সকালে গাঁটের ব্যথা, সায়াটিকা এবং অন্যান্য বাতজনিত রোগে ভোগেন বহু মানুষ। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রাচীন আয়ুর্বেদ অনুসারে, রসুন ব্যবহার করে তৈরি একটি বিশেষ ভেষজ মিশ্রণ প্রায় ৮০ ধরনের বাত রোগ।
প্রাচীন আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতকালে গাঁটের ব্যথা, সায়াটিকা ও অন্যান্য বাতজনিত সমস্যায় ভোগা রোগীদের জন্য একটি বিশেষ ভেষজ মিশ্রণ অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। রসুন দিয়ে তৈরি এই মিশ্রণটি প্রায় ৮০ প্রকারের বাত রোগ, যেমন—জয়েন্টের ব্যথা, হাত-পায়ের অসাড়তা, স্পন্ডিলোসিস এবং এমনকি হাঁজল ও পুরনো কাশির উপশমে সহায়ক। এই সময়ে (পৌষ মাস থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত) নিয়মিত সেবন দ্রুত আরোগ্যে সাহায্য করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, রসুন, দুধ, ঘি ও বহু ভেষজ উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি এই মিশ্রণ সেবনে পক্ষাঘাত, অস্থিজনিত সমস্যা, কাঁপুনি ও উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সঠিকভাবে প্রস্তুত করে প্রতিদিন সকালে ১০ থেকে ২০ গ্রাম পরিমাণ মিশ্রণ গরুর দুধের সঙ্গে সেবন করা বাঞ্ছনীয়। তবে যেকোনো গুরুতর শারীরিক অবস্থায় ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন বৈদ্যের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
** কোন কোন রোগ উপশমে রসুন কার্যকর?
বিশেষজ্ঞদের মতে, রসুনের সঠিক ব্যবহারে ৮০ প্রকার বাত রোগ সহ একাধিক শারীরিক সমস্যা দূর হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
* বাত রোগ: জয়েন্টের ব্যথা, সায়াটিকা (Sciatica), প্যারালাইসিস (পক্ষাঘাত), মুখে পক্ষাঘাত (অর্দিত), হাত-পা অসাড় হয়ে যাওয়া বা জকড়ন, কাঁপুনি, সার্ভাইকাল স্পন্ডিলোসিস (Spondylosis) এবং ঘাড় ও কোমরের ব্যথা।
* শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা: হাঁপানি(Asthma), পুরনো কাশি, ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, ফুসফুসে কফ জমা ও ঠান্ডা লাগা।
* অন্যান্য সমস্যা: হাড়ের স্থানচ্যুতি ও ভাঙা সহ অন্যান্য হাড়ের রোগ দূর করতেও এটি সহায়ক।
** ঔষধ তৈরির পদ্ধতি ও সেবনের নিয়ম:
পৌষ ও মাঘ মাস (২২ ডিসেম্বর থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত) রসুন সেবনের সর্বোত্তম সময়।
প্রস্তুত প্রণালী:
২০০ গ্রাম রসুন খোসা ছাড়িয়ে বেটে নিন। ৪ লিটার দুধের সাথে বাটা রসুন এবং ৫০ গ্রাম গরুর ঘি মিশিয়ে দুধ ঘন না হওয়া পর্যন্ত সেদ্ধ করুন। দুধ ঘন হয়ে এলে এতে ৪০০ গ্রাম মিছরি এবং ৪০০ গ্রাম গরুর ঘি মেশান। এরপর আদা (শুকনো), গোলমরিচ, পিপুল, দারুচিনি, এলাচ, তেজপাতা, নাগকেশর, পিপলামূল, বিড়ঙ্গ, জোয়ান, লবঙ্গ, চৈ, চিতামূল, হলুদ, দারুহরিদ্রা, পুষ্করমূল, রাসনা, দেবদারু, পুনর্নভা, গোক্ষুর, অশ্বগন্ধা, শতমূলী, বিধারা, নিম, শোয়া এবং কাঁচ বীজের গুঁড়ো – প্রতিটি ৩ গ্রাম করে মিশিয়ে দিন। কম আঁচে মিশ্রণটিকে নাড়তে থাকুন। যখন মিশ্রণটি ঘন মাওয়ার মতো হয়ে যাবে এবং ঘি ছাড়তে শুরু করবে, তখন আঁচ বন্ধ করে ঠান্ডা করে কাঁচের পাত্রে সংরক্ষণ করুন।
** সেবনের নিয়ম:
প্রতিদিন সকালে ১০ থেকে ২০ গ্রাম মিশ্রণ গরুর দুধের সঙ্গে সেবন করা যেতে পারে। যদি হজমশক্তি ভালো থাকে, তবে সন্ধ্যায় বা রাতে আরও একবার নেওয়া যেতে পারে। এই সময় মুলো, বেশি তেল-ঘি এবং টক জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। স্নান ও পান করার জন্য কুসুম গরম জল ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়।


