সব বয়সের মানুষই এখন সেলফি তুলে নিজেদের জীবনের মুহূর্তগুলি তুলে ধরেন। তবে মনোবিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন যে, কেন কিছু মানুষ অন্যদের চেয়ে বেশি সেলফি তোলেন এবং এই অভ্যাস তাদের মনের গড়ন বা ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে কী ইঙ্গিত দেয়।
সেলফি বেশি তোলেন মূলত নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বিভিন্ন বয়সের মানুষ।তবে মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন এই অভ্যাস ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন, যা আত্ম-সম্মান বৃদ্ধি, পরিচয় প্রকাশ, এমনকি মৃত্যুভয় বা নিরাপত্তাহীনতা মোকাবিলার উপায় হতে পারে; এটি নার্সিসিজম, সামাজিক সংযোগ, এবং আত্ম-ধারণার মতো বিষয়গুলির সাথে সম্পর্কিত, যেখানে অতিরিক্ত সেলফি তোলা কখনও কখনও মানসিক সমস্যার লক্ষণও হতে পারে।
** সেলফি বেশি তোলেন কারা?
* তরুণ প্রজন্ম: মূলত কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীরা সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে বেশি সেলফি তোলেন, কারণ এটি তাদের পরিচিতি ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করে।
* আত্মবিশ্বাসী ও আত্ম-সচেতন ব্যক্তি: যারা নিজেদের ভালো দিকগুলো তুলে ধরতে চান, তাদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
* নারীরা: গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা অনেক সময় সাদা-কালো সেলফি পোস্ট করেন, যা তাদের ত্বককে মসৃণ দেখায় এবং নিজেদের শিল্পবস্তু হিসেবে উপস্থাপন করে।
** সেলফি তোলার অভ্যাস কি ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন?
হ্যাঁ, মনোবিজ্ঞানীদের মতে সেলফি তোলার অভ্যাস অনেক কিছু প্রকাশ করে:
* আত্ম-ধারণা ও আত্ম-সম্মান : সেলফির মাধ্যমে মানুষ নিজের পছন্দসই রূপ প্রকাশ করতে পারে এবং লাইক-কমেন্টের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস ও মানসিক তৃপ্তি খোঁজে।
* নার্সিসিজম : অতিরিক্ত সেলফি তোলা অনেক সময় আত্মপ্রেম বা নার্সিসিজমের লক্ষণ হতে পারে, যেখানে ব্যক্তি নিজেকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়।
* মৃত্যুভয় : কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত সেলফি তোলা মানুষের মনে থাকা গভীর মৃত্যুভয় থেকে আসে, যেখানে তারা নিজেদের অস্তিত্বের প্রমাণ রাখতে চায়।
* পরিচয় নির্মাণ : এটি নিজেকে বিশ্বের কাছে উপস্থাপন করার, নিজের ভাবমূর্তি তৈরি করার এবং অন্যদের সাথে সংযোগ স্থাপনের একটি মাধ্যম।
** সামাজিক সংযোগ:** সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে সেলফি একটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম, যা অন্যদের সাথে মুহূর্ত শেয়ার করতে সাহায্য করে।
** মনোবিজ্ঞান কী বলছে?
নিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষা: সেলফি তোলার মাধ্যমে ব্যক্তি তার নিজস্ব একটি নিখুঁত প্রতিচ্ছবি তৈরি ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, যা বাস্তব জীবনে সম্ভব হয় না।
মানসিক স্বাস্থ্য: অতিরিক্ত সেলফি তোলা যদি আসক্তিতে পরিণত হয়, তবে তা আত্মমর্যাদার অভাব, উদ্বেগ বা বিষণ্নতা এর কারণ হতে পারে, কারণ এটি বাহ্যিক স্বীকৃতির উপর অতি নির্ভরশীলতা তৈরি করে।
ডার্ক ট্রায়াড: কিছু গবেষণায় সেলফি তোলার অভ্যাসের সঙ্গে নার্সিসিজম, ম্যাকিয়াভেলিয়ানিজম এবং সাইকোপ্যাথি -এর মতো ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলোর সম্পর্ক পাওয়া গেছে।
সংক্ষেপে, সেলফি তোলা একটি বহুমুখী অভ্যাস যা ব্যক্তির আত্ম-উপলব্ধি, আত্মমর্যাদা এবং সামাজিক যোগাযোগের চাহিদার প্রতিফলন, তবে এর অতিরিক্ততা মানসিক সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে।


