পুষ্টিবিদেরা বলছেন নিয়মিত খাদ্যতালিকায় ৭টি ফল অদলবদল করে রাখলে তার সুফল পাওয়া যাবে দিনভর। আসুন জেনে নেওয়া যাক কী কী ফল খাবেন প্রাতঃরাশে
বাংলায় কথা আছে - সকালে রাজার মতো, দুপুরে প্রজার মতো ও রাতে ভিখুকের মতো খেতে হয়। সুতরাং আপনি সকালের খাবারের ওপর আপনার সারাদিনের পুষ্টির চাহিদা নির্ভর করে। আপনার সারা দিনের জন্য টোন সেট করে, আপনার শরীরের সর্বোত্তমভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি এবং পুষ্টি সরবরাহ করে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন নিয়মিত খাদ্যতালিকায় ৭টি ফল অদলবদল করে রাখলে তার সুফল পাওয়া যাবে দিনভর।
পুষ্টিকর প্রাতঃরাশের গুরুত্ব :
একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ প্রাতঃরাশ রাতের পর আপনার বিপাক ক্রিয়া ভালোভাবে শুরু করতে পারে। রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল করতে এবং দিনের শেষে বার বার ও অতিরিক্ত খিদে রোধ করার জন্য জরুরি। একটি সুষম ভারসাম্যপূর্ণ প্রাতঃরাশ একটি চমৎকার উপায় হতে পারে যাতে আপনি ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টের একটি ভাল মিশ্রণ পান- প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং চর্বি-সহ প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ।
কোন কোন ফলগুলি প্রাতঃরাশে রাখতে পারবেন?
১। কলা
পুষ্টিবিদেরা বলছেন কলা হল প্রাতরাশের আদর্শ ফল। এতে আয়রন, পটাশিয়ামের মতো জরুরি খনিজ এবং ভিটামিন এ, বি৬, সি এবং বি কমপ্লেক্স ভিটামিন যেমন নায়াসিন, থিয়ামিন ও রাইবোফ্লোভিন রয়েছে। কলা মস্তিষ্কের প্রসার এবং স্নায়বিক কাজে সাহায্য করার পাশাপাশি বিপাকের হার ভাল রাখে। অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস শরীরের বিষাক্ত পদার্থ মুক্ত করে কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ কোষ ভাল রাখতে এবং দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখতে সাহায্য করে।
২। পেয়ারা
একটা পেয়ারায় একটা লেবু, এমনকি, একটা কমলালেবুর থেকেও দ্বিগুণ ভিটামিন সি রয়েছে। এটি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। পাশাপাশি ত্বকের স্বাস্থ্যও ভাল রাখে। এ ছাড়া পেয়ারায় আছে ভিটামিন এ, বি, ই, বি৬ এবং কে। আবার পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ফোলেটও শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত পেয়ারা খেলে তা শরীরের কোষের ক্ষতি মেরামত করতে সাহায্য করে। ফলে শরীর থাকে তরতাজা। এ ছাড়া শরীরে বয়সের ছাপও পড়তে দেয় না পেয়ারা।
৩। আপেল
আপেল বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং পুষ্টিগুণে ভরা। আপেলে আছে ভিটামিন এ, বি১, বি২, বি৩, বি৬, সি এবং ই। এ ছাড়া ফাইবার, পটাশিয়াম এবং নানা ধরনের অ্যান্টি অক্সিড্যান্টসও রয়েছে। নিয়মিত আপেল খেলে শরীরের দৈনিক পুষ্টির চাহিদার অনেকখানি পূরণ হয়। এ ছাড়া আপেল বিপাকের হার ভাল রাখতে, স্নায়ুতন্ত্রের কাজ সুষ্ঠু ভাবে চালাতে সাহায্য করে। চুল এবং ত্বক সহ সার্বিক স্বাস্থ্য ভাল রাখে এবং রোগপ্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করে।
৪। বেদানা
বেদানায় আছে আয়রন। এটি শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরি করার পাশাপাশি রক্তে অক্সিজেন পৌঁছে দিতেও সাহায্য করে। এছাড়াও বেদানায় শরীরের জন্য জরুরি আরও বহু পুষ্টিগুণ যেমন - ভিটামিন বি৫, বি৬, বি৯, সি, ই এবং কে আছে। ভিটামিন কে হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য জরুরি। বি ভিটামিনগুলি স্নায়ুতন্ত্রের কাজে সাহায্য করার পাশাপাশি মস্তিষ্কের প্রসার, কোষের ডিএনএ সংশ্লেষ, বিপাকের হার বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ভিটামিন ই কোষের ক্ষতি মেরামতে সাহায্য করে। ভিটামিন রোগপ্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধির পাশপাাশি ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া বেদানায় পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, কপার, ম্যাঙ্গানিজ়, ক্যালশিয়াম, ফসফরাসও থাকে।
৫। পেঁপে
পেঁপে নিয়মিত রাখা যেতে পারে প্রাতরাশে। পেঁপেতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি২, বি৫, বি৯, সি, ই এবং কে। এ ছাড়া রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম, কপার, জ়িঙ্ক এবং আয়রনের মতো খনিজ। রয়েছে লাইকোপিনের মতো অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টস এবং প্যাপেইনের মতো উপকারী এনজ়াইম। নিয়মিত পেঁপে খেলে তা হজমের স্বাস্থ্য ভাল রাখার পাশাপাশি, হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখে, বিপাকের হার বৃদ্ধি করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে, হাড় এবং পেশির স্বাস্থ্য ভাল রাখে। রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরকে আর্দ্র রাখে, এমনকি ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
সারাংশ রাতে খাবার পরে পেট উপোস থাকে দীর্ঘ ক্ষণ। সকালে যদি শরীরকে তার প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দেওয়া যায়, তবে দিনভর তার সুফল মেলে। অন্যান্য পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার তো বটেই সাথে সকালের প্রাতঃরাশে রাখতেপারেন ফলও। তবে সব ফল সকালে খালি পেটে খাওয়া আপনার শরীরের উপকার নাও করতে পারে।


