স্বাস্থ্যের আশ্চর্য উপকার করে পপকর্ন! রোজ খেলে হতে পারে রোগমুক্তিও?
স্বাস্থ্যের আশ্চর্য উপকার করে পপকর্ন! রোজ খেলে হতে পারে রোগমুক্তিও?
- FB
- TW
- Linkdin
স্বাস্থ্যের আশ্চর্য উপকার করে পপকর্ন!
পপকর্ন বলতেই আমাদের সবার আগে মনে আসে একটি নাস্তা। কিন্তু এটি আসলে ভুট্টা। ভুট্টা সরাসরি না খেয়ে আমরা এয়ার পপ পদ্ধতিতে ফোঁটা করে খাই। আজকাল এটি সিনেমা হল, বাস স্ট্যান্ড, সুপার মার্কেট সর্বত্র পাওয়া যায়।
অনেক শিশুর ভুট্টা সম্পর্কে জানা না থাকলেও পপকর্ন তাদের প্রিয়। পপকর্ন সকলের পছন্দের তালিকায় থাকার পেছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক কারণ। এতে রয়েছে আমাদের মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্যকারী হরমোন ডোপামিনকে উদ্দীপিত করার ক্ষমতা। পপকর্ন আমাদের মনকে প্রফুল্ল রাখে।
এটা কি খুব বড় কথা? হ্যাঁ, অবশ্যই। মন ভালো থাকলেই মানসিক চাপ কম থাকে। আর এটাই আমাদেরকে নানান রোগ থেকে রক্ষা করে। আসলে চিপসের মতো নাস্তার তুলনায় পপকর্ন অনেক দিক দিয়েই উত্তম। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
স্বাস্থ্যের আশ্চর্য উপকার করে পপকর্ন!
পপকর্নে যা যা থাকে:
এক কাপ পপকর্নে থাকে ৩০ ক্যালোরি। এতে রয়েছে ০.৫ গ্রাম চর্বি, ১ গ্রাম করে আঁশ এবং প্রোটিন। এছাড়াও থাকে ৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১ মিলিগ্রাম লবণ, ৭০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম। মানুষের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন বি৬ এর ১০% এবং ম্যাঙ্গানিজের ১০% পাওয়া যায় পপকর্ন থেকে। এতে রয়েছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় আঁশ, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ।
স্বাস্থ্য উপকারিতা:
পপকর্ন তৈরি হয় ভুট্টা থেকে, যা একটি সম্পূর্ণ শস্য। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আমরা যেসব ফলমূল এবং শাকসবজি খাই, তার চেয়েও বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে পপকর্নে।
অনেকে শস্যদানার গ্লুটেন হজম করতে পারেন না। তারাও পপকর্ন খেতে পারেন। এটি সহজেই হজম হয়। এমনকি সিলিয়াক রোগীরাও পপকর্ন খেতে পারেন।
যারা ওজন কমাতে চান, তাদের জন্য পপকর্ন একটি আদর্শ নাস্তা। কারণ এতে ক্যালোরির পরিমাণ খুবই কম।
স্বাস্থ্যের আশ্চর্য উপকার করে পপকর্ন!
হাড়ের সুস্থতা এবং ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে ম্যাঙ্গানিজ, যা পপকর্নে প্রচুর পরিমাণে থাকে। এটি বিপাক ক্রিয়ায় সহায়তা করে।
পপকর্নে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে। তাই এটি হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অন্ত্রের কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি পায় পপকর্ন খেলে।
পপকর্নে উপস্থিত দ্রবণীয় আঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
আমাদের দেহের পরিপাকতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে পপকর্ন। এতে থাকা প্রিবায়োটিক ফাইবার উপকারী অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য হিসেবে কাজ করে।
এমনকি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে পপকর্ন। এতে থাকা আঁশ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
পপকর্ন একটি সাধারণ নাস্তা হলেও এতে ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতাও রয়েছে। এতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যাল ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
স্বাস্থ্যের আশ্চর্য উপকার করে পপকর্ন!
এই সব স্বাস্থ্য উপকারিতা ছাড়াও পপকর্নের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ডোপামিন নিঃসরণে এর ভূমিকা। পপকর্ন এবং আমাদের শরীরে উৎপন্ন হওয়া আনন্দের হরমোন ডোপামিনের মধ্যে রয়েছে গভীর সম্পর্ক। আমরা যখনই পপকর্ন খাই, তখন আনন্দ অনুভব করি, এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।
আমরা যখন সিনেমা হলে সিনেমা দেখি, তখন পপকর্ন খাই। এর স্বাদ এবং গন্ধ আমাদের মনকে প্রফুল্ল করে তোলে। পপকর্নে থাকা লবণ, মাখন অথবা পনির ডোপামিন নিঃসরণে উৎসাহিত করে। পপকর্নের মুচমুচে ভাব এবং স্বাদ আমাদের তৃপ্তি প্রদান করে এবং ডোপামিন নিঃসরণে সাহায্য করে।
পপকর্নে থাকা কিছু উপাদান ডোপামিন নিঃসরণ বৃদ্ধি করে। তাই আমরা যখন পপকর্ন খাই, তখন আনন্দ অনুভব করি। পপকর্নে থাকা ফিনাইলেথিলামাইন (PEA) স্বাভাবিকভাবেই মেজাজ উন্নত করে। একাকীত্ব এবং মানসিক চাপের সময় ডোপামিন নিঃসরণ বৃদ্ধি করে। পপকর্নে থাকা টাইরোসিন হলো এক ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড যা মস্তিষ্কে ডোপামিনে রূপান্তরিত হয়। আরেকটি অ্যামিনো অ্যাসিড ট্রিপটোফ্যান সেরোটোনিনে রূপান্তরিত হয় যা আমাদের মনকে প্রফুল্ল রাখে।
স্বাস্থ্যের আশ্চর্য উপকার করে পপকর্ন!
কোন ধরনের পপকর্ন স্বাস্থ্যকর?
ঘরে চুলায় এয়ার-পপ পদ্ধতিতে পপকর্ন তৈরি করা যেতে পারে। মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করেও তৈরি করা যায়। এয়ার-পপ পদ্ধতিতে তৈরি পপকর্ন সবচেয়ে ভালো। কম লবণ অথবা লবণ ছাড়া পপকর্ন স্বাস্থ্যকর। সম্পূর্ণ শস্য অথবা জৈব ভুট্টা ব্যবহার করা উচিত। স্বাদের জন্য বিভিন্ন মশলা ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সব কিছুরই একটা সীমা থাকে। দিনে ১-২ কাপের বেশি পপকর্ন খাওয়া উচিত নয়।