IPL 2025 Orange and Purple Cap: 

IPL 2025 Orange and Purple Cap: চলতি ২০২৫ সালের আইপিএল যেন মুক্ত বাতাস নিয়ে হাজির হয়েছে। নতুন অধিনায়ক, নতুন খেলোয়াড়, নতুন সাপোর্ট স্টাফ ও নতুন দর্শক সব মিলিয়ে IPL আবারও প্রমাণ করেছে যে এটি নতুন প্রতিভা আবিষ্কারের সবচেয়ে বড় মঞ্চ।

আয়ুষ মাত্রে, প্রিয়াংশ আর্য, বৈভব সূর্যবংশী ও অভিষেক পোড়েলের মতো তরুণ তারকারাও প্রমাণ করেছেন, তাঁরাও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের জায়গা করে নিতে সক্ষম। অন্যদিকে করুণ নায়ার, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা, জিতেশ শর্মা ও প্রভসিমরন সিংয়ের মতো তারকাদের প্রত্যাবর্তন ক্রিকেট বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। প্রতিভাবান ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস, যিনি এখন প্যারিম্যাচ স্পোর্টস বিশ্লেষক, এই উদীয়মান তারকাদের প্রশংসা করেছেন এবং আইপিএল ২০২৫ সম্প্রচারে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি যোগ করেছেন।

আশিস নেহেরার তত্ত্বাবধানে 2025 IPL-এ গুজরাট টাইটান্সের খেলোয়াড়রা দাপট দেখাচ্ছে

অরেঞ্জ ক্যাপের দৌড়ে যারা এগিয়ে

ভারতের জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন প্রাক্তন, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ টপ অর্ডার ব্যাটার অরেঞ্জ ক্যাপের লড়াইয়ে আছেন। সাধারণত বেশি বল খেলার সুযোগ পাওয়ায় টপ-অর্ডার ব্যাটাররা বেশি রান করার ক্ষেত্রে কিছুটা এগিয়ে থাকেন এবং অরেঞ্জ ক্যাপ জেতার দৌড়ে তাঁরাই ফেভারিট বলে বিবেচিত হন। অরেঞ্জ ক্যাপের দৌড়ে এগিয়ে থাকা শীর্ষ চার ব্যাটারের কথা তুলে ধরা হল:

১. সাই সুদর্শন (গুজরাট টাইটান্স)

তামিলনাড়ুর এই ক্রিকেটার TNPL-এর মাধ্যমে পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসেন এবং ইতিমধ্যেই ২০২৬ ICC T20 বিশ্বকাপে জাতীয় দলের সম্ভাব্য ওপেনার হিসাবেও তাঁর নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

সুদর্শন ১০ ম্যাচে ৫০.৪ গড়ে ও প্রায় ১৫৫ স্ট্রাইক রেটে ৫০৪ রান করেছেন। এবারের প্রতিযোগিতায় এখনও পর্যন্ত তিনিই সবচেয়ে বেশি ৫৫তিচার মেরেছেন এবং এর পাশাপাশি ১৬টি ছক্কাও হাঁকিয়েছেন।

এই তরুণ ক্রিকেটার ধারাবাহিকভাবে রান করেন এবং তার স্ট্রাইক রেট IPL ও বর্তমান T20 ক্রিকেটের নিরিখে চলনসই বলা যায়। সুদর্শন, শুভমন গিল (তিনি আমার অন্যতম প্রিয় ক্রিকেটার এবং অবশ্যই তাঁকে তালিকার শীর্ষে দেখতে চাই) ও জস বাটলার, এই ত্রয়ীর জুটির কাঁধে ভর করে তাঁদের ফ্র্যাঞ্চাইজি এই মরশুমে সবচেয়ে কম ডট বল খেলার দিক থেকে এগিয়ে আছে।

২. বিরাট কোহলি (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু)

বিরাট কোহলিও অরেঞ্জ ক্যাপ জেতার অন্যতম দাবিদার

দুবারের অরেঞ্জ ক্যাপ জয়ী বিরাট কোহলি এবার ডেভিড ওয়ার্নারের পর প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে ক্রিকেটের এই ধনী প্রতিযোগিতায় তৃতীয়বারের জন্য অরেঞ্জ ক্যাপ নিজের দখলে নেওয়ার লড়াইয়ে প্রবলভাবে আছেন। আন্তর্জাতিক T20 ক্রিকেট থেকে অবসরের পর এটি কোহলির প্রথম IPL মরশুম। তবে এবার তিনি যে ফর্মে আছেন তা দেখে অনেকেই অবাক হয়ে যাচ্ছেন, যে কেন এই কিংবদন্তি ব্যাটার আন্তর্জাতিক T20 ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন।

RCB ও ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক এই মরশুমের শুরুটা দুর্দান্তভাবে করেছিলেন। গতবারের চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে রান তাড়া করার সময় তিনি অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়েছেন এবং এই মরশুমে আরও বেশ কয়েকবার তাঁকে 'চেজ-মাস্টার' এর ভূমিকায় দেখা গিয়েছে। তাঁর দলে ফিল সল্ট, রজত পাতিদার, জিতেশ শর্মা, টিম ডেভিড ও রোমারিও শেফার্ডের মতো পাওয়ার-হিটার সমৃদ্ধ ব্যাটিং অর্ডারে কোহলি মূলত অ্যাঙ্করের ভূমিকা পালন করছেন।

৩৬ বছর বয়সী এই ব্যাটার চলতি মরশুমে ১১ ম্যাচে 63.13 গড় ও ১৪৩.৪৬ স্ট্রাইক রেটে ৫০৫ রান করেছেন। এখন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের আশা তাঁর এই ফর্ম যেন মরশুমের বাকি ম্যাচগুলোতেও বজায় থাকে।

৩. শুভমন গিল (গুজরাট টাইটান্স)

২০২৪ সালের মরশুমটা ভালো না গেলেও এবারের IPL-এ গুজরাট টাইটান্সের অধিনায়ক হিসাবে শুভমন গিল আবার পুরনো ছন্দে ফিরে এসেছেন। তিনি ১০ ম্যাচে ৫১.৬৭ গড় ও ১৬০+ স্ট্রাইক রেটে ৪৬৫ রান করেছেন। তাঁর এই আক্রমাত্মক ব্যাটিং অন্য প্রান্তে সুদর্শনকে থিতু হতে সাহায্য করছে।

গত ২০২৩ IPL-এর অরেঞ্জ ক্যাপ জয়ী শুভমন গিল গত 12 মাসে আরও পরিণত হয়েছেন এবং তাঁর তূণীরে আরও বেশ কিছু নতুন অস্ত্র যোগ হয়েছে। আম্পায়ারদের সঙ্গে দু-একটি ঘটনা বাদ দিলে, তিনি এখন অধিনায়কের দায়িত্বভারের পাশাপাশি একজন নির্ভরযোগ্য ওপেনিং ব্যাটারের দ্বৈত ভূমিকা বেশ ভালোভাবে সামলাচ্ছেন।

মরশুমের শুরুতে সুদর্শন ও বাটলার টাইটান্সের বিজয়রথকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। অন্যদিকে প্লে-অফের সময় এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে গিল জ্বলে উঠেছেন। বর্তমানে গুজরাট