ডায়েট নয়.. ব্যায়াম নয়.. সহজেই ওজন কমাতে সাহায্য করবে এই সুপার টিপস!
ওজন কমাতে কঠোর ব্যায়াম এবং কঠোর ডায়েটের প্রয়োজন হয় এমনটাই ধারণা। কিন্তু কঠোর ব্যায়াম ছাড়াই, জিমে না গিয়েও ওজন কমানো সম্ভব।
- FB
- TW
- Linkdin
দ্রুত জীবনযাত্রা, দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করা, খারাপ খাদ্যাভ্যাসের কারণে স্থূলতা একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেকোনোভাবেই হোক ওজন কমিয়ে ফিট থাকা সকলেরই লক্ষ্য। কিন্তু ওজন কমাতে কঠোর ব্যায়াম এবং কঠোর ডায়েটের প্রয়োজন হয় এমনটাই ধারণা।
সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য ব্যায়াম উপকারী এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু কঠোর ব্যায়াম ছাড়াই, জিমে না গিয়েও ওজন কমানো সম্ভব বললে কি আপনার বিশ্বাস হয়? হ্যাঁ। আসলেই এর জন্য কিছু সহজ কৌশল রয়েছে। এই কৌশলগুলো জীবনযাত্রা এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের উপর বেশি গুরুত্বারোপ করে যা এই সময়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে। ব্যায়াম ছাড়াই ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে এই পোস্টে দেখে নেওয়া যাক।
পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ
ওজন বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত খাওয়া। আপনার খাবারের পরিমাণ কমিয়ে, ক্যালোরি গ্রহণ কমানো যেতে পারে। আপনার মস্তিষ্ককে প্রতারিত করতে ছোট থালা এবং বাটি ব্যবহার করুন যাতে মনে হয় আপনি আসলে যা খাচ্ছেন তার চেয়ে বেশি খাচ্ছেন। আপনার শরীরকে পূর্ণতা অনুভব করার জন্য সময় দিতে, ধীরে ধীরে খান এবং প্রতিটি কামড় উপভোগ করুন।
মনোযোগ সহকারে খাওয়া
আপনি কী খাচ্ছেন এবং এটি আপনাকে কেমন অনুভব করাচ্ছে সেদিকে মনোযোগ দিন। মনোযোগ সহকারে খাওয়া মানে স্বাস্থ্যকর খাবার পছন্দ করা থেকে শুরু করে শরীরের ক্ষুধা এবং পেট ভরা অনুভূতির প্রতি মনোযোগ দেওয়া। খাওয়ার সময় টিভি দেখা বা ফোন ব্যবহারের মতো বিক্ষেপ এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো অতিরিক্ত খাওয়ার দিকে প্রবণতা বাড়ায়।
জল পান
সারাদিন পর্যাপ্ত পানি পান করলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং অতিরিক্ত খাওয়া রোধ করা যায়। কখনও কখনও, আমাদের শরীর তৃষ্ণার্ত থাকলে তা ক্ষুধার্ত বলে ভুল বার্তা দেয়, যার ফলে অপ্রয়োজনীয় খাবার খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করার লক্ষ্য রাখুন এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাবারের আগে এক গ্লাস পানি পান করুন। ভেষজ চা এবং ফলের রস পানি গ্রহণের ভালো বিকল্প।
বেশি ফাইবারযুক্ত খাবার
ফাইবারযুক্ত খাবার কেবল আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পেট ভরা রাখে না, পাশাপাশি এটি হজম এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্যও সহায়তা করে। ফাইবার গ্রহণ বাড়াতে আপনার খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে ফলমূল, শাকসবজি, আস্ত শস্য এবং ডাল রাখুন। ওটস, ফল অথবা চিয়া বীজ দিয়ে তৈরি স্মুদির মতো ফাইবার সমৃদ্ধ নাস্তা দিয়ে আপনার দিন শুরু করুন।
স্বাস্থ্যকর নাস্তা
অতিরিক্ত চিনি এবং উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার পরিবর্তে, পুষ্টিকর বিকল্পগুলি বেছে নিন। বাদাম, বীজ, গ্রীক দই বা ফলের মতো স্বাস্থ্যকর নাস্তা খান। খাবারের মাঝে ক্ষুধা লাগলে এই স্বাস্থ্যকর নাস্তাগুলো খেতে পারেন।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ
দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ মানসিকভাবে খাওয়ার প্রবণতা এবং ওজন বৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করে। ধ্যান, যোগব্যায়াম, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো মানসিক চাপ কমাতে স্বাস্থ্যকর উপায়গুলি অনুসরণ করুন। আপনার পছন্দের কাজকর্মে নিজেকে ব্যস্ত রাখা, আত্ম-যত্নের প্রতি অগ্রাধিকার দেওয়া মানসিক চাপ কমাতে এবং সামগ্রিক সুস্থতাকে উন্নত করতে সাহায্য করে।
খাবার পরিকল্পনা
আগে থেকে খাবার পরিকল্পনা করা অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রবণতা কমাতে পারে। প্রতি সপ্তাহে একটি খাবার পরিকল্পনা তৈরি করুন, একটি মুদি তালিকা তৈরি করুন এবং আগে থেকে উপকরণগুলি প্রস্তুত করুন। পুষ্টিকর খাবার সহজলভ্য থাকলে সময় ব্যয় কমে এবং উচ্চ ক্যালোরি এবং কম পুষ্টিযুক্ত খাবারের উপর নির্ভরতা কমে।
স্থির থাকুন
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা গুরুত্বপূর্ণ। এই কৌশলগুলি সহজ মনে হলেও, ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল পেতে আন্তরিকতা এবং অধ্যবসায়ের প্রয়োজন। আপনার লক্ষ্যের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখুন, আপনার অগ্রগতি ট্র্যাক করুন এবং ছোট ছোট সাফল্য উদযাপন করুন। মনে রাখবেন, স্থায়ী ওজন কমানো একটি ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া এবং স্থায়ী জীবনযাত্রার পরিবর্তন আনা এখানে চূড়ান্ত লক্ষ্য।
তরল ক্যালোরি সীমাবদ্ধ করুন
সোডা, ফলের রস এবং এনার্জি ড্রিংকের মতো চিনিযুক্ত পানীয় কোনও পুষ্টিগুণ সরবরাহ করে না বরং ওজন বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। পানি, ভেষজ চা বা ঘরে তৈরি ফলের রস পানের মাধ্যমে তরল ক্যালোরি কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
পর্যাপ্ত ঘুম
আপনি যদি সঠিকভাবে ঘুম না পান তবে তা হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আপনার ক্ষুধা বাড়ায়। ওজন কমানোর প্রচেষ্টাকে সফল করতে প্রতি রাতে ৭-৯ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। নিয়মিত ঘুমের সময়সূচী তৈরি করুন, আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ তৈরি করুন এবং ঘুমের মান উন্নত করতে ঘুমানোর আগে ক্যাফিন এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
ওজন কমানোর কোনো জটিল বা ক্লান্তিকর প্রক্রিয়া হওয়া উচিত নয়। আপনার দৈনন্দিন জীবনে এই সহজ কৌশলগুলি অনুসরণ করে, কঠোর ব্যায়াম ছাড়াই ওজন কমানো সম্ভব। সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতা উন্নত করতে ছোট ছোট, স্থায়ী পরিবর্তন আনার চেষ্টা করুন। এতে অবশ্যই আপনার ওজন ক্রমশ কমবে।