শীত, বর্ষা বা গ্রীষ্ম—প্রতিটি ঋতুতেই কোনো না কোনো ভাইরাসের কারণে জ্বর, সর্দি, কাশি দেখা দেয়। সঠিক চিকিৎসা ছাড়া পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে। তাই ভাইরাসগুলির বিষয়ে জানা এবং উপযুক্ত সতর্কতা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
আবহাওয়ার ঘন ঘন পরিবর্তন, ঋতু পরিবর্তন, জনসংখ্যার ঘনত্ব, দূষণ - এসবের কারণে ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গে এখন সারা বছরই ভাইরাল সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়। শীত, বর্ষা বা গ্রীষ্ম—প্রতিটি ঋতুতে কোনও না কোনও ভাইরাস সক্রিয় থাকে। একাধিক ভাইরাসের প্রভাবে জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, ক্লান্তির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
অনেকেই সামান্য আবহাওয়ার পরিবর্তনের ঠান্ডা লাগা বা জ্বর ভেবে তেমন তোয়াক্কা করেন না। তবে সঠিক চিকিৎসা না পেলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠতে পারে। তাই সময় থাকতেই এই ভাইরাসগুলির বিষয়ে জানা এবং উপযুক্ত সতর্কতা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
৬টি ভোগান্তিকর ভাইরাস এবং তাদের বৈশিষ্ট্য
১। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস
বিশ্বের অন্যতম পরিচিত ভাইরাস। ১৯৩৩ সালে ব্রিটিশ গবেষকরা এই ভাইরাস আবিষ্কার করেন। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিভিন্ন টাইপ রয়েছে- এ, বি, সি, ডি। এ টাইপের মধ্যে পরিচিত ভাইরাস এইচ১এন১ ভাইরাস বা সোয়াইন ফ্লু। তবে চলতি বছরে এইচ৩এন২ ভাইরাস সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে।
উপসর্গ: জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা, কাশি, ক্লান্তি, শরীর ব্যথা।
২। রাইনো ভাইরাস
ঋতু পরিবর্তনের সময় সাধারণ সর্দি-কাশির মূল কারণ এই রাইনো ভাইরাস। শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। বর্ষা ও শীতে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ে। ১৯৫৬ সালে এই ভাইরাস আবিষ্কার করেন ডাঃ উইনস্টন প্রাইস।
উপসর্গ: নাক দিয়ে জল পড়া, হাঁচি, নাক বন্ধ, হালকা জ্বর হতে পারে।
৩। অ্যাডিনো ভাইরাস
কিছু বছর আগে পর্যন্ত এই ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত ছিল। সাধারণত খুব বেশি শারীরিক জটিলতা বা খুব মারাত্মক না হলেও সংক্রমণের হার বেশি। জনবহুল এলাকায় এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পরে। ১৯৫৩ সালে এই ভাইরাস আবিষ্কৃত হয়।
উপসর্গ: জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা, কাশি, চোখে সংক্রমণ বা কনজাঙ্কটিভাইটিস, পেট খারাপ
৪। রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস
১৯৫৬ সালে আবিষ্কার হয় রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস বা RSV। শিশুদের মধ্যে এর সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। সাধারণত প্রাণঘাতী না হলেও শিশুদের আক্রান্ত করে বলে দ্রুত চিকিৎসার দরকার।
উপসর্গ: সর্দি, কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট
৫। এন্টারো ভাইরাস
১৯৬০ সালে প্রথম চিহ্নিত করা হয় এন্টারো ভাইরাসকে। গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালে এই ভাইরাসের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি
উপসর্গ: জ্বর, গলা ব্যথা, হাঁচি, পেশিতে ব্যথা, র্যাশ, চোখে সংক্রমণ। গুরুতর ক্ষেত্রে মেনেজাইটিস, এনসেফালাইটিস বা মায়োকার্ডিটিসের হতে পারে।
৬। করোনা ভাইরাস
করোনা ভাইরাস প্রথম চিহ্নিত হয় ২০০৩ সালে। বেশ কয়েকটি প্রকারও রয়েছে এর। তবে সব করোনা ভাইরাসই সার্স-কোভ ২ বা কোভিড-১৯ এর মতো প্রাণঘাতী পর্যায়ে যায় না। আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই, এটিও এখন নিয়ন্ত্রণে।
উপসর্গ: হালকা থেকে মাঝারি জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট।
প্রতিকার কী উপায়ে?
- * ভাইরাসের সংক্রমণের সরাসরি চিকিৎসা সেভাবে নেই। যে যে উপসর্গ দেখা দেয়, সেই অনুযায়ী চিকিৎসা প্রয়োজন। তাই শারীরিক সমস্যা যদি বেশি হয় তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই ভালো।
- * শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে অনেক সময় ভাইরাস সংক্রমণের সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণও দেখা যায়। সেক্ষেত্রে জটিলতা কয়েক গুণ বেড়ে যেতে পারে। তাই বয়স্ক বা শিশুদের ভাইরাসঘটিত রোগ হলে আর কোনও সমস্যা হচ্ছে কী না, তার দিকে নজর রাখা উচিত।
- * ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধে এখন ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। প্রতি বছর এই টিকা নিতে হয়। যাদের খুব ভিড়ের মধ্যে কাজ করতে হয় বা কাজের সূত্রে রোগীদের কাছাকাছি যেতে হয়, তাঁরা এই টিকা নিতে পারেন। এছাড়া শিশু ও বয়স্কদেরও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা নিয়ে রাখা উচিত।
- * ভাইরাস সংক্রমণ থেকে বেঁচে চলার অন্যতম প্রধান উপায় হল হাইজিন মেনে চলা। কেউ সংক্রামিত হলে কিছুদিন তার সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, মাস্ক ব্যবহার, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, ভিড় এড়িয়ে চলা, স্যানিটাইজার ব্যবহার প্রভৃতি বিষয়গুলি মেনে চলা উচিত।
- * কোনও মরশুমে প্রতি বছর একই ভাইরাস সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত হবে এমনটা নয়। আবার একই ভাইরাস রূপ পাল্টেও আসতে পারে। তাই সতর্ক থাকুন। প্রয়োজন বুঝলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
