বাড়িতে নাড়ু বানানোর পর আমরা নারকেলের মালই ফেলে দিই কিন্তু সেটা না ফেলে দিয়ে আমরা গাছ লাগানো সখ থাকলে অতি সহজেই আমরা বাগানে গাছ লাগাতে পারি।

নারকেলের খোসা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়, যেমন বাটি এবং বাসন। মনে করা হয় যে অব্যবহৃত খোসা বাইরের চুলার আগুনের জন্য ভালো দাহ্য পদার্থ হিসেবে কাজ করে। আগে, এই নারকেলের খোসা সাধারণত ফেলে দেওয়া হত, কিন্তু আজকাল এগুলোর চাহিদা প্রচুর এবং অনেক পণ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল হয়ে উঠেছে। আজকের সময়ে হস্তশিল্প এবং রান্নার শিল্পে অনন্য শিল্পকর্ম তৈরিতে এই খোসা সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। নারকেলের খোসার কারুশিল্প ব্যবহারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, এগুলি নিরাপদে লাঠি প্রতিরোধী প্রলেপযুক্ত রান্নার সরঞ্জামের সাথে ব্যবহার করা যেতে পারে।

অন্য দিকে নারকেল ছাড়ানোর পরে যে ছোবড়া বের হত, সেগুলি আগেকার দিনে ব্যবহার করা হতো ধুনো জ্বালানোর জন্য। এক কালে সন্ধ্যে দেওয়া ধুনো জ্বালানোর রীতি ছিল বাংলার ঘরে ঘরে। তবে এখনও চাইলে ওই নারকেল ছোবড়া ফেলে না দিয়ে কাজে লাগানো যেতে পারে। বিশেষ করে বাড়িতে গাছপালা রয়েছে যাঁদের, বাগান করতে যাঁরা ভালবাসেন, তাঁরা নারকেল ছোবড়া দিয়ে তাঁদের সাজানো বাগানকে আরও তরতাজা করে তুলতে পারেন।

কী ভাবে নারকেল ছোবড়া ব্যবহার করবেন?

* কোকোপিট বা কোকোডাস্ট তৈরি করে। নারকেলের ছোবড়ার গুঁড়ো বা কোকোপিট হলো মাটির বিকল্প। কোকোপিট তার ওজনের তুলনায় ৮-১০ গুণ পর্যন্ত জল ধরে রাখতে পারে। ফলে গাছে ধীরে ধীরে জল শোষিত হয় এবং ঘন ঘন জল দেওয়ার প্রয়োজন হয় না, ছাদে যাঁরা টবে গাছ করেন, তাঁদের জন্য বিশেষ উপযোগী। এছাড়া কোকোপিট খুব হালকা হওয়ায় এর ভেতরে সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে।

* জৈব সার বা হিউমাস তৈরি করা হয়। নারকেলের ছোবড়া পচিয়ে জৈব সার বা হিউমাস তৈরি করা যায়। কারণ, ছোবড়ার তুষে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় নানা পুষ্টি উপাদান, বিশেষ করে পটাশিয়াম থাকে। পচানোর পরে এটি মাটিতে মিশে গাছকে পুষ্টি সরবরাহ করে। এ ছাড়া মাটিতে যে উপকারী মাইক্রোবিয়োম থাকে, তাকেও সক্রিয় রাখে এই সার।

* মালচিং হিসেবে ব্যবহার করা হয়।মালচিং হল মাটির জলধারণ ক্ষমতা বজায় রাখার প্রক্রিয়া। প্রবল গ্রীষ্মে বা শীতে যখন মাটির আর্দ্রতা নষ্ট হয়ে যায়, তখন মালচিংয়ের মাধ্যমে সেই আর্দ্রতা ধরে রাখার ব্যবস্থা করা যায়। নারকেলের ছোবড়া ছিঁড়ে মাটিতে জালের মতো করে বিছিয়ে দিলে মাটির স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় থাকে। পাশাপাশি, আগাছাও জন্মায় না।

* টবে বা প্ল্যান্টারে জল নিকাশের ব্যবস্থা না রাখলে গাছের শিকড় পচে গিয়ে গাছ নষ্ট হতে পারে, অনেকেই তার জন্য টবের মাটির নীচে বালি বা পাথর দিয়ে কিছুটা স্তর তৈরি করেন। তার বদলে ছোবড়ার টুকরো রেখে দিলে জল সহজেই বেরিয়ে যেতে পারে। মাটি নষ্ট হয় না।

* নারকেলের ছোবড়ার আঁশ থেকে কয়ার পট তৈরি করা যায়। যা বীজ থেকে চারা গাছ বেরোতে সাহায্য করে, এই টবে চারা লাগানোর পর তা সরাসরি মাটি বা বড় টবে বসিয়ে দেওয়া যায়। টবটি সময়ের সাথে সাথে মাটিতে মিশে জৈব সার হিসেবে কাজ করে, যা গাছের শিকড়কে কোনও ভাবে নষ্ট হতে দেয় না।