শিশুর অতিরিক্ত রাগ, জেদ ও অবসাদের কারণ এবং কিভাবে সহজেই শিশুদের রাগ-জেদ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তার কিছু কার্যকরী উপায়। শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বাবা-মায়ের আচরণের প্রভাব।
সামান্য কিছু অভ্যাস বদলালেই রাগ জেদ নিয়ন্ত্রণে থাকবে আপনার সন্তানের। সুন্দর পরিবেশ তারা পাবে বিকাশের ক্ষেত্রে। অবসাদ, রাগ, জেদ এগুলো শুধু বড়োদেরই হয় না, পরিবেশ ও পরিস্থিতির শিকার হলে কম বয়সেই বাচ্চাদের ভোগাতে পারে এই ধরণের সমস্যাগুলো। হঠাৎ স্কুলে থেকে আপনার বাচ্চার রেগে গিয়ে মারপিট করার খবর আসলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে আপনাকে।
বাচ্চারা কেন রাগ করছে, তা বোঝার চেষ্টা করুন সবার আগে। কোনও অভ্যাস, ঘটনা, কার্যকলাপের কারণে তারা রেগে যাচ্ছে তা খুঁজে বের করুন। কারণ জানা থাকলে তাদের শান্ত করে নিয়ন্ত্রণ কর যাবে তাড়াতাড়ি। যদি দেখেন সন্তান অত্যধিক রেগে যাচ্ছে, এমনকি অন্যকে আঘাত করার প্রবণতা আসছে, এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে তাদের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখবেন, তার কিছু উপায় জেনে নিন।
১. অতিরিক্ত শাসন করবেন না:
বাচ্চা খুব বেশি রেগে গেলে বা জেদ করলে তাকে উল্টে বকাবকি, মারধোর, বা করা শাস্তি দেওয়ার কথা ভাববেন না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিশুরা বিভ্রান্ত হয়ে এমন আচরণ করে, তাই চেষ্টা করবেন এমন সময়ে বাচ্চাকে কাছে নিয়ে ভালোবাসা ও স্নেহের সাথে শান্ত করতে। বকাবকি করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। বাচ্চা চুপচাপ অবসাদগ্রস্ত বা আরও রাগী - জেদি হয়ে উঠতে পারে।
২. মাঝেমাঝে অবজ্ঞা করতে শিখুন:
আপনার বাচ্চা চাওয়া মাত্রই হাতের নাগালে পেয়ে যাচ্ছে সব। শিশু সহজেই পেয়ে গেলে অর্জন করার আনন্দ বা গুরুত্ব বুঝবে না। ফলে কখনও চাওয়া মাত্র কিছু না পায় তখন জেদ দেখাতে শুরু করে। এমতাবস্থায় অভিভাবকের উচিত হবে বাচ্চার চোখে চোখ না রেখে তার আচরণকে কোনোরকম গুরুত্ব না দেওয়া। মনোযোগ না পেলে হতাশ হয়ে এমনি জেদ কমে যাবে। অনেক সময় ঝক্কি এড়াতে অভিভাবকরা যা চায় তাই দিয়ে দেন বাচ্চাদের। এমনটা একদম করবেন না।
৩. বাচ্চাকে ব্যস্ত রাখুন বা মন ভোলানোর চেষ্টা করুন:
ফোন, ল্যাপটপ বা টিভি নয়, বাচ্চার পছন্দের কোনো খেলনা, আঁকার রং বা গল্পের রঙিন বই দিয়ে ব্যস্ত রাখুন বাচ্চাকে, এতে রাগ - জেদের কারণ ভুলে মনোযোগ ঘুরবে অন্য দিকে। তবে একসাথে সব এনে দেবেন না, বাচ্চা বিভ্রান্ত হয়ে হয়তো মনই দিতে পারবে না কাজে।
৫. বাবা মাকে দেখে সন্তান শেখে:
বাবা মায়ের পারস্পরিক সম্পর্ক বা বাড়ির অন্যান্যদের সঙ্গে সবার কেমন ব্যবহার আচরণ তা দেখেই বাচ্চারা শেখে। ঝগড়া ঝামেলা এসব বাচ্চাদের সামনে করবেন না, এতে বাচ্চাদের মনে ও ব্যক্তিত্বতে প্রভাব পড়ে।
জেদ করলে অভিভাবকরা কীভাবে আচরণ করবেন?
আপনার শিশু যখন রাগ বা জেদ দেখাতে শুরু করলে উল্টে রেগে গিয়ে শিশুদের গায়ে হাত তোলা বা বকাঝকা করা কোনও সমাধান নয়।যথাসম্ভব মাথা ঠান্ডা রেখে নরম স্বরে কথা বলতে হবে তাদের সাথে। রাগ বা জেদ দেখালে শিশুকে ভালোবেসে কাছে রাখুন। স্বাভাবিক হয়ে এলে তাকে ভালোভাবে বোঝানোর চেষ্টা করুন, যে এমন ব্যবহার বা আচরণ সঠিক নয়। কোনো কিছু পাওয়ার আশায় এমন করে থাকলে তাকে এও বোঝাতে হবে যে রাগ, জেদ, মারামারি করে কোনও ফল পাওয়া যাবে না। অভিভাবক হিসেবে এতটুকু ধৈর্য আপনাকে ধরতে হবেই। এর সাথে শিশুর খিদে, শরীর খারাপ বা অন্য কোনো সমস্যা যা শিশু হয়তো প্রকাশ করতে পারছে না তার দিকেও নজর রাখুন।
বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, ৪ বছরের নিচে শিশুদের অতিরিক্ত জেদের কারণে মারধোর, তিক্ত কথাবার্তা বা কঠিন শাস্তি দেওয়া উচিত না। সাধারণত ৩ বছরের পর থেকেই শিশু তার নিজের মনের ভাব সঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারে ফলে রাগ বা জেদের সম্ভাবনা ধীরে ধীরে কমে আসে। তবে ৪ বছর বয়সের পরও যদি অতিরিক্ত রাগের কারণে শিশু নিজেকে বা অন্যকে আঘাত করতে থাকে, বা জেদ না কমে তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।


