কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে কণ্ঠস্বর নকল করে প্রতারণার ফাঁদ পাতছে সাইবার অপরাধীরা। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের অডিও ক্লিপ থেকে কণ্ঠস্বর ক্লোন করে প্রিয়জনের ছদ্মবেশে টাকা চাওয়া হচ্ছে। প্রবীণ নাগরিক ও গৃহবধূরা বেশি শিকার হচ্ছেন এই প্রতারণার।

ডিজিটাল দুনিয়ার অগ্রগতির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার প্রতারণাও, বদলাচ্ছে প্রতারণার কৌশল। এত দিন ব্যাঙ্কের আধিকারিক বা সরকারি দফতরের উচ্চপদস্থ কর্তার পরিচয় দিয়ে প্রতারণা চলছিল। কিন্তু এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাত ধরে আপনার বা আপনার ঘনিষ্ঠ কারও কণ্ঠস্বর নকল করে প্রতারকরা ফাঁদ পাতছে, যা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা প্রায় অসম্ভব। এই ভয়ংকর সাইবার প্রতারণার নাম ‘এআই ভয়েস ক্লোনিং’।

ভয়েস ক্লোনিং কী?

এআই ভয়েস ক্লোনিং হল এমন এক প্রযুক্তি, যেখানে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের একটা অডিও ক্লিপের ভিত্তিতে কোনও ব্যক্তির কণ্ঠস্বর, বাচনভঙ্গি, উচ্চারণ, এমনকি শ্বাস নেওয়ার ধরনও হুবহু নকল করা সম্ভব। প্রতারকেরা হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব থেকে সহজেই অডিও ক্লিপ ও পরিচয় সংগ্রহ করছে। এরপর সেই কণ্ঠস্বর একটি এআই দ্বারা ‘ক্লোন’ করে প্রতারণার ফাঁদ পাতছে।

এই ক্লোন করা কণ্ঠস্বর এতটাই নিখুঁত যে, শুনে বোঝার উপায় থাকে না যে এটি আসল না নকল। কেবল তিন সেকেন্ডের অডিও ক্লিপ থেকেই নকল করা সম্ভব বলেই সতর্ক করেছে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা বিভাগ।

কীভাবে চলছে প্রতারণা?

প্রতারকেরা প্রথমে হোয়াট্‌সঅ্যাপের ভয়েস মেসেজ, নানা রকম রিল, ফেসবুকে আপলোড করা ভিডিয়ো ক্লিপ বা ইনস্টাগ্রাম অথবা ফোন কল থেকে পরিচিত বা ঘনিষ্ঠ কারও কণ্ঠস্বর সংগ্রহ করে ক্লোন করে নেয়। তারপর আপনারই প্রিয়জন বা আত্মীয়স্বজনকে ফোন করে অবিকল আপনার গলায় বা আপনার কাছের কোনও মানুষের গলায় কথা বলে বিপদে পড়েছে বলে টাকা পাঠানোর অনুরোধ করে। ফলে আবেগের চাপে পড়ে অনেকে না ভেবেই টাকা পাঠিয়ে দেন। বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিক ও গৃহবধূরা এই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বেশি, কারণ তাঁরা সহজেই নকল কণ্ঠস্বর বিশ্বাস করে ফেলছেন।

এই প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায় কী?

১) যদি আত্মীয় বা বন্ধুদের নাম করে ঘন ঘন ফোন আসে এবং অস্বাভাবিক কথাবার্তা বলে, তা হলে সতর্ক হতে হবে। এছাড়াও ফোন করে বারে বারে টাকা পাঠানোর কথা বলে, তা হলেও আগে যাচাই করে মিন ব্যক্তির পরিচিতি এবং পরিস্থিতি।

২) পরিচিত কারও গলায় ফোন এলে ও সন্দেহজনক কথাবার্তা বললে সাবধান হবেন। সরাসরি টাকা পাঠানোর আগে এক বার ভিডিয়ো কল করে যাচাই করে নেবেন যে, তিনিই ফোনটি করেছিলেন কি না। হয়তো আপনার পরিচিত সেই ব্যক্তি এমন ভাবে কথাই বলেন না। তাই আবেগে ভাসার আগে সাবধান হতে হবে।

৩) AI ক্লোন করা কণ্ঠস্বর অনেক সময় কিছুটা যান্ত্রিক শোনাতে পারে। এছাড়াও নিশিরভাগ সময় প্রতারকরা সংক্ষিপ্ত ভয়েস ক্লিপ পাঁঠায় কথা বলতে, যাতে ধরা না পড়ে। সেক্ষেত্রে একাধিকবার প্রশ্ন করে আগে নিশ্চিত হোন যে সে আপনার পরিচিত। প্রতারক ভয়েস ক্লোন করে থাকলে আপনার সব প্রশ্নের উত্তর AI দিতে পারবে না। প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া বা ফোন কেটে দেওয়ার চেষ্টা করবে ধরা পড়ার ভয়ে।

৪) নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর, এটিএম কার্ড নম্বর, ইউপিআই পিন, ওটিপি এবং পাসওয়ার্ড - এই ধরনের কোনও তথ্য শেয়ার করবেন না কারোর সাথে। যদি পরিচিত কণ্ঠস্বর এই সব তথ্য চায়, তা হলে ভিডিয়ো কল করে নিশ্চিত হোন।

৫) নিজের গলার আওয়াজ বা ভয়েস রেকর্ড সমাজমাধ্যমে আপলোড করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। কারণ, প্রতারকেরা এই ধরনের অডিয়ো ক্লিপ সংগ্রহ করেই ভয়েস ক্লোনিং করে।

৬) যদি আপনি কোনও এআই ভয়েস ক্লোনিং প্রতারণার শিকার হন বা এমন কোনও সন্দেহজনক কল পান, তা হলে অবিলম্বে সাইবার ক্রাইম পুলিশে রিপোর্ট করুন।

সারাংশ অচেনা নম্বরে ফোন আসে, তারপর হঠাৎ পরিচিত কণ্ঠস্বর বিপদে পড়ে টাকা চাওয়ার অনুরোধ করবে। আপনিও আবেগে ভেসে টাকা পাঠিয়ে দিয়ে তারপর বুঝতে পারবেন পুরোটাই স্ক্যাম ছিল। এভাবেই AI-এর সুযোগ নিয়েই ভয়েস ক্লোন করে প্রতারণা করছে সাইবার অপরাধীরা। সতর্ক থাকুন।