সংক্ষিপ্ত
পুজোর মরশুম মানে গরম আর বর্ষার ককটেল। সাজ যাতে ঘামে, জলে ধুয়ে না যায় সে দিকে নজর দেবেন। এমন সাজে সাজতে হবে যাতে সবাই ভুলবে! কী ভাবে? জানুন তাহলে।
পুজোর সাজে কেবল নারী? আর পুরুষদের আড়ি? খেয়াল করে দেখেছেন চারপাশ? পুজো ঘিরে পুরুষদের উন্মাদনা! কোনও বার ঝকঝকে নীলচে গালের কামাল তো কোনও বছর হালকা দাড়ি-গোঁফেই পুরুষালি। এ বছর সেই ফ্যাশনে ধুনো দিয়েছেন স্বয়ং ‘মহারাজ’! সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নতুন লুকই কি এ বারের পুজোর ফান্ডা? এশিয়ানেট নিউজে ফাঁস করলেন রূপ বিশেষজ্ঞ অভিজিৎ চন্দ
বোলে মেরে লিপস.... মনের কথা ঠোঁট পর্যন্ত কেবল নাকি পুজোতেই আসে? কী নারী কী পুরুষের! তার জন্য বাড়তি প্রস্তুতি তো নিতেই হবে। যাতে চুল থেকে পায়ের পাতা না হোক, চিবুক পর্যন্ত যেন চাবুকের মতো ধারালো ব্যাপার থাকে। তবেই না আপনাকে ঘিরে মুগ্ধতা! অষ্টমীর অঞ্জলির ফুল আপনার মাথায়, গায়ে! এ দিকে হাতে মাত্র কয়েকটি দিন। রূপচর্চা দূরে থাক, রূপসজ্জার সরঞ্জাম পর্যন্ত হাতের কাছে গোছানো নেই। রূপ বিশেষজ্ঞ বলছেন, কুছ পরোয়া নেই। কয়েকটি কথা মনে গেঁথে নিলে ‘শারদ সুন্দরী’ আপনিই।
চারটে দিন সেজে নিন....
নিয়মিত ত্বক পরিচ্ছন্ন রাখুন। ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং চলছে চলবে। পর্যাপ্ত জল আর ঘুম ত্বককে বাড়তি জেল্লা দেবে।
চারটে দিন সেজে নিন— এই ভাবনা দূরে থাক। পুজো মানেই ঝলমলে ব্যাপার। সাজে সেটা আনতে গিয়ে অস্বাভাবিক সাজবেন না। প্রত্যেক বছর এই অনুরোধ সবাইকে জানাই। নিজের চেহারায় কিছু না কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। তাকেই তুলে ধরুন। কারওর চোখ মুখর। কারও ঠোঁটে আবেদনের ইশারা। কিংবা ঠোঁটের উপরের কালো তিলটা! চোখ যে থমকে যায়। সেই বুঝে চোখের আবেদন বাড়ান কাজল, মাস্কারা, শ্যাডোতে। ঠোঁটে থাক গাঢ় থেকে হালকা রঙের টান। সময় অনুযায়ী। মুখ মেকআপের মুখোশে না-ই ঢাকলেন। ঠোঁটের উপরের তিলটা জ্বলে উঠুন ফেস পাউডারের আস্কারায়।
পুজোর মরশুম মানে গরম আর বর্ষার ককটেল। সাজ যাতে ঘামে, জলে ধুয়ে না যায় সে দিকে নজর দেবেন। ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ কিনবেন। হাত বটুয়ায় টুকটাক সাজের জিনিস রেখে দেবেন। যাতে এ দিক ও দিক হলে চট করে সামলে নিতে পারেন।
সকালের সাজ যত ছিমছাম ততই চোখের আরাম। সপ্তমীতে হালকা পাউডার, পেলব লিপ কালার, চোখে কাজল— যথেষ্ট। সে দিন ন্যুড লিপস রাখতেই পারেন। স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের মতো। কারণ, সে দিন পুজো শুরু। আপনি তখনও টাটকা শিউলি ফুল!
অষ্টমী মানেই অঞ্জলি। আর লাল পাড় সাদা শাড়ি। মিলিয়ে কপালে একটা লাল টিপ পড়ুন। সামলাতে পারলে ঠোঁটে লাল লিপস্টিকও দিতে পারেন। অনেকেই এই রং রাতের জন্য তুলে রাখেন। সত্যিই, রাতে লালচে ঠোঁট সাজের ভাষাই বদলে দেয়! সঙ্গে থাকুক মানানসই আইশ্যাডো। বদলে তাই সকালের জন্য বেছে নিতে পারেন বাদামি রঙের হালকা যে কোনও শেড। কাজল থাকবেই। যাঁরা খোঁপা করবেন তাঁরা চুলে ফুল দিতে পারেন।
এখন তৃতীয়া থেকে ঠাকুর দেখা শুরু হয়ে যায়। নবমীতে তাই আপনার চোখ ব্যাগি আই। ক্লান্তিতে ত্বক জৌলুসহীন। চুলও রুক্ষ। অতঃকিম? সাজে আসবে পেলব গোলাপি বা পিচ রং। চোখের পক্ষে আরামদায়ক। ক্লান্ত ত্বকের পক্ষেও। যাঁরা নিয়মিত সাজগোজ করেন তাঁরা জানেন, এই রং নিমেষে কেমন যাবতীয় ত্রুটি ঢাকতে পারে। সারা দিনের বিশ্রামের পরে রাতে একটু ভারী সাজ হয়ে যাক।
ত্বকের ক্লান্তি ভুলে...
অঢেল খাওয়াদাওয়া। রাতভোর হুল্লোড়। শরীরজুড়ে আলসেমি। ত্বকও সোহাগি হতে চায়! এখন কী উপায়? রূপচর্চার সামগ্রি বিক্রির দোকানে এক ধরনের আই প্যাড পাওয়া যাচ্ছে। সে গুলো চোখে লাগিয়ে আধ ঘণ্টা ঘুমিয়ে নিন। প্যাড খুললেই চোখের ফোলা ভাব সরে ঝকঝকে আয়নার মতোই চোখ আপনার। একই ভাবে ত্বককে ঝকঝকে করতেও আছে রকমারি ফেস প্যাড। ব্যবহার করতে পারেন।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নেবেন? তা হলে দুটো স্টিলের চামচ ঘণ্টাখানেক ফ্রিজের ভিতরে রেখে দিল। কনকনে ঠান্ডা হয়ে গেলে সেই চামচ চোখের নীচে চেপে ধরুন। পলকে চোখের কোলের ফোলা গায়েব।
একই ভাবে বরফ ঠান্ডা জলে মুখ ডুবিয়ে তুলে নিন। কয়েক বার করুন। হাতেনাতে ফল পান। বদলে বরফের টুকরোও মুখে খসতে পারেন। ফ্রিজের আইস কিউব ট্রেতে গোলাপ জল রেখে দিন। বরফের আকার নিলে সেটাই ঘষুন। ত্বকের ছিদ্র ছোট হয়ে টানটান, পেলব দেখাবে। মেকআপ ভাল করে বসবে।
বাড়ির পুজোয় ঘরোয়া সাজে...
সত্যি বলতে কি, বাড়িতে পুজো থাকলে না হয় বেরনো। না হয় সাজগোজ। ভোর চারটে থেকে রাত একটা পর্যন্ত দমভোর খাটনি। তার মধ্যেই হালকা সাজ। নইলে অতিথিরা কী বলবেন? নিজের চোখেও নিজে বেমানান। তালিকায় চার দিনই শাড়ি? অষ্টমীর সাজে বৈচিত্র আনতে ঘরোয়া ভাবেই সেটা পড়ুন। চুল কখনও খুলে রাখবেন না। হাতখোঁপা, পনিটেল, টপনট— কিছু একটা বেঁধে নিন। পারলে ফুল লাগান। সুগন্ধির কাজ করবে। সঙ্গে হাল্কা কাজল, ফেস পাউডার, লিপবাম বা গ্লস। বিকেলে লিপস্টিক চলতে পারে। যেমন চলতে পারে হালকা আই শ্যাডো বা ব্লাশ অন!
পুরুষ পুরুষালি দাড়িতে?
গত সাত-আট বছর ধরে পুরুষের অগ্নিপরীক্ষা। চাপ দাড়ি, পাকানো গোঁফ, ফ্রেঞ্চকাট বা শুধুই গোঁফ নাকি ক্লিন শেভড? কোনটাতে সে সুপুরুষ? ফ্যাশন বলছে, চাপ দাড়ি বা অবিন্যস্ত খোঁচা খোঁচা দাড়ি-গোঁফের প্রতি পুরুষ ঝুঁকেছেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কেই দেখুন। ক্লিন শেভড দাদা ক্লিন বোলড করেছেন তাঁর নয়া লুকে। বিজ্ঞাপনি প্রচারের খাতিরে ‘মহারাজ’ দাড়ি-গোঁফে শোভিত! বঙ্গ ললনারা যথারীতি চোখে হারাচ্ছেন তাঁকে। এই লুক আপনিও পুজোয় আপন করতে পারেন। যদি সামলাতে পারেন। নইলে আপনি আপনার মতোই থাকুন।
পুজোর আগে কিছু ত্বকচর্চা পুরুষেরও দরকার। নখ, চুল পরিচ্ছন্নভাবে কেটে নিন। দাড়ি-গোঁফ ট্রিম করিয়ে নেবেন। ইদানীং, পুরুষেরাও অল্পস্বল্প রূপটানে অভ্যস্ত। খুঁত ঢাকতে চোখের তলায়, গালে কনসিলার লাগাতে পারেন। সাজ শেষ সুগন্ধিতে। ‘সৌরভ’ আপনাকে ঘিরে থাকলে ম্যাডক্স স্কোয়্যারের ম্যাডলি বাঙালিনীকে ঠেকায় কে?
আরও পড়ুন--
কাঁচা-পাকা চুলের সহাবস্থান, ‘সল্ট অ্যান্ড পেপার’ লুকেই বাজিমাত পুজোয়! পরামর্শে ট্রাইকোলজিস্ট বব
'পুজোর আগে গুনতে বসতাম, ক’টা হল, কবে কোনটা পরব, কোন জামার সঙ্গে কোন প্যান্টটা মানাবে'- টোটা রায়চৌধুরী
'নতুন শাড়ি, লিপবাম আর কাজল! ষষ্ঠী থেকে দশমি জমে যাবে', স্বস্তিকার পুজো শপিং-এর হাল হকিককত