জন্মের পর একটি শিশুকে তার পিতার মতো দেখতে বলার পিছনে রয়েছে জিনগত বৈশিষ্ট্য। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন সন্তান সুস্থ থাকে বাবার মত দেখতে হলে। 

একটি শিশু জন্মের পরই আত্মীয় স্বজনদের শুরু হয়ে যায় শিশুটি কার মতো দেখতে হয়েছে, সেই নিয়ে আলোচনা। কেউ বলেন চোখ হয়েছে পুরো মায়ের মতো, আবার কারোর মতে নাকটা পুরো বাবার মতো, কেউ আবার বলেন যে ঠোঁটদুটো নাকি দিদার মতো হয়েছে। তবে জিনগত ভাবেই একটি শিশুর চেহারা ও স্বভাবে তাঁর নিকট পরিজনদের চেহারার মিল থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে মা ও বাবার সঙ্গে সবথেকে বেশি চেহারার মিল থাকে একটি শিশুর।

তবে কোনও কোনও বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলি সবসময় একটি শিশু তার বাবার থেকে পায়। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে একটি শিশুর সঙ্গে তার বাবার নির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে মিল থাকে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এক চমকপ্রদ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। তাঁদের মতে, যে সমস্ত শিশু জন্মের সময় তাদের বাবার মতো দেখতে হয়, তারা এক বছর বয়সে তুলনামূলকভাবে বেশি স্বাস্থ্যবান থাকে। বিংহ্যামটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সলোমন পোলাচেক এবং সাদার্ন ইলিনয় ইউনিভার্সিটির মার্লন ট্রেসির নেতৃত্বে এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়। তাঁদের গবেষণার ফল বলছে, যে শিশুরা মায়ের চেয়ে বাবার চেহারার সঙ্গে বেশি সাদৃশ্য বহন করে, প্রথম জন্মদিনে তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভাল থাকে।

এবার জেনে নেওয়া যাক শিশুর সঙ্গে তার বাবার মিল হওয়ার বিষয়গুলি কী কী:

* বিশেষজ্ঞদের মতে শিশুর সঙ্গে তার মায়ের থেকে বাবার চেহারার বেশি মিল থাকে। একটি শিশুকে কেমন দেখতে হবে তার ৬০ শতাংশ নির্ভর করে বাবার জিনের ওপরে এবং ৪০ শতাংশ নির্ভর করে মায়ের জিনের ওপরে। সেই কারণে শিশুকে মায়ের থেকে বেশি বাবার মতো দেখতে হয়।

* আপনার সন্তানের উচ্চতা কেমন হবে, তা নির্ভর করে তার বাবা লম্বা না বেঁটে তার ওপর। বাবা যদি লম্বা হয়, শিশুও লম্বা হবে সাধারণ ভাবে। সাধারণত বাবা লম্বা ও মা বেঁটে যে সব শিশুদের, তার কিন্তু লম্বা হয়।

সন্তানের চেহারা বাবা বা মায়ের মতো হওয়া জেনেটিক্স বা বংশগতির ওপর নির্ভর করে, এটি মানুষের চাওয়া বা চেষ্টা কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত নয়। জিন বা বংশগত বৈশিষ্ট্যগুলি পিতামাতা থেকে সন্তানের মধ্যে স্থানান্তরিত হয় এবং এই জিনগুলোই সন্তানের গঠন, রং, উচ্চতা, চুলের ধরন ইত্যাদি নির্ধারণ করে।

প্রতিটি সন্তানের মধ্যে মায়ের ৪০% এবং বাবার ৬০% জিন থাকে। কোন বৈশিষ্ট্যগুলো সন্তানের মধ্যে প্রকাশ পাবে তা নির্ভর করে ডোমিন্যান্ট এবং রিসেসিভ জিনের ওপর। যদি বাবার কোনো ডোমিন্যান্ট বৈশিষ্ট্য (যেমন: চোখের রং, চুলের ধরন) সন্তানের মধ্যে প্রকাশ পায়, তাহলে সে দেখতে অনেকটা বাবার মতো হবে। কখনো কখনো জেনেটিক মিউটেশনের কারণে সন্তানের চেহারা পিতামাতার থেকে ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু যদি মিউটেশন বাবার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী হয়, তাহলে সন্তান বাবার মতো দেখতে হতে পারে।

বিষয়টি কেবল চেহারার মিলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এই গবেষণা আসলে শিশুর জীবনে, বিশেষ করে প্রথম বছরে, বাবার সক্রিয় ভূমিকার গুরুত্বকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। সন্তানের মুখের আদল কার মতো, সেই বিতর্ক না হয় চলতেই থাকবে, কিন্তু তার সুস্থ ভবিষ্যতের আসল রহস্য যে বাবার স্নেহ এবং সময়ের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে।