সংক্ষিপ্ত

এডগার পো’র নিজের জীবনের উপলব্ধি, তাঁর পরিবার এবং বেড়ে ওঠা জীবন থেকে পাওয়া। তিনি ছিলেন আমেরিকান অভিনেতা ডেভিড পো এবং ইংলিশ অভিনেত্রী এলিজাবেথ আর্নল্ড হপকিন্স পো-র দ্বিতীয় সন্তান। ১৮০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি এডগার পো’র জন্ম এবং এর এক বছর পরেই তাঁর বাবা তাদের ছেড়ে চলে যান। 
 

বিজয় দাস--- মার্কিন সাহিত্যে রোমান্টিক আন্দোলনের নেতা, গোয়েন্দা গল্পের স্রষ্টা, কবি, সাহিত্য সমালোচক এডগার অ্যালান পো ছিলেন উনিশ শতকে বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম গথিক শৈলীর ছোটোগল্প লেখক। প্রতিভার দিক থেকে সমসাময়িক সাহিত্যিকদের মধ্যে অনেক এগিয়ে থাকলেও বৈচিত্র্যময় অগোছালো জীবন তাঁকে প্রতিষ্ঠিত হতে বারেবারে বাঁধা দিয়েছে। মাত্র আঠারো বছর বয়সে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কবিতা সংকলন ‘ট্যামারলেন এবং অন্যান্য কবিতা’। যেখানে তিনি লিখছেন—
‘Kind solace in a dying hour!
Such, father, is not (now) my theme—
I will nor madly deem that power
Of Earth may Shrive me of the sin
Unearthly pride hath revell’d in—
I have no time to dote or dream:
You call it hope— that fire of fire!
It is but agony of desire:
If I can hope— Oh God! I can—
Its fount is holier— more divine—
I would not call thee fool, old man,
But such is not a gift of thine.’ 


এখানে এডগার পো সেই আধ্যাতবাদের কথা বলছেন যা মৃত্যুর সময়েও সান্ত্বনা দিয়ে যায়। যদি আমার নিজের মতো করে বলার ধৃষ্টতা করি সে-ক্ষেত্রে বলব: “মরে যাওয়া মুহূর্তে স্নেহ! / যেমন, পিতা, আমার (এখন) বিষয় নয়— / না, আমি উন্মাদের মতো সেই শক্তিতে বিশ্বাস করব না / পৃথিবী আমাকে পাপ থেকে বঞ্চিত করতে পারে / অমূল্য গর্ব— / আমার ভালোবাসায় অন্ধ হওয়ার বা স্বপ্ন দেখার সময় নেই: / তুমি এটাকে আশার কথা বলছ— সেই আগুনের আগুন! / এটি কেবল আকাঙ্ক্ষার যন্ত্রণা: / আমি যদি আশা করতে পারি— হে ঈশ্বর! আমি পারি— / এর উৎস অনেক পবিত্র এবং আরও বেশি ঐশ্বরিক / আমি তোমাকে বোকা বলব না, বুড়ো মানুষ, / তবে এগুলো আপনার উপহার নয়।”


   প্রথমে যে পরম-পিতাকে তিনি অস্বীকার করলেন, শেষে সেই পিতার আশ্রয়েই নিজেকে সমর্পণ করতে দিলেন এবং মৃত্যু চেতনা— যা তাঁর কবিতা ও অন্যান্য লেখার মধ্যে ভীষণভাবে পরিলক্ষিত। ‘Father, I firmly do believe— / I know— for Death, who comes for me’।
   এই দর্শন এডগার পো’র নিজের জীবনের উপলব্ধি, তাঁর পরিবার এবং বেড়ে ওঠা জীবন থেকে পাওয়া। তিনি ছিলেন আমেরিকান অভিনেতা ডেভিড পো এবং ইংলিশ অভিনেত্রী এলিজাবেথ আর্নল্ড হপকিন্স পো-র দ্বিতীয় সন্তান। ১৮০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি এডগার পো’র জন্ম এবং এর এক বছর পরেই তাঁর বাবা তাদের ছেড়ে চলে যান। আরও কিছু দিন পর অর্থাৎ ১৮১১ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁর মা মারা গেলে এডগার পো, তাঁর দাদা ও একবছর বয়সের ছোটো বোন অনাথে পরিণত হন। দাদা হেনরিকে তাদের ঠাকুরদা ও ঠাকুমা নিয়ে যান, বোন রোজালিকে উইলিয়াম ও জেন স্কট নামক দম্পতি দত্তক নেন আর এডগার পো-কে লালনপালন করেন জন অ্যালান ও তাঁর স্ত্রী ফ্রানসেস অ্যালান। এই দম্পতি এডগারকে নিয়ে ভার্জিনিয়া চলে যান এবং সেখানে তাঁকে ব্যাপটাইজ করা হলে নতুন নাম হয় ‘এডগার অ্যালান পো’। পিতার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি, মায়ের মৃত্যু, শেষে ভাই-বোনদের থেকে বিচ্ছেদ শিশু এডগারের মনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল; এবং তিনি তাঁর পিতাকে এইসবের একমাত্র কারণ হিসাবে মনে করেছেন তাই কখনও তাকে ক্ষমা করতে পারেননি।


