বিদেশ থেকে আগতদের মধ্যে মিলল ম্যালেরিয়ার নয়া পরজীবী, উদ্বেগে স্বাস্থ্য বিভাগ
ম্যালেরিয়া এতদিন ছিল মূলত ঘরোয়া একটি সংক্রামক সমস্যা, যার বিস্তার রাজ্য বা দেশের সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ, বিশেষ করে নদীয়া জেলার ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এক ভিন্ন চিত্র—বিদেশ ফেরত কর্মীদের মধ্যে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ ধরা পড়ছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, কঙ্গো এবং আরব দেশের মতো ম্যালেরিয়া প্রবণ অঞ্চলে কাজ করে দেশে ফেরা ব্যক্তিদের শরীরে মিলছে ম্যালেরিয়ার ভাইরাস।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের দেশে মূলত ম্যালেরিয়ার দু’ধরনের পরজীবী রয়েছে। তা হল প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স ও প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিফেরাম। এর মধ্যে প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্সের কারণেই বাংলা তথা সমগ্র ভারতের অধিকাংশ মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। তবে এই বিদেশফেরত মাধ্যমে বাংলায় ম্যালেরিয়ার নতুন কিংবা আরও শক্তিশালী পরজীবীর আগমন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ‘WHO’-র দাবি, বিশ্বব্যাপী ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর প্রায় ৯৪ শতাংশই আফ্রিকায় ঘটে। আফ্রিকায় ম্যালেরিয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী পরজীবী হল প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম। মনে করা হয়, এই পরজীবীর জন্মই হয়েছে আফ্রিকায়। দশ হাজার বছর আগে গরিলাদের থেকে মানুষের দেহে এটি সংক্রমিত হয়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে তা ছড়িয়ে পড়ে। আফ্রিকার অনুকূল আবহাওয়া প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরামকে অন্যান্য দেশের তুলনায় আরও বেশি শক্তিশালী করে রেখেছে। এছাড়াও, সেখানে ম্যালেরিয়ার আরও অন্যান্য পরজীবী রয়েছে।
নদীয়া জেলার পরিস্থিতি
চলতি বছরে নদীয়া জেলায় ৭০ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৫০% রোগী রাজ্যের বাইরে থেকে এসেছেন, যার মধ্যে প্রায় ৮-১০ জনের ট্রাভেল হিস্ট্রিতে রয়েছে আফ্রিকা ও আরব দেশ। রাজ্যে ম্যালেরিয়ার নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিষয়টি নজরে আসার পর থেকেই তৎপর হয়েছে নদীয়া জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর। আলোচনায়ও বসা হয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে।
নদীয়া জেলার সহ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পরাশর পোদ্দার বলেন, "ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে, আমাদের কাছে ম্যালেরিয়ার কেস আসছে। আমরা অতিসত্বর ব্যবস্থা নিচ্ছি"।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং পাবলিক হেলথ অ্যান্ড কমিউনিকেবল ডিজিজ বিভাগের আধিকারিক পৌলমী ঘোষ জানান, "রোগাক্রান্তদের চিনতে ম্যালেরিয়ার টেস্টে গতি আনা হয়েছে। ফলে দ্রুত রিপোর্ট আসছে। রিপোর্ট পজেটিভ এলেই আমরা চিকিৎসা শুরু করছি"।