নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, পরিমিত মদ্যপানও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আয়ু কমে যাওয়ার পাশাপাশি ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের ঝুঁকিও বাড়ে। সুস্থ জীবনের জন্য মদ্যপান ত্যাগই শ্রেয়।

সীমিত পরিমাণে মদ্যপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, এই ধারণা অনেক দিনের। কেউ কেউ মনে করতেন, রেড ওয়াইনের মতো পানীয় হৃদয়ের জন্য ভালো। কিন্তু, জার্নাল অফ স্টাডিজ অন অ্যালকোহল অ্যান্ড ড্রাগস-এ প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় পূর্বের সব ধারণাকে উল্টে দিয়েছে। এই গবেষণা অনুসারে, সামান্য পরিমাণ মদ্যপানও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং আয়ু কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

মদ্যপানে আয়ু কীভাবে কমে?

প্রধান গবেষক ড. টিম স্টকওয়েলের মতে, সপ্তাহে মাত্র দুই পেগ মদ্যপান করলেও আয়ু ৩ থেকে ৬ দিন পর্যন্ত কমতে পারে। প্রতিদিন একবার মদ্যপান (সপ্তাহে ৭ বার) করলে আয়ু প্রায় আড়াই মাস কমে যেতে পারে। আরও গুরুতরভাবে, সপ্তাহে ৩৫ বার মদ্যপানকারী ব্যক্তির আয়ু দুই বছর পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এই পরিসংখ্যানগুলি মদ্যপানের ঝুঁকি সম্পর্কে স্পষ্ট সতর্কতা দিয়েছে।

মদ্যপানের স্বাস্থ্যগত প্রভাব কী?

মদ্য শরীরের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। এটি ক্যান্সার, লিভারের ক্ষতি এবং হৃদরোগের কারণ হতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মদ্য শরীরে ভেঙে অ্যাসিটালডিহাইড নামক যৌগে পরিণত হয়, যা ডিএনএ-র ক্ষতি করে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। ড. হেলেন ক্রোকারের মতে, মদ্যপান মুখ, গলা, লিভার এবং কোলনে ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়।

WHO-এর পরিসংখ্যান কী বলে?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রতিদিন দুই পাইন্ট বিয়ার পানকারী পুরুষদের কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি ৩৮% বেশি।

মুখ ও গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি ৯৪% এবং লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি ৮৪% বেশি। প্রতিদিন এক পেগ পানকারীদেরও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি ১৭% বেশি।

রেড ওয়াইনের ঝুঁকি কী?

রেড ওয়াইনে থাকা রেসভেরাট্রলের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, এই ধারণাকে নতুন গবেষণা নাকচ করে দিয়েছে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আঙ্গুর, ফল, গ্রিন টি এবং কফিতেও পাওয়া যায়। তাই, মদ্যপানের কোনও স্বাস্থ্যগত উপকারিতা নেই; বরং, এর ক্ষতিই বেশি।

মদ্যপান ছাড়ার চ্যালেঞ্জ:

পুরুষদের মদ্যপান ছাড়া কঠিন হওয়ার কারণ সামাজিক চাপ এবং অভ্যাস, ব্যাখ্যা করেন প্রফেসর রিচার্ড কুক। ২৫% পুরুষ মনে করেন, মদ্যপান না করলে লোকে তাদের অপছন্দ করবে। ২০% পুরুষ স্বীকার করেছেন, সপ্তাহান্তে মদ্যপানের মাধ্যমে অফিসের চাপ থেকে মুক্তি পান।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ কী?

বিশেষজ্ঞরা মদ্যপান সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করার পরামর্শ দেন। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করুন:

  • সপ্তাহে মদ্যপানের দিনের সংখ্যা কমান।
  • কম অ্যালকোহলযুক্ত বা অ্যালকোহলমুক্ত পানীয় বেছে নিন।
  • আপনার মদ্যপানের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন।

মোটকথা, পরিমিত মদ্যপান নিরাপদ, এই ভুল ধারণা ভেঙে দিয়েছে এই গবেষণা। সুস্থ জীবনের জন্য মদ্যপান সম্পূর্ণরূপে পরিহার করাই শ্রেয়। আপনার স্বাস্থ্য রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ নিন!