সংক্ষিপ্ত
যৌন ক্ষমতা প্রবর্ধক ওষুধ ভায়াগ্রাই আলঝেইমার্স রোগীদের সহায়ক হয়ে উঠতে পারে।
আলঝেইমার্স এমন একটি স্নায়বিক রোগ যার ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলো মরে যেতে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় রোগীর স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে থাকে। পরবর্তীতে স্থান ও সময় সম্পর্কে বিভ্রান্তি তৈরি হয়, কাছের মানুষদেরও চিনতে অসুবিধা হয়। একপর্যায়ে রোগী নিজের শারীরিক যত্ন নিতেও অক্ষম হয়ে পড়েন এবং অন্যের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। কোনও কোনও মানুষের ক্ষেত্রে বিষণ্নতা ও সন্দেহপ্রবণতার মতো মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।
-
অন্যদিকে, ভায়াগ্রা হল এমন একটি ওষুধ, যা প্রধানত মানুষের, বিশেষ করে পুরুষদের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
-
আলঝেইমার্স রোগের চিকিৎসার উপায় খুঁজে দীর্ঘদিন ধরে চলছে বিভিন্ন গবেষণা। তার মধ্যে নতুন এক গবেষণার ফল আশাবাদী করছে বিশেষজ্ঞদের। গবেষকরা বলছেন, ‘ভায়াগ্রা’ ব্র্যান্ড নামে বিক্রি হওয়া ‘সিলডেনাফিল’ নামের ওষুধ আলঝেইমার্স রোগের প্রকোপ অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে।
আমেরিকার ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক মেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের একদল গবেষক দেখেছেন, সিলডেনাফিল ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে আলঝেইমার্সের জটিলতা বাড়ার ঝুঁকি ৭০ ভাগ কম।
৭২ লাখ স্বাস্থ্যবীমা দাবিকারীর ডেটা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। দেখা গেছে, এই ওষুধ যারা ব্যবহার করেছেন পরবর্তী ছয় বছরে তাদের ক্ষেত্রে আলঝেইমার্সের জটিলতা কম দেখা গেছে। অন্যদিকে সিলডেনাফিল গ্রহণ না করা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ঝুঁকির মাত্রা বেশি।
ডেটাভিত্তিক বিশ্লেষণের কিছু দুর্বলতা থাকলেও গবেষকদের দাবি, এই ফল আলঝেইমার্স রোগের প্রতিষেধক হিসেবে সিলডেনাফিলকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যথেষ্ট। এর কার্যকারিতা আরও নিবিড়ভাবে অনুসন্ধানে ভবিষ্যতে বড় আকারে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ওপরেও জোর দিচ্ছেন তারা।
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের কম্পিউটেশনাল বায়োলজিস্ট ও গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য ফেইশিওং চেং বলেন, করোনারি আর্টারির রোগ, হাইপারটেনশন ও টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে সিলডেনাফিলের ব্যবহার আলঝেইমার্সের ঝুঁকি কমায়। যাদের এসব রোগ নেই তাদের ক্ষেত্রেও ওষুধটি একইরকম কাজ করে।
আলঝেইমার্স নিয়ন্ত্রণে সিলডেনাফিলের কার্যকারিতার পিছনে আলঝেইমার্সের সংগে জড়িত টাউ প্রোটিন ও অ্যামাইলয়েডের সংগে সিলডেনাফিলের সংযোগকে কারণ হিসেবে দেখছেন বিজ্ঞানীরা। আলঝেইমার্সের ক্ষেত্রে সিলডেনাফিল কীভাবে মস্তিষ্কের ক্ষতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়, সেটিও দেখা হয়েছে। আলাদা পরীক্ষায় গবেষকরা দেখেছেন, ওষুধটির প্রয়োগে মস্তিষ্কে নিউরন বৃদ্ধির হার বেড়েছে এবং টাউ-এর মাত্রা কমেছে।
বিষয়টি নিয়ে ভবিষ্যতে আরও গবেষণার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। চেং বলেন, আমরা যান্ত্রিক ট্রায়ালের পরিকল্পনা করছি। এরপর দৈবচয়নভিত্তিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও প্রভাব পরীক্ষা করা হবে। এতে আলঝেইমার্স রোগীদের ওপর সিলডেনাফিলের সুফল সম্বন্ধে আরও নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যাবে।
সিলডেনাফিলের ব্যবহারের স্বাস্থ্যগত ইতিবাচক ফল পাওয়া অবশ্য এবারই প্রথম নয়। এর আগে ক্যানসার ও ম্যালেরিয়ার মতো রোগ নিয়ন্ত্রণে ওষুধটির কার্যকারিতার প্রমাণ মিলেছে। ওষুধটি এতোদিন শুধু পুরুষাঙ্গের উত্থান দীর্ঘায়িত করা এবং পালমোনারি হাইপারটেনশনের চিকিৎসাতেই ব্যবহার করা হয়েছে।