কোনো মেডিকেল পরীক্ষা ছাড়াই কিডনি সমস্যা ধরতে পারবে নতুন সার্জিকাল মাস্ক। আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির বিজ্ঞানীরা এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। শ্বাসের ধরন বিশ্লেষণ করে রোগ নির্ণয় করবে এই মাস্ক।
কিডনি রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির বিজ্ঞানীর মিলে এক নতুন সার্জিকাল মাস আবিষ্কার করেছেন যা কোনো মেডিক্যাল পরীক্ষা ছাড়াই নির্ণয় করতে পারবে কিডনির অসুখ। যারা নিয়মিত পরীক্ষার সুযোগ পান না বা ভয় পান, তাদের জন্য এটি এক সহজ, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ উপায় হতে পারে।
‘এসিএস সেন্সর’ নামক এক জার্নালে নতুন এই এই গবেষণার খবর প্রকাশিত হয়। ইতালীয় গবেষক কোরাডো ডি নাটালে ও আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির বিজ্ঞানীরা মিলে এক ধরনের সার্জিক্যাল মাস্ক বানিয়েছেন, যা মুখে পড়লেই, রোগীর শ্বাসের ধরন দেখে রোগ নির্ণয় করে দেখাতে পারবে।
মাস্কের পরিকাঠামো
মাস্কটিতে ছোট্ট কয়েকটি রুপোর ইলেক্ট্রোড বসিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সেই ইলেক্ট্রোডগুলিকে পলিমারের আস্তরণে মুড়েছেন। এই পলিমারের উপরে আবার বেশ কয়েকবার পরফাইরিনের স্তর দিয়েছেন।এবার ইলেক্ট্রোড ঠিক মতো তথ্য দিচ্ছে কি না, তার জন্য মাস্কের ওপরে ইলেক্ট্রোড রিডারও বসানো হয়েছে।
কী ভাবে কিডনির রোগ ধরবে এই মাস্ক?
কিডনির অসুখ হলে রোগীর শ্বাসের সঙ্গে অ্যামোনিয়া ও আরও নানা ধরনের গ্যাস ও রাসায়নিকও নির্গত হয়। মাস্কটি সেই সব রাসায়নিকের বিশ্লেষণ করে কিডনির রোগ হয়েছে কি না, রোগ হলে কোন পর্যায়ে রয়েছে অসুখ তা বলে দিতে পারবে।
গবেষক নাটালে ও সহকর্মী বিজ্ঞানীমহল জানিয়েছেন, মাস্কটির আসল কাজ হল ‘মেটাবোলাইট’ চিহ্নিত করা। পাকস্থলীতে খাবার পাচনের সময়ে তা ভেঙে গিয়ে যে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কণাগুলি বার হয়, সেগুলিকেই বলা মেটাবোলাইট। সেগুলি অ্যামাইনো অ্যাসিড, হরমোন, ভিটামিন, পাচিত খাবার বা শরীরে তৈরি কোনও রকম রাসায়নিক হতে পারে। কিডনির রোগ বা এমনই কোনও অসুখ হলে, শরীরে রাসায়নিকের মাত্রা বেড়ে যায়। যার মধ্যে কিডনির রোগ হলে অ্যামোনিয়া, ইথানল, প্রপানল ও অ্যাসিটোনের মতো রাসায়নিক তৈরি হয় শরীরে, যেগুলি শ্বাসের সঙ্গেও বার হয়। নতুন সার্জিক্যাল মাস্কটি এইসব রাসায়নিকগুলিকেই চিহ্নিত করবে। পাশাপাশি আরও কিছু গ্যাসও নির্গত হয় শ্বাসের সঙ্গে, সেগুলিকেও চিনতে পারবে এই মাস্ক।
শতাধিক মানুষকে মাস্কটি পরিয়ে পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, তাদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ ক্ষেত্রেই সঠিক তথ্য দেখিয়েছে মাস্কটি। তাদের মধ্যে এমন অনেকেই ছিলেন যারা নিজের কিডনির রোগ সম্পর্কে নিজে আগে জানতেনই না। মাস্ক ব্যবহার করে রোগ ধরা পড়লে এখন তাদের চিকিৎসাও শুরু করা হয়েছে।
সারাংশ কোনো মেডিকেল পরীক্ষা ছাড়াই কিডনি সমস্যা ধরতে পারবে সার্জিকাল মাস্ক। এমনই এক পদ্ধতি আবিষ্কারের দাবি আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির বিজ্ঞানীদের।


