সংক্ষিপ্ত

'ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক, এর দ্বারা ক্যান্সার হতে পারে' — এমন ঘোষণা সিনেমাহলেই বাঞ্ছনীয়, বাস্তব জীবনে ধূমপানের থেকেও মারাত্মক ক্ষতিকারক রোগ হয়ে উঠছে ‘একাকীত্ব’।

একদিনে ১৫টি সিগারেট, ধূমপায়ীদের জীবনে প্রায় প্রত্যেকদিনই এমন কাণ্ড ঘটে থাকে। তাতে হৃদরোগ, ক্যান্সার সহ বহু মারাত্মক রোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়, কিন্তু, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, ধূমপানের থেকেও মানবসমাজকে বিরাট বড় ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা। শিশু থেকে বৃদ্ধ, আট থেকে আশি, সমস্ত বয়সের মানুষদের ওপরেই জাঁকিয়ে বসছে যে মারণ রোগ, তার নাম ‘একাকীত্ব’। আজ্ঞে, হ্যাঁ। শুধুমাত্র বড়রা নন, ছোট ছোট শিশুরাও এখন এই মারণ রোগের কবলে।

-

বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা (WHO) মনে করছে যে, একাকিত্ব এই মুহুর্তে বিশ্ব স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অনেক বড় হুমকি। হু–র মতে, মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে একাকিত্ব। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দিনে ১৫ টি সিগারেট একজন মানুষের যতটা ক্ষতি করতে পারে, ঠিক ততটা পরিমাণ স্বাস্থ্যের ক্ষতি ডেকে আনে একাকিত্ব।


এই সমস্যার কথা ভেবে একটি আন্তর্জাতিক কমিশন তৈরি করেছে হু। সেখানে রয়েছেন আমেরিকান চিকিৎসক ডা. বিবেক মুর্তি, আফ্রিকার চিডো এমপেম্বা সহ ১১ জন আইনজীবী ও সরকারি আমলারা।
 

এই কমিশনটি একাকিত্ব নিয়ে আরও গবেষণা ও সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে আগামী ৩ বছর ধরে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোভিড ১৯–এর পর থেকে একাকিত্বের প্রবণতা আরও বেড়ে গেছে।
 

ডা. মুর্তির মতে, একাকিত্বের সমস্যার ক্ষেত্রে বয়সের কোনও ফারাক নেই। যে কোনও বয়সি মানুষ এর শিকার হতে পারেন। ১৫ টি সিগারেটের থেকেও বেশি ক্ষতি করে একাকিত্ব। এমনকি স্থূলতা ও ব্যায়াম না করার জন্য শরীরে যেসব সমস্যা দানা বাঁধে, তার থেকেও বেশি ক্ষতি করে একাকিত্ব।

তবে, শুধুমাত্র যে উন্নত দেশের মানুষরাই একাকিত্বে ভোগেন, এমনটা মনে করা মোটেও সঠিক নয়।  ডা. মুর্তি জানাচ্ছেন, অনুন্নত দেশেও প্রতি ৪ জন বয়স্ক মানুষের মধ্যে একজন করে একাকিত্বের সমস্যায় ভুগছেন। তাঁর মতে, বয়স্কদের মধ্যে একাকিত্বের সমস্যা ডিমেনশিয়া ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়ায়। যা ধীরে ধীরে সকলকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে দিচ্ছে।


-
ছোটদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারে। ৫ থেকে ১৫ শতাংশ কিশোর কিশোরীরাও একাকিত্বে ভুগছে। আফ্রিকার ১২.৭ শতাংশ কিশোর কিশোরী একাকিত্বে ভোগে। ইউরোপে সেটা ৫.৩ শতাংশ। স্কুলে পড়াকালীন যেসব ছেলেমেয়েরা একাকিত্বে ভোগে, উচ্চশিক্ষায় তাদের পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর ফল দেখা যেতে পারে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও। একাকিত্বে ভোগা কিশোর কিশোরীরা পেশাগত জগতেও সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। তাঁরা নিজের পেশায় সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। তাদের কর্মক্ষমতাও কম হয় বলে মনে করছেন হু–র বিশেষজ্ঞরা।


আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।