   এডগার অ্যালান পো গল্প-লেখক হিসেবে পরিচিত হলেও তাঁর আত্মার পরিচয় পাওয়া যায় কবিতাগুলো থেকে। তাঁর একাকীত্ব, মৃত্যু কামনা, প্রথম যৌবন ও প্রেম এই সবকিছুই তিনি উজার করে দিয়েছেন কবিতাগুলোর মাধ্যমে। কিন্তু প্রায় সব কবিতাতেই মৃত্যুর স্পর্শ থেকেছে, বিশেষভাবে শুরুর দিকের লেখাগুলোতে। ‘দ্য সিটি ইন দ্য সি’ নামক কবিতায় তিনি লিখলেন, ‘Lo! Death has reared himself a throne / In a strange city lying alone’, অথবা ‘স্পিরিটস অব দ্য ডেড’ কবিতাটিতে লিখেছেন, ‘The Spirits of the dead who stood / In life before thee are again’। আবার তিনি লিখেছেন, ‘Helen, thy beauty is to me / Like those Nicean barks of yore’। কিংবা ‘Take this kiss upon the brow!’, এখানে আমরা খুঁজে পাই রোম্যান্টিক এডগার অ্যালান পো’কে। কোথায় মৃত্যু চেতনা, কোথায় হতাশা! এক সহজ ভালোবাসার অভিব্যাক্তি। ‘প্রেমিকার ললাটে চুম্বন’ এইরকম উপলব্ধি তো কবির থেকেই পাওয়া সম্ভব।
   মাঝের সময়ে কবিতা লেখা প্রায় বন্ধ করে ছোটোগল্প এবং সমালোচনামূলক প্রবন্ধ লেখা শুরু করেন, কারণ এই সময়ে বিভিন্ন সাহিত্য প্রতিযোগিতায় জেতা আর্থিক পুরষ্কারই ছিল তাঁর একমাত্র উপার্জন; এবং সারা জীবনে বহু সাহিত্য পত্রিকায় সম্পাদনা ও সহ-সম্পাদনা করেছেন। প্রায় দশ বছরের ব্যবধান কাটিয়ে ১৮৪৫ সালে নিউ ইয়র্ক ইভিনিং মিরর-এ প্রকাশিত হয় এডগার পো-র কবিতা ‘দ্যা র‍্যাভেন’। এখানে কবি আবার নতুনভাবে ফিরে এলেন তাঁর কাব্যশৈলীতে। অতিপ্রাকৃত পরিবেশ, নাটকীয়তা এবং ছন্দ এই কবিতাটিকে স্বতন্ত্র করে তোলে:  
‘Presently my soul grew stronger; hesitating then no longer,
“Sir,” said I, “or Madam, truly your forgiveness I implore;
But the fact is I was napping, and so gently you came rapping,
And so faintly you came tapping, tapping at my chamber door,
That I scarce was sure I heard You’’— here I opened wide the door;—
Darkness there and nothing more.’
   এডগার পো যেন প্রতিনিয়ত কিছু খুঁজে চলেছেন, কোনও কিছুর সন্ধানে ছুটে বেড়িয়েছেন সারা জীবন ধরে। এই খুঁজে বেড়ানোর অন্বেষণীয় দৃষ্টি এবং উদ্যামতা তাঁর লেখার মধ্যে ফুটে ওঠে। জীবন তাকে বহুবার বিভিন্ন দিক থেকে হতাশ করলেও সাহিত্য সৃষ্টিতে তিনি কখনই হতাশ হননি। তাঁর কবিতা বারেবারে উজ্জীবিত করেছে বিভিন্ন আঙ্গিকের রচনা সৃজনে। কল্পনা, জাদুবাস্তবতা অথবা মিথ মিলেমিশে একাকার হয়েছে তাঁর নিজস্ব জীবন অভিজ্ঞতার সাথে। স্ত্রীর মৃত্যুর আঘাতে অসহায় ও মদ্যপ পো খুঁজে ফেরে জড়িয়ে ধরার অবলম্বন। এরপর বহু নারী আসে তাঁর জীবনে; এবং তাদের নিয়ে লেখা কবিতা এবং চিঠি বিশ্ব সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। যেমন, সেই সময়ের মহিলা কবি সারাহ্‌ হেলেন-কে নিয়ে লেখা কবিতা ‘টু হেলেন’, আবার অ্যানি রিচমন্ড-এর উদ্দেশ্যে তাঁর কবিতা ‘ফর অ্যানি’। এই কবিতাগুলোতে যেন এক আকুতি রয়েছে। ‘ফর অ্যানি’ কবিতাটির শুরুতেই তিনি লিখলেন—
‘Thank Heaven! The crisis—
The danger is past,
And the lingering illness
Is over at last—
And the fever called “Living”
Is conquered at last.’
   এডগার অ্যালান পো কবি হিসেবে বিশ্ব সাহিত্যে খুব পরিচিত নাম না-হলেও তাঁর কবিতা বর্তমান বিশ্ব সাহিত্যের নিরিখে ভীষণভাবে আধুনিক। এত শতাব্দী পরেও তাঁর কবিতা একইরকম নতুন এবং কাব্য মাধুর্যের রস পাঠক মননে নিসর্গের এক অদ্ধুত ভালোলাগায় পরিপূর্ণ করে তোলে। বাস্তবতার নিষ্ঠুর সত্যির মাঝে অবাস্তব রহস্য ও রোমাঞ্চ সৃষ্টি এডগার অ্যালান পো’কে অমর করেছে এই লিখনবিশ্বে। তিনি হয়তো তাঁর কল্পনার ‘এলডোরাডো’ কখনও পাননি, কিন্তু আমরা অর্থাৎ তাঁর কবিতার পাঠকেরা হয়তো এই কবিতার মধ্যেই সেই মিথিক্যাল ‘এলডোরাডো’-র অস্তিত্ব খুঁজে পাই: 
‘‘Over the Mountains
Of the Moon,
Ride, boldly ride,’
The shade replied,—
‘If you seek for Eldorado!’’

