সংক্ষিপ্ত

অনেকেই অফিসে কাজের চাপ কমাতে এক কাপ গরম কফি খেয়ে তরতাজা থাকার চেষ্টা করেন।

কেউ কেউ আবার সঙ্গী বা সঙ্গিনীকে নিয়ে সান্ধ্যভ্রমণে বেরিয়ে কোল্ড কফিও খেয়ে নেন। অনেকে তো সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই হাতে কফির কাপ তুলে নেন। কিন্তু ঘন ঘন কফি খাওয়ার যে অভ্যাস অনেকেরই আছে, তা যে প্রজনন ক্ষমতার উপরে বড়সড় প্রভাব ফেলে, তা হয়ত অনেকেই জানেন না।

আসল দোষটা কফিতে থাকা ‘ক্যাফিন’নামক উপাদানটির। ক্যাফিনকে বলা হয় ‘স্টিমুল্যান্ট’, যা আসলে শক্তিবর্ধক। বলা যেতে পারে, এনার্জি এনে দেয়। কেবল কফিতে নয়, চা, অ্যালকোহল, নরম পানীয় এবং চকোলেট সহ বেশ কিছু খাবারেও ক্যাফিন বেশ ভালো পরিমাণে থাকে। আর এই উপাদানটি মস্তিষ্কের কার্যকক্ষমতা বাড়ায়, টাইপ-২ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায় এবং কিছুক্ষেত্রে ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় বলেও দাবি করা হয়েছে বিভিন্ন গবেষণায়।

তবে এটির ক্ষতিকর দিকটি সম্পর্কেও জেনে রাখা দরকার। ক্যাফিন বেশি পরিমাণে শরীরে ঢুকলে নানাভাবে প্রভাব ফেলতে শুরু করে দেহে। প্রজনন ক্ষমতার উপরে বড় প্রভাব ফেলে এটি। পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্রাশয় এবং মহিলাদের জরায়ুর উর্বরতা কমিয়ে দিতে পারে ক্যাফিন।

এই বিষয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, “ক্যাফিন যেমন ভালো, তেমনই ক্ষতিকর। কারণ, এক কাপ কফিতে প্রায় ৭০-১৪০ মিলিগ্রাম ক্যাফিন থাকে। কফি খাওয়ার সময়ে এই পরিমাণটা একদমই ভুললে চলবে না। এক কাপ কফিতে কতটা পরিমাণ কফি দিচ্ছেন, তার উপর নির্ভর করছে সব। সেই হিসেবে দিনে তিন কাপের বেশি কফি না খাওয়াই ভালো। তাই দিনে দুই থেকে তিন কাপ চা খেলে ক্ষতি নেই। কিন্তু তার বেশি হলেই বিপদ।”

এমনিতে সিম্প্যাথেটিক সিস্টেমে অত্যধিক প্রদাহ তৈরি হলে তখন রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং শ্বাসের গতি বাড়ে। সেইসঙ্গে, নাড়ির গতি বাড়ে এবং শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। আবার ঠিক উল্টোটা হয় প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেমের ক্ষেত্রে। ক্যাফিন সিম্প্যাথেটিক ও প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেমের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াগুলিকেই সবচেয়ে আগে ক্ষতিগ্রস্ত করে, এমনটাই জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

রোজ ৫-৬ কাপ বা তার বেশি কফি খান যারা, তাঁদের শরীরে এত বেশি ক্যাফিন ঢোকে যা সিম্প্যাথেটিক সিস্টেমকে ‘স্টিমুলেট’করে দেয়। অর্থাৎ, উদ্দীপনা বাড়ায়। এতে শরীরের তাপমাত্রাও বাড়ে, যার প্রভাব পড়ে জনন অঙ্গের উপরে। তাছাড়া হরমোনের তারতম্যও দেখা দেয়, শুক্রাশয়ে শুক্রাণু তৈরির প্রক্রিয়া এবং জরায়ুতে ডিম্বানু তৈরির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া নষ্ট হতে শুরু করে ধীরে ধীরে।

অন্যদিকে, দিনে ২০০ মিলিগ্রামের মতো ক্যাফিন শরীর সয়ে নিতে পারে। কিন্তু দৈনিক ক্যাফিনের মাত্রা যদি ৩০০ মিলিগ্রাম ছাড়িয়ে যায়, তাহলে হরমোনের ভারসাম্য তারতম্য হতে পারে। মহিলাদের ইস্ট্রোজেন নামক যৌন হরমোনেরই একটি রূপ এস্ট্রাডিওল হরমোন এবং প্রজেস্টেরনের ক্ষরণ পাল্টে হয়ে যায়।

পুরুষদের ক্ষেত্রেও টেস্টোস্টেরন ক্ষরণের প্রক্রিয়াকে নষ্ট করে দিতে পারে অতিরিক্ত ক্যাফিন। তাছাড়া শুক্রাশয়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রা শরীরের তাপমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম থাকে। কারণ, শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য শুক্রাশয়ের নিম্ন তাপমাত্রাই জরুরি। তবে কোনও কারণে যদি শুক্রাশয়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বেড়ে যায়, তাহলে দুরকম জটিলতা দেখা দিতে পারে।

প্রথমত, শুক্রাণু উৎপাদনের প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলে, ‘ইরেকটাইল ডিসফাংশন’-এর সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেইসঙ্গে, ক্যাফিন যদি বেশি পরিমাণে শরীরে জমা হতে থাকে, তাহলে এই দুটি সমস্যাই বড় হয়ে দেখা দিতে পারে। শুক্রাণুর ঘনত্ব এবং গুণমানও বেশ কমতে থাকবে। আর তার থেকে বন্ধ্যাত্বের সমস্যাও হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে, ক্যাফিন যৌন উত্তেজনাও কমিয়ে দিতে পারে।

ফলে, যৌন সম্পর্কের সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে উত্তেজিত না হতে পারার সমস্যায় ভুগছেন অনেকেই। এর অন্যতম বড় কারণই বল ক্যাফিন, যা কেবল কফি থেকে নয় ঘন ঘন চা, মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল এবং ঠান্ডা পানীয় থেকেও শরীরে ঢুকছে। ক্যাফিন কিন্তু শরীরে আয়রন ও ক্যালশিয়াম শোষণেও বাধা দেয়। তাই যৌন হরমোনের ক্ষরণে বড় ভূমিকা রয়েছে এই দুই খনিজের। কাজেই কফি, চা বা ঠান্ডা পানীয় যা-ই খান না কেন, বুঝেশুনে এবং মেপে খাওয়াই ভালো।

আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।