধ থেকে তৈরি বাতার)
দুধ
মুসুর
রসুন ও আদা বাটা (পেস্ট)
হলুদ
জিরা
সজ ( জিরা)
এলাচ
দারুচিনি
লবঙ্গ
কালো মরিচ
জাফরান
তালের গুড়
সাধারণ আঠা
কাবাব চিনি
শুঁকনো ফল ( পেস্তা , কাজুবাদাম , ডুমুর )
বাদাম (কাঠবাদাম)
এসব উপাদানের মাধ্যমে হালিম তৈরির পরে পরিবেশের সময় এতে আরও যোগ করা হয় -
রসা (উন্নত মানের ঘি )
লেবুর টুকরা
ধনে
ভাঁজা ডিম
ভাঁজা পেঁয়াজের আবরণ (হালকা প্রলেপ)
রান্নার নিয়ম
হালিম তৈরি হতে লাগে প্রায় ১২ ঘণ্টা। আগের দিন রাতে চুলায় বসালে হালিম রান্না হতে পরের দিন সকাল গড়িয়ে দুপুর। রকমারি ডাল, গম সিদ্ধ করা হয় প্রথমে। তাতে একে একে পরে নানা মশলা, ফল। পুরনো আরবের হালিম মিষ্টি স্বাদের হত। তাকে বলা হত মিঠি হালিম। কলকাতা শহরে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ছাগ বা গো মাংসের হালিম। ডালের মধ্যে নানা সবজির সঙ্গে টুকরো ফেলে দেওয়া হয়। কুসুমগরম মাংস যেন বেহেস্তের নজরানা।
কলকাতায় হালিমের রুটম্যাপ
পার্কস্ট্রিট, জাকারিয়া স্ট্রিট, ধর্মতলা তো রয়েছেই, গত কয়েক বছরে হালিম জায়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে কলকাতার আনাচে কানাচে। হাতিবাগান, গোলপার্ক, তারাতলা, অজয়নগরেও এখন হালিম পাওয়া যাচ্ছে। বিফ হালিম যদিও খুব কম জায়গায় মেলে। মটন হালিম-চিকেন হালিমের জয়জয়কার শহরের সর্বত্র। শুধু শহর কলকাতাই বা কেন, আসানসোল, দুর্গাপুরেও দেখা মিলতে পারে রূপসাগরেরে এই অরূপরতনের।
বছরের এই একমাস, দোকানগুলিতে কেবল কয়েক ঘণ্টার জন্যেই পাওয়া যায় এই খানা। হালিমের খোঁজে ভীড় জমায় হরেক প্রজন্মের মানুষ। বিভেদের বীজ যেই পুতুক,চারাগাছটি যে এক মুহুর্তে বাঙালি উপড়ে দিতে পারে, তা বোঝা যায় হালিমের দোকানে ভীড় দেখলে।
রোজা ভাঙতে হালিম কেন
হালিমে নানা মশলা ব্যবহার হলেও মূলতে ঢিমে আঁচে সেদ্ধ করে রান্না করা হয়। তাই হজম করা খুব কঠিন নয়। অন্য দিকে হালিম উচ্চপ্রোটিন সম্পন্ন। প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। সারাদিনের উপোসের পরে শরীরের ঘাটতি মেটাতে হালিম তাই নির্বিকল্প। এক প্লেট হালিম খাওয়া মানে একটা বড় মিলের সমান।
তবে আর কী, আজই লোক জড়ো করুন। একটা 'ওয়াক' হয়ে যাক পুরনো মহল্লাগুলোয়। ফেরার পথে হালিম চালান হোক পেটে। রথ দেখা কলা বেচা দুইই হল।