সংক্ষিপ্ত

এক সময় দৈনিক তিন টাকা মজুরি পেতেন। কিন্তু তার নিষ্ঠার সঙ্গে, তিনি ৮০০ কোটি টাকার টার্নওভারে তার সংস্থাকে নিয়ে গেছেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক বাংলার এই ফার্ম কিভাবে এই পর্যায়ে পৌঁছালো।

 

আপনি যদি জীবনে কিছু অর্জন করতে চান, তবে আপনি বাংলার নারায়ণ মজুমদারের থেকে অনেক কিছু শিখতে পারেন। নারায়ণ মজুমদার এক সময় দৈনিক তিন টাকা মজুরি পেতেন। কিন্তু তার নিষ্ঠার সঙ্গে, তিনি ৮০০ কোটি টাকার টার্নওভারে তার সংস্থাকে নিয়ে গেছেন। তিনি আর কেউ নয় বাংলার রেড কাউ ডেয়ারি ফার্মের কর্ণধার নারায়ণ মজুমদার।

দৈনিক ৩ টাকা থেকে ৮০০ কোটি টাকার টার্নওভার অতটাও সহজ ছিল না এই যাত্রাপথ। এই জায়গায় পৌঁছতে তাকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। কিন্তু তিনি তার দৃঢ় অভিপ্রায়ে তা ঘটিয়েছেন, যা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো। চলুন জেনে নেওয়া যাক বাংলার এই ফার্ম কিভাবে এই পর্যায়ে পৌঁছালো।

দুধ বিক্রি করে তিন টাকা আয় করতেন

নারায়ণ মজুমদারের বয়স যখন ১৭ বছর, তখন তিনি তার পড়াশোনার খরচ মেটাতে দুধ বিক্রি করতেন। হরিয়ানার কারনালের ন্যাশনাল ডেইরি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাসে একটি বুথে দুধ বিক্রি করে প্রতিদিন তিন টাকা আয় করতেন তিনি। ২২ বছর সংগ্রামের পর তিনি নিজের কোম্পানির ভিত্তি স্থাপন করেন।

দুগ্ধ সংস্থার জন্য দুধ সংগ্রহ করতে তিনি হাওড়ায় সাইকেলে দ্বারে দ্বারে যেতেন। তার কঠোর পরিশ্রম এবং কঠোর সংগ্রামের ভিত্তিতে, তিনি একটি ডেইরি স্থাপন করেছিলেন যা পূর্ব ভারতের অন্যতম বৃহত্তম ডেইরি হিসাবে পরিণত হয়েছে। আজ রেড কাউ ডেইরি পূর্ব ভারতের একটি সুপরিচিত ব্র্যান্ড। রেড কাউ ডেইরি সম্পর্কে কথা বললে, দুধ ছাড়াও, এটি দই, ঘি, পনির এবং রসগুল্লাও বিক্রি করে, আজ তাদের কোম্পানির বার্ষিক টার্নওভার ৮০০ কোটিরও বেশি।

নারায়ণ মজুমদারের শৈশব কেমন ছিল?

নারায়ণ মজুমদারের জন্ম ১৯৫৮ সালের ২৫ জুলাই নদীয়া জেলায়। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুধুমাত্র স্থানীয় স্কুলেই হয়েছিল। তিনি ১৯৭৫ সালে এনডিআরআই, কর্নাল থেকে ডেইরি টেকনোলজিতে বিএসসি করেন। তিনি তার কোর্স ফি প্রদানের জন্য তার পরিবারের সদস্যদের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর করেননি। পড়াশুনার খরচ মেটাতে ভোর ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত দুধ বিক্রি করতেন। তিনি বাংলা সরকারের কাছ থেকে ১০০ টাকা বৃত্তিও পেতে শুরু করেন। এ ছাড়া বাবা তাকে প্রতি মাসে ১০০ টাকা পাঠাতেন।

প্রথম কাজ কোথায়?

১৯৭৯ সালে কোর্স শেষ করার পর, নারায়ণ মজুমদার কলকাতার কোয়ালিটি আইসক্রিমে ডেইরি রসায়নবিদ হিসেবে প্রথম চাকরি নেন। তিন মাসের মধ্যে, তিনি এই চাকরি ছেড়ে শিলিগুড়িতে হিমালয়ান কো-অপারেটিভে যোগ দেন। এরপর ১৯৮১ সালে মাদার ডেইরিতে যোগ দেন। এখান থেকে তিনি ১৯৮৫ সালে বাহরাইনে যান এবং ডেনিশ ডেইরি ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনে চাকরি পান। কিন্তু সেখানে তার পছন্দ না হওয়ায় তিনি ভারতে ফিরে এসে আবার মাদার ডেয়ারিতে যোগ দেন।

নিজের কোম্পানি শুরু-

নারায়ণ মজুমদার ১৯৯৯ সালে তার নিজস্ব চিলিং প্ল্যান্ট স্থাপন করেন। এর সঙ্গে, ২০০০ সালে, তিনি তার মালিকানা সংস্থাকে অংশীদারি সংস্থায় রূপান্তর করেন। ২০০২ সালে, মজুমদার রেড কাউ ডেইরি নামে একটি কোম্পানি শুরু করেন। এরপর ২০০৭ সালে কলকাতা ডেইরির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন নারায়ণ। বর্তমানে রেড কাউ ডেইরিতে তিনটি উৎপাদন কারখানা রয়েছে। তার কোম্পানিতে এক হাজারের বেশি লোক কাজ করে।