সংক্ষিপ্ত

 

  • বাঙালির দুর্গাপুজোর আয়োজন জোরকদমে শুরু হয়ে গিয়েছে
  • মহালয়া থেকেই শুরু হয়ে যায় বাঙালির পুজো
  • তর্পণের একটি আলাদা তাৎপর্য রয়েছে
  • এইদিনেই পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে জলদান করা হয় 

পুজো প্রায় চলেই এসেছে। ইতিমধ্যেই বাঙালির দুর্গাপুজোর আয়োজন জোরকদমে শুরু হয়ে গিয়েছে। পুজোর ঘোরা শুরু করার জন্য ষষ্ঠী, সপ্তমী-র জন্য অপেক্ষা করেন না কেউই। বরং মহালয়া থেকেই শুরু হয়ে যায় বাঙালির পুজো। তারপর কখন যে সপ্তমী, অষ্টমী কেটে গিয়ে কখন যে দশমী এসে পড়ে সে দিকে খেয়ালই থাকে না কারও। মহালয়ার দিন থেকে পুজো শুরু হলেও এই দিনটির একটি আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। এই দিনেই হয় পিতৃপক্ষের শেষ এবং মাতৃপক্ষের সূচনা। এইদিনেই আমরা পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করি, তাঁদের জলদান করি এবং তাঁদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানিয়ে থাকি। 

হিন্দু পুরাণে তর্পণ-
এই তর্পণের একটি অন্যতম ব্যাখ্যা রয়েছে হিন্দু পুরাণে। হিন্দু পুরাণ অনুসারে আমরা জানতে পারি যে কোন জীবিত ব্যক্তির তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোক বাস করেন। পিতৃলোক হল স্বর্গ ও মর্ত্যের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত একটি স্থান যার দেবতা হলেন যম। তিনিই প্রধানত মৃত ব্যক্তির আত্মাকে মর্ত্য বা পৃথিবী থেকে মৃত্যুর পর পিতৃলোকে নিয়ে যান। তারপর ওই বংশের পরবর্তী কারও মৃত্যু হলে তখন আগেরজন পিতৃলোক ত্যাগ করে স্বর্গে গিয়ে পরমাত্মায় মিশে যান। অন্যান্য হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী সূর্য কন্যারাশিতে প্রবেশ করলেই তবে পিতৃপক্ষের সূচনা হয়। হিন্দুরা বিশ্বাস করে থাকেন, পিতৃপক্ষের সুচনায় তাঁদের পূর্বপুরুষরা পিত্রিলক ত্যাগ করে তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের গৃহে অবস্থান করেন। পরে জলখন সূর্য আবার যথাসময় বৃশ্চিকরাশিতে প্রবেশ করে তখন তারা আবার পিতৃলোকে পুনর্গমন করেন। পূর্বপুরুষরা যেহেতু তাদের গৃহে অবস্থান করেন তাই তর্পণের মাধ্যমে হিন্দুরা পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন । 

রামায়ণের তর্পণ-
হিন্দুধর্ম অনুযায়ী কোনও শুভ কাজ করার প্রারম্ভে প্রয়াত পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করে, তাঁদের প্রনাম জানিয়ে তবেই কাজ শুরু করতে হয়। রাম যখন লঙ্কা বিজয়ের আগে অকালবোধন করে মা দুর্গাকে মর্ত্যে নিয়ে আসেন তখনও তিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করে তবেই পুজোয় বসেন। এই দিনেই প্রয়াত আত্মারা মর্ত্যে আসেন। প্রয়াত আত্মাদের এই মর্ত্যে আগমনকেই 'মহালয়' বলা হয়। সেই থেকেই মহালয়া কথাটার উৎপত্তি। তাই মহালয়কে পিতৃপক্ষের শেষদিন বলা হয়। 

মহাভারতে তর্পণ- 
তর্পণের উল্লেখ আমরা মহাভারতেও পাই। দাতা কর্ণের মৃত্যুর পর তাঁর আত্মা স্বর্গে গেলে সোনা ও মুল্যবান ধাতু খাদ্য হিসাবে দেওয়া হয় তাঁকে। স্বাভাবিক ভাবেই দাতা কর্ণ অবাক হয়ে  দেবরাজ ইন্দ্রকে এর কারন জিজ্ঞাসা করেন। তখন দেবরাজ ইন্দ্র বলেন যে কর্ণ তাঁর সারাজীবনে অনেক দানকর্ম করলেও প্রার্থিত ব্যক্তিদের শুধুমাত্র মুল্যবান ধনরত্নই  দিয়ে গিয়েছেন। তাঁর পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে কখনও খাবার ও জল নিবেদন করেননি। পিতৃপুরুষের প্রতি এই অবহেলার জন্য তাঁকে সোনা ও ধনরত্ন খাদ্য হিসাবে দেওয়া হয়েছে। পরে কর্ণ নিজের ভুল স্বীকার করে নিলে তাঁকে ষোলো দিনের জন্য আবার পৃথিবীতে ফেরত পাঠান ইন্দ্র। পৃথিবীতে ফিরে নিজের পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে খাদ্য ও জল দান করেন কর্ণ। সেই থেকেই ষোলো দিনের এই পর্ব পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত। 

এছাড়াও গরুড় পুরাণে রয়েছে, 'পুত্র ছাড়া মুক্তি নেই'। তাই তর[পনের মাধ্যমে পুত্রের পিতা ও পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করা অন্ন ও জলই তাঁদের মুক্তির উপায় বা মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়।