লেখক পরিচিতি- বিজয় দাস সাহিত্য কর্মের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সাহিত্যের বিভিন্ন আঙিনায় তিনি অবাধে বিচরণ করতেই ভালোবাসেন। কলিখাতা এবং শিল্প সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদনারও কাজ করেন তিনি। তাঁর লেখা একটি কাব্যগ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে, যার নাম পান্তাভাতের জলসাঘর। এছাড়াও একটি পুস্তক সম্পাদনাও করেছেন বিজয়। তাঁর সেই সম্পাদিত বইয়ের নাম চিত্রকলায় সমাজতত্ত্ব। 

সংকলনা- জয় ভদ্র, হাজার শতাব্দীর রূপকথা অথবা রাজনৈতিক বিষণ্ণতা-র মতো বইয়ের লেখক তিনি, নয়ের দশকের শেষ লগ্ন থেকে লেখালেখি শুরু। একটা সময় মূলত সাংবাদিকতার সঙ্গে সঙ্গে চালিয়ে গিয়েছিলেন সাহিত্যকর্ম। এই মুহূর্তে পুরোপুরি সাহিত্যেই মনোনিবেশ করেছেন। কবিতা, গল্প, উপন্যাস যেমন তাঁর অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র তেমনি পুস্তক সমালোচনা এবং নাট্য-সমালোচক হিসাবেও সমাদৃত হয়েছেন।