সংক্ষিপ্ত

বিশেষজ্ঞরা ফ্যাটি লিভারের ভয়াবহতা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের মধ্যে এর প্রকোপ বাড়ছে। সঠিক খাদ্যতালিকা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

সাম্প্রতিক সমীক্ষাতে ভয় ধরানোর মতো রিপোর্ট সামনে এল। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশের ৮০ শতাংশ তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীর ফ্যাটি লিভার আছে। চণ্ডীগড়ে নাকি এই সংখ্যা খুবই বেশি। সেখানকার জনসংখ্যায় অন্তত ৫৩ শতাংশেরই ফ্যাটি লিভারের সমস্যা রয়েছে।ফ্যাটি লিভার বর্তমান বিশ্বের একটি বড় সমস্যা। অনেকে অল্প বয়সেই আক্রান্ত হচ্ছেন এতে।

‘জার্নাল অফ ক্লিনিকাল অ্যান্ড এক্সপেরিমেন্টাল হেপাটোলজি'র একটি সমীক্ষার রিপোর্ট দাবি করা হয়েছে যে দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীরই নাকি ফ্যাটি লিভার রয়েছে। অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া, দীর্ঘ সময়ে বসে থেকে কাজ, রাত জাগার অভ্যাস, নেশা করা ইত্যাদি নানা কারণে লিভারে চর্বির স্তর বেড়ে চলেছে। আমাদের দেশের জনসংখ্যায় প্রাপ্তবয়স্কদের অন্তত ৩৮ শতাংশ ‘নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার’-এর সমস্যায় ভুগছেন। এমনকি বাদ নেই শিশুরাও।

মূলত খাদ্যতালিকায় অতিরিক্ত, তেল, ফ্যাট জাতীয় উপাদান বেড়ে গেলে লিভারের পরতে পরতে চর্বি জমে ‘মেটাবলিক ডিজ়ফাংশন-অ্যাসোসিয়েটড স্ট্যাটোটিক লিভার ডিজিজ়’ বা এমএএসএলডি রোগও হয়। চিকিৎসকদের কথা মতো, লিভারে যদি ১০ শতাংশের বেশি মেদ জমে যায়, তখন তা ধীরে ধীরে স্ট্যাটোটিক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

ফ্যাটি লিভারে তেমন ক্ষতি হয় না, কিন্তু যদি তা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায়, তা হলে লিভারের ক্ষত বা সিরোসিস এবং তার থেকে লিভার ক্যানসার হতে পারে। কেবল তাই নয়, লিভারের রোগ থেকে কিডনি ফেলিয়োর হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে। ওজন কমানো, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়ামই পারে একমাত্র এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে। তাহলে জেনে নিন ফ্যাটি লিভার হলে কী খাবেন আর কতটা নিয়ন্ত্রণ করবেন।

কী খাবেন?

১. ক্রুসিফেরাস সবজির যেমন ফুলকপি, ব্রকোলি, কালে, বাঁধাকপি ইত্যাদি কিডনি এবং লিভার ভালো রাখতে পারদর্শী। এটি ক্ষতিকর রাসায়নিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে লিভার এবং কিডনিকে রক্ষা করে। এটি ফ্যাটি লিভারের রোগ প্রতিরোধ করে।

২. বিটের রস কিডনি এবং লিভারের জন্য খুব উপকারী। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিটের রস ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে লিভারের ক্ষতি কমায় এবং ক্ষত নিরাময় করে। এটি কিডনি পরিষ্কারেও বিশেষ ভাবে উপকারী।

৩. আঙুরে অনেক ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা প্রাকৃতিকভাবে আমাদের লিভার এবং কিডনিকে অনেক রোগ থেকে রক্ষা করে। আঙুর লিভার এবং কিডনিতে যে কোনও রকমের ইনফ্লামেশন প্রতিরোধ করে, যার ফলে অঙ্গগুলি পরিষ্কার এবং সুস্থ থাকে।

৪. ডাল, ছোলা, মটরশুঁটি ইত্যাদি খাবারে স্টার্চ ও আঁশ প্রচুর। এসব খাবার পরিপাকতন্ত্রের জন্য স্বাস্থ্যকর, একই সঙ্গে ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে। সয়াপ্রোটিন ও টফুও উপকারী। সয়াতে যে বিটা কনগ্লাইসিন থাকে, তা ট্রাইগ্লিসারাইড ও ভিসেরাল ফ্যাট কমায়। সূর্যমুখীর বীজে আছে প্রচুর ভিটামিন ই, যা ফ্যাটি লিভারের জন্য ভালো।ডালিমের মধ্যে উপস্থিত পটাশিয়াম কিডনি এবং লিভারে ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে। এটি কিডনিতে পাথর হওয়া থেকেও রক্ষা করে।

যেগুলো খাবেন না :

১.চিনি: ফ্যাটি লিভারের সবচেয়ে বড় শত্রু হল চিনি বা শর্করা। সাদা চিনি এবং চিনিযুক্ত যেকোনো খাবার, ডেজার্ট, জুস বা পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। বাড়তি চিনিই ট্রাইগ্লিসারাইড হিসেবে যকৃতে জমা হয়।

২. ভাজাপোড়া খাবার: উচ্চ তাপমাত্রায় ভাজা যেকোনো খাবার এড়িয়ে চলুন। চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, যেকোনো ফাস্ট ফুড আপনার জন্য নিষেধ।

৩. নুন: দৈনিক ২ হাজার ৩০০ মিলিগ্রামের বেশি নুন খাওয়া যাবে না। এর মানে রান্নায় যেনুন ব্যবহৃত হয় এর বাইরে যেকোনো নুন, লবণযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার নিষেধ।

৪. সহজ শর্করা: সাদা ভাত, ময়দার তৈরি পাউরুটি ও পরোটা, নান, নুডলস, পাস্তা ইত্যাদি যকৃতে চর্বি বাড়াবে। এর পরিবর্তে বেছে নিন লাল আটার রুটি, ব্রাউন ব্রেড বা লাল চাল, তা-ও পরিমিত পরিমাণে।

৫. রেড মিট: রেড মিট, যেমন গরু বা খাসির মাংস খাওয়া কমিয়ে ফেলুন। মাসে এক বা দুই দিন দু-তিন টুকরা চর্বি ছাড়ানো মাংস খেতে পারেন। এর সম্পৃক্ত চর্বি আপনার জন্য ক্ষতিকর।

৬. অ্যালকোহল: অ্যালকোহল যকৃতের শত্রু। তাই যেকোনো ধরনের অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন ফ্যাটি লিভার হলে।