সংক্ষিপ্ত

জলন্ধরের বাসিন্দা অমরজিৎ সিং আজ খুবই খুশি। আজ তিনি তাঁর হারিয়ে যাওয়া বোনকে খুঁজে পেয়েছেন। তিনি জাতিতে শিখ। ৭৫ বছর আগে দেশভাগের সময়ই তিনি তাঁর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন।

রক্তের সম্পর্ক যে দেশকাল, সমাজ, জাতি কিছুই মানে না তা আরও একবার প্রমাণ হল ১০ সেপ্টেম্বর। স্থান পাকিস্তান। হিন্দু শিখ ভাই হুইল চেয়ারে বসে রয়েছে। বৃদ্ধ ভাইকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কেঁদে চলেছেন আরও এক বৃদ্ধা। জাতিতে তিনি মুসলিম। কিন্তু সব ছাপিয়েও রক্তের সম্পর্ক রয়েছে তাঁদের। 

যাইহোক এবার আসল ঘটনায় আসি। জলন্ধরের বাসিন্দা অমরজিৎ সিং আজ খুবই খুশি। তিনি আজ তিনি তাঁর হারিয়ে যাওয়া বোনকে খুঁজে পেয়েছেন। তিনি জাতিতে শিখ। ৭৫ বছর আগে দেশভাগের সময়ই তিনি তাঁর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। এতদিন পরে আজ ফিরে পেলেন পরিবারের সদস্যকে। 

অমরজিৎ সিং-এর বাবা মা ছিলেন মুসলিম। দেশভাগের সময়ই তাঁরা ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যান। কিন্তু সেই সময় এই দেশেই রয়ে দিয়েছিল তাদের দুই সন্তান। অমরজিৎ সিং আর তাঁর বোন। বুধবার তিনি পাকিস্তানের কার্তারপুর গুরুদ্বার দরবার সাহিবে হুইল চেয়ারে বসেই তাঁর ছোট বোন ৬৫ বছরের কুলসুম আখতারকে ফিরে পান। প্রথম সাক্ষাকেই দুই ভাইবোন একে অপরকে জড়়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। 

দ্যা এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, অমরজিৎ সিং তাঁর বোনের সঙ্গে দেখা করার জন্যই ভিসা নিয়ে পাকিস্তান গিয়েছিলেন। ওয়াঘা সীমান্ত পার হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পাকিস্তানে গিয়ে বোন কুলসুমকে দেখে নিজের আবেগ চেপে রাখতে পারেননি। ভাইবোন দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন। ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য কুলসুম তাঁর ছেলে শাহজাদা আহমেদ ও পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে এসেছিলেন। কুলসুমের বাড়ি পাকিস্তানের ফয়সালাবাদে। 

কুলসুম স্থানীয় সংবাদপত্রে জানিয়েছিলেন, তিনি পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তাঁর আগেই তাঁর বাবা ও মায়ের আরও দুই সন্তান ছিল। দেশভাগের সময় সেই দুই ভাইবোন হারিয়ে গিয়েছিল। মায়ের অনুমান ছিল তাঁরা ভারতেই রয়ে গিয়েছে। কুলসুম বলেন হারিয়ে যাওয়া দুই ছেলে মেয়ের জন্য তাঁর মা সবার অলক্ষ্য়ে  চোখের জল ফেলতেন। তিনিও কখন আশা করেননি তাঁর হারিয়ে যাওয়া ভাইকে কোনও দিন দেখতে পাবেন। 

যাইহোক কয়েক বছর আগে তাঁর বাবার বন্ধু বর্তমান ভারতের বাসিন্দা সর্দার দারা সিং পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। সেই দারা সিংকেই তাঁর মা নিজের হারিয়ে যাওয়া ছেলে মেয়েদের  সম্পর্কে সব তথ্য দিয়েছিলেন। তাঁদের গ্রামের নামও জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন নিজেদের বাড়ির কথা। তারপরই দারা সিং দেশে ফিরে জানিয়েছিলেন হারিয়ে যাওয়া দুই সন্তানের মধ্যে এক জন জীবিত রয়েছেন। অন্যজন মৃত। ভাইয়ের খবর পেয়েই কুলসুম যোগাযোগের সবরকম চেষ্টা করেন। তখনই জানতে পারেন, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় বাবা-মা যখন পাকিস্তানে আসছিলেন তখনই তাঁর দুই ভাইবোন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারা থেকে গিয়েছিল ভারতে। তাঁর ভাইকে ভারতের এক শিখ পরিবার দত্তক নিয়েছিল। তারপরই তাঁর নাম হয় অমরজিৎ সিং। 

বয়সের ভারে অসুস্থ অমরজিৎ সি। পিঠের ব্যাথায় কাতর কুলসুম। সব উপেক্ষা করেই এদিন কার্তারপুর এসেছিলেন। দেখা করেছিলেন দুই ভাইবোন। 

অন্যদিকে অমরজিৎ সিং জানিয়েছেন,তিনি যখন জানতে পারেন তিনি মুসলিম দম্পতির সন্তান আর তাঁর মা বাবা পাকিস্তানে রয়েছে- তখন তিনি রীতিমত ধাক্কা খেয়েছিলেন। কিন্তু তারপরই মনকে বুঝিয়েছেন, তাঁর আরও একটি পরিবার রয়েছে। যাঁরা দীর্ঘ দিন তাঁর অপেক্ষা করছে। তিনি আরও বলেছেন তিনি তাঁর পাকিস্তানের পরিবারের সদস্যদের ভারতে নিয়ে যেতে চান। আলাপ করিয়ে দিতে চান তাঁর শিখ পরিবার সদস্যদের সঙ্গে। 

অন্যদিকে কুলসুমের ছেলে শাহজাদা বলেছেন, ৭৫ বছর পর তাঁর মা তাঁর ভাইকে খুঁজে পেয়েছে এটাই বড় কথা। তিনি আরও বলেন, তাঁর মামা শিখ পরিবার থেকে এসেছেন। সংস্কৃতি ভিন্ন। কিন্তু মামার পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চান তিনিও। 

ছকভাঙা জীবন লিজ ট্রাসের, বামপন্থা ছেড়ে রক্ষণশীল দলে যোগ মেনে নিতে পারেনি তাঁর বাবা

কথা রাখলেন হাসিনা, সীমান্ত পেরিয়ে ৪ টন ইলিশ এল রাজ্যে- পুজোর মুখে আরও ইলিশ আসবে

সানস্ক্রিন না লাগানোর ভয়ঙ্কর পরিণতি, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ছবিটি দেখলে শিউরে উঠবেন আপনিও