চিনি খাওয়া বন্ধ করা শরীরের জন্য উপকারী, তবে হঠাৎ বন্ধ করলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা দিতে পারে শরীরে। তাই ধীরে ধীরে অভ্যাস গড়ে তুললে আপনি চিনির ছাড়াই সুস্থ জীবন যাপন করতে পারবেন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ বা ওজন কমাবেন বলে আগেই দুম করে চিনি জাতীয় খাবার খাওয়া বন্ধ করেন, তারপর কার্বোহাইড্রেট, একে একে খাদ্যভ্যাস বদলান। অতিরিক্ত চিনি শরীরের জন্য ক্ষতিকর ঠিকই, তবে একেবারে হঠাৎ করে চিনি খাওয়া বন্ধ করে দিলে শরীরে বেশ কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, বলছেন বিশেষজ্ঞরাও। ঘুমের সমস্যা হতে পারে এমনকি শরীরের শক্তি কমে যেতে পারে।

হঠাৎ চিনি খাওয়া বন্ধ করলে তার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিচে বিস্তারিত :

১। মেজাজের পরিবর্তন

দুম করে চিনি খাওয়া বন্ধ করে দিলে ডোপামিন এবং সেরোটোনিনের মতো হ্যাপি হরমোনের মাত্রা কমে যেতে পারে। ফলে অনেকেরই মেজাজের পরিবর্তন, যেমন খিটখিটে ভাব ও বিরক্তির কারণ হতে পারে।

সেরোটোনিন এবং ডোপামিন উৎপাদনকে সমর্থন করে এমন খাবার যেমন বাদাম, বীজ, ডিম এবং দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে এই ধরনের সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

২। ঘুমের সমস্যা

হঠাৎ চিনি ছাড়লে ঘুম ব্যাহত হতে পারে, কারণ এটি আপনার কর্টিসলের মাত্রা বা স্ট্রেস হরমোনকে প্রভাবিত করে।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘুমানোর আগে স্ক্রিন সরিয়ে রাখুন, তাড়াতাড়ি ঘুমানো এবং তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস, একই সময়ে ঘুমাতে এবং ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন।

৩। অন্ত্রের ক্ষতি

প্রাথমিকভাবে পেট ফাঁপা এবং বদহজমের মতো সমস্যা হতে পারে, কারণ এই সময়ে অন্ত্রের মাইক্রোবায়োটায় পরিবর্তন হয়, অর্থাৎ ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার বদলে অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া স্থানান্তরিত হয়।

৪। মিষ্টির ক্রেভিংস

হঠাৎ যেকোনো অভ্যাস বদল শরীর হঠাৎ করে মেনে নিতে পারেনা। মিষ্টি খাবার খাওয়ার ইচ্ছা তীব্র হতে পারে, এমনকি দুপুর বেলা রাতের ভারী খাবারের পর মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা আরও বাড়তে পারে।

হঠাৎ করে চিনি খাওয়া বন্ধ না করে বরং মিষ্টি ফল, মধু এসবের মতো প্রাকৃতিক মিষ্টি ব্যবহার করুন।

৫। ক্লান্ত বোধ

চিনি ছাড়ার পর আপনার শরীরের শক্তির মাত্রা কমে যেতে পারে, যা গ্লুকোজ হিসেবে তাৎক্ষণিক শক্তি প্রদান করে শরীরে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, শরীরে শক্তির মাত্রা বাড়ানোর জন্য, অবশ্যই একটি স্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। তাতে মিষ্টির বদলে ভালো মানের প্রোটিন, ফ্যাট ও ফাইবার থাকা জরুরি। তবেই আপনার শরীরে শক্তির সরবরাহ অক্ষত থাকে।

৬। মাথাব্যথা

চিনি ছাড়ার পরপরই ডোপামিনের মাত্রা কমে যাওয়ায় মাথাব্যাথা হতে পারে। ভিটামিন বি ও ম্যাগনেসিয়াম জাতীয় খাবার সাহায্য করতে পারে।

মাথাব্যথা নিরাময়ে, হাইড্রেটেড থাকুন এবং পর্যাপ্ত ঘুমানোর চেষ্টা করুন।

৭। ত্বকের সমস্যা

হঠাৎ করে চিনি খাওয়া বন্ধ করে দিলে শরীর নিজেই নিজেকে পরিষ্কার করতে শুরু করে। ফলে তার প্রভাবে ত্বক শুষ্ক ও নিস্তেজ মলিন হয়ে যেতে পারে। কয়েক সপ্তাহ পরে ত্বক পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে।

৮। মনযোগ ব্যাহত হয়

চিনি গ্লুকোজ সরবরাহ করে মস্তিষ্কে, তাই হঠাৎ চিনি বন্ধ করলে ক্লান্ত বোধ, ভুলে যাওয়া বা স্পষ্টভাবে চিন্তা করতে না পারার মতো অনুভূতি হতে পারে।