শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ অনেক সমস্যার মূল। গ্লুটেন, চিনির আধিক্য, ট্রান্স ফ্যাট, এবং পরিশোধিত খাবার আমাদের অজান্তেই শরীরকে স্বাস্থ্য ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেয়। খাদ্য তালিকা থেকে এ সমস্ত খাবার একেবারে বাদ দিন।

শরীরে প্রদাহ এমন একটি শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া, যা সংক্রমণ বা আঘাতের প্রতিকারে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে। কিন্তু এই প্রতিক্রিয়াটি যদি দীর্ঘমেয়াদি বা স্থায়ী হয়, তবে তা শরীরের বিভিন্ন টিস্যু ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। এমনকি এর ফলে ক্যান্সার, হার্ট ডিজিজ, স্ট্রোক ইত্যাদির ঝুঁকি বাড়ে। অনেক সময় আমরা না জেনেই প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে এমন কিছু খাবার গ্রহণ করি, যা এই প্রদাহকে বাড়িয়ে দেয়।

দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের লক্ষণ হিসেবে ক্লান্তি, শরীরের ব্যথা, বিষণ্ণতা বা উদ্বেগ, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল জটিলতা অর্থাৎ ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য ওজন বৃদ্ধি বা ওজন হ্রাস, ঘন ঘন সংক্রমণ ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যেতে পারে। যেগুলি মাসের পর মাস অথবা বছরের পর বছর ধরে হতে থাকলে তা চিন্তার কারণ অবশ্যই। আসুন জেনে নেওয়া যাক আমাদের রোজকার খাদ্যাভাসে অন্তর্ভুক্ত এমন কী কী খাবার আছে যেগুলি প্রদাহের ঝুঁকি বাড়ায়।

১। গমের রুটি

পুরো গমের রুটি অনেকেই স্বাস্থ্যকর বলে মনে করেন। কিন্তু গ্লুটেন সংবেদনশীল ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এটি প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। গবেষণা অনুসারে, গ্লুটেন এবং বিশেষ ধরণের প্রোটিন শরীরে নিম্ন গ্রেডের প্রদাহ সৃষ্টি করে। ফলে হজমতন্ত্রে সমস্যা এবং ইমিউন সিস্টেমকে অতিরিক্ত সক্রিয় করে তোলে।

২। ভাজাভুজি খাবার

ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, পাকোড়া, বা ভাজা মাংস নিয়মিত খেলেও শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন ২০২৩ এর রিপোর্ট অনুসারে, বাণিজ্যিকভাবে ভাজার জন্য ব্যবহৃত তেল, বিশেষ করে যখন এটি পুনরায় ব্যবহার করা হয়, তখন অ্যাডভান্সড গ্লাইকেশন এন্ড প্রোডাক্ট নামে একটি বিশেষ ধরণের যৌগ তৈরি হয়। যা সক্রিয়ভাবে শরীরে প্রদাহ বাড়ায়। যার কারণে আর্থ্রাইটিস এবং মেটাবলিক সিনড্রোম দেখা দেয়। উচ্চ তাপে ভাজা ট্রান্স ফ্যাট তৈরি করে যা হৃদরোগ এবং প্রদাহ বাড়ায়।

৩। দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য

ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্স বা দুধ হজমে অসুবিধে হয় যাদের, তাদের দুগ্ধজাত খাবার প্রদাহ সৃষ্টি করে। এতে শরীরে ফোলাভাব, ত্বকে র‍্যাশ, এবং জয়েন্টে ব্যথা দেখা যায়। পূর্ণ চর্বিযুক্ত দুধে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাট প্রদাহের মাত্রা বাড়াতে পারে।

৪। পরিশোধিত চিনি ও কৃত্রিম মিষ্টি

ক্যান্ডি, প্যাকেটজাত মিষ্টি খাবার, সোডা পানীয় ইত্যাদি রক্তে গ্লুকোজ দ্রুত বাড়িয়ে দেয়, যা ইনফ্ল্যামেটরি রেসপন্স শুরু করে। অতিরিক্ত চিনি এবং আস্পারটেমের মতো কৃত্রিম মিষ্টি অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ভারসাম্য নষ্ট করে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।

৫। পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট 

সাদা ভাত, পরিশোধিত আটার রুটি বা পাউরুটি এসবে ফাইবার বা পুষ্টিগুণ থাকে না বললেই চলে। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট থাকার ফলে শরীরে রক্তচাপ ও ইনসুলিন দ্রুত বাড়ে এবং প্রদাহের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ২০২৪ সালের Journal of Nutrition অনুযায়ী, পরিশোধিত শস্য গোটা শস্যের তুলনায় বেশি প্রদাহ সৃষ্টি করে।

পরামর্শ

* সম্পূর্ণ শস্য (whole grain) যুক্ত খাবার যেমন- ব্রাউন rice, ওটস, কিনোয়া খান। 

* সবুজ শাকসবজি, ফল, বাদাম, মাছ ও অলিভ অয়েল ইত্যাদি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি খাবার খেতে শুরু করুন। 

* খাদ্য তালিকা থেকে দৈনিক শর্করার পরিমাণ কমান এবং প্রাকৃতিক মিষ্টি যেমন- মধু, খেজুর ব্যবহার করুন। 

* তেলতেলে ভাজা খাবারের এড়িয়ে চলুন, বেক, সেদ্ধ বা রোস্ট করে খেতে পারেন 

* ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট হলে ল্যাকটোজ-ফ্রি বা প্ল্যান্ট বেসড মিল্ক যেমন- সয়া, বাদাম, ওট মিল্ক ব্যবহার করতে পারেন।

সারাংশ 

শরীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ অনেক সমস্যার মূল। গ্লুটেন, চিনির আধিক্য, ট্রান্স ফ্যাট, এবং পরিশোধিত খাবার আমাদের অজান্তেই শরীরকে স্বাস্থ্য ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেয়। খাদ্য তালিকা থেকে এ সমস্ত খাবার একেবারে বাদ দিন।