৩৫ বছর বয়সের পর গর্ভধারণের ঝুঁকি, কারণ ও প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। গর্ভাবস্থার জটিলতা এড়াতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ও নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ জরুরি।

প্রতি বছর ১১ এপ্রিল ভারতীয় 'জাতীয় নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস' পালন করা হয়, যার উদ্দেশ্য দেশে মায়েদের স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো। এর মধ্যে প্রায়ই অনেক মহিলার মনে প্রশ্ন ওঠে যে ৩৫ বছর বয়সের পর গর্ভধারণ করা কি কঠিন হয়? এ ক্ষেত্রে ফারিদাবাদে অবস্থিত ক্লাউডনাইন হাসপাতালের গাইনোকোলজিস্ট ডঃ শৈলী শর্মা বলছেন যে ৩৫ বছর বয়সের পরে গর্ভধারণে কি অসুবিধা হয়, ৩৫ এর পর নিরাপদ গর্ভধারণের জন্য কি করা উচিত এবং গর্ভধারণের জন্য সবচেয়ে আদর্শ বয়স কী?

৩৫ এর পর গর্ভধারণের ঝুঁকি: মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হ্রাস পায়। ৩০ বছর বয়সের পর এই ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে, এবং ৩৫-এর পর এর দ্রুত হ্রাস ঘটে। এর মূল কারণ হচ্ছে ডিম্বাণুর সংখ্যা এবং গুণমানের হ্রাস। জন্মের সময় মহিলাদের ডিম্বাশয়ে প্রায় ১ থেকে ২ মিলিয়ন ডিম্বাণু থাকে, যা বয়স বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কমতে থাকে। ৩৫ এর পর ডিম্বাণুর সংখ্যা এবং গুণমানের হ্রাসের কারণে গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে।

৩৫ বছর বয়সের পর গর্ভধারণ করলে কিছু ঝুঁকি বাড়তে পারে: গর্ভপাতের ঝুঁকি: এই বয়সে গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়ে। গঠনগত অস্বাভাবিকতা: যেমন ডাউন সিন্ড্রোমের ঝুঁকি বেশি থাকে। গর্ভাবস্থার জটিলতা: উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভকালীন ডায়বেটিস, এবং প্রি-এক্লেম্পসিয়ার মতো পরিস্থিতির ঝুঁকি বাড়ে। সিজারিয়ানের সম্ভাবনা: এই বয়সে স্বাভাবিক প্রসবের তুলনায় সিজারিয়ানের সম্ভাবনা বেশি থাকে।

গর্ভধারণের আদর্শ বয়স: বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে, 20 থেকে 30 বছর বয়সের মধ্যে গর্ভধারণের জন্য আদর্শ বিবেচনা করা হয়। এই সময়কালীন মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতা সবচেয়ে ভালো হয় এবং গর্ভাবস্থার সাথে সম্পর্কিত জটিলতার ঝুঁকি কম থাকে। তবে, আজকাল ক্যারিয়ার, শিক্ষা এবং অন্যান্য কারণে মহিলারা বিএস বয়সে মাতৃত্ব পরিকল্পনা করতে চাইছেন, যা সম্পূর্ণ সম্ভব, যদি তারা তাদের স্বাস্থ্যের এবং জীবনযাত্রার প্রতি মনোযোগ দেন।

৩৫-এর পরে নিরাপদ গর্ভধারণের জন্য পরামর্শ: পূর্ব-গর্ভধারণ পরীক্ষা: গর্ভধারণের আগে একটি সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে, যাতে থাইরয়েড, ডায়াবেটিস এবং রক্তচাপ পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত থাকে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা: ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খান, নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন।

ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ: গর্ভধারণের আগে এবং সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করুন, যাতে শিশুর ন্যূরাল টিউব ডিফেক্টের ঝুঁকি কমে।

নিয়মিত চিকিৎসা পরামর্শ: গর্ভাবস্থার সময় নিয়মিতভাবে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলি করান।

ধূমপান, মদ ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য থেকে দূরে থাকুন, কারণ এগুলি প্রজনন ক্ষমতা ও ভ্রুণের উন্নয়নের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ৩৫ বছর বয়সের পরে গর্ভধারণ করা সম্ভব, কিন্তু এর জন্য বিশেষ সতর্কতা ও পরিকল্পনার প্রয়োজন। সঠিক তথ্য, সময়মতো চিকিৎসা পরামর্শ এবং সুস্থ জীবনধারা অনুসরণ করে মহিলারা এই বয়সেও নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা উপভোগ করতে পারেন।