ডায়াবেটিস আমাদের সময়ের সবচেয়ে গুরুতর স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে একটি। একে 'স্লো কিলার' বলা হয়। জেনে নিন ডায়াবেটিসের কারণে কোন কোন ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিস আমাদের সময়ের সবচেয়ে গুরুতর স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে একটি। বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬০ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন (IDF)-এর ডায়াবেটিস অ্যাটলাসের ১১তম সংস্করণ অনুসারে, ২০২৫ সালে বিশ্বজুড়ে ২০-৭৯ বছর বয়সী আনুমানিক ৫৮.৯ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। অর্থাৎ প্রতি ৯ জনের মধ্যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ডায়াবেটিসের শিকার হন।
ডায়াবেটিসের কারণে কোন কোন ঝুঁকি বেড়ে যায়-
হৃদরোগ (Heart Disease)
ডায়াবেটিস রোগীদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। গবেষণা অনুসারে, ডায়াবেটিস রোগীদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ২ থেকে ৪ গুণ বেড়ে যায়। রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়লে করোনারি ধমনীতে প্লাক জমা হওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুত হয়।
কিডনি ফেলিওর (Diabetic Nephropathy)
বিশ্বে কিডনি বিকল হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ ডায়াবেটিস। তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৩০-৪০% ডায়াবেটিস রোগীর কিডনির ক্ষতি হতে শুরু করে। নিয়ন্ত্রণ না করলে ১০-১৫ বছরের মধ্যে ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন হতে পারে।
দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হওয়া / অন্ধত্ব (Diabetic Retinopathy)
রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়লে চোখের স্নায়ু দুর্বল হয়ে যায়, যার ফলে দৃষ্টিশক্তি কমতে শুরু করে। কখনও কখনও এটি অন্ধত্বের কারণও হতে পারে। প্রায় ২৫-৩০% রোগীর মধ্যে রেটিনোপ্যাথি পাওয়া যায়।
স্ট্রোকের ঝুঁকি (Brain Stroke)
ডায়াবেটিস মস্তিষ্কের স্নায়ুর উপরও খারাপ প্রভাব ফেলে, যার কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
স্নায়ুর রোগ (Neuropathy)
প্রায়শই পায়ে ঝিঁ ঝিঁ ধরা, জ্বালাপোড়া, অসাড়তা ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির লক্ষণ। প্রায় ৫০% ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে কোনো না কোনো ধরনের নিউরোপ্যাথি পাওয়া যায়।
ডায়াবেটিক ফুট এবং গ্যাংগ্রিনের ঝুঁকি
পায়ের স্নায়ু এবং রক্ত সঞ্চালনে প্রভাব পড়ার কারণে ক্ষত সহজে সারে না। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ রোগী ফুট আলসারে আক্রান্ত হন। অনেক সময় গুরুতর ক্ষেত্রে অঙ্গ কেটে ফেলার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়।
আরও পড়ুন: কিডনির স্বাস্থ্য: অতিরিক্ত চা থেকে লবণ, রোজকার এই ৫টি অভ্যাস কিডনির জন্য ক্ষতিকর
উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension)
ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ প্রায়শই একসাথে দেখা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে ৬৭% ডায়াবেটিস রোগীর উচ্চ রক্তচাপও থাকে।
লিভারের রোগ (Fatty Liver)
ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ার কারণে লিভারে চর্বি জমে যায়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের কম পরিমাণে কিন্তু বারবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ৫০-৭০% ডায়াবেটিস রোগীর মধ্যে ফ্যাটি লিভার পাওয়া যায়।
ত্বক এবং সংক্রমণ (Skin & Fungal Infections)
উচ্চ শর্করা ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। বারবার ফাঙ্গাল ইনফেকশন, ঘা এবং চুলকানির ঝুঁকি বেড়ে যায়।
মানসিক চাপ এবং ডিপ্রেশন
রক্তে শর্করার ভারসাম্যহীনতা মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলে। ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে ডিপ্রেশনের ঝুঁকি ২ গুণ বেড়ে যায়।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জরুরি সতর্কতা
ডায়াবেটিস রোগীদের নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত।
প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪০ মিনিট হাঁটুন।
ভাত, চিনি, গম, ময়দা খাওয়া এড়িয়ে চলুন। যদি খান, তবে ডাক্তারের বলা পরিমাণ অনুসরণ করুন।
পর্যাপ্ত ঘুমান এবং মানসিক চাপ নেবেন না।
প্রতি বছর চোখ, কিডনি এবং হার্ট পরীক্ষা করান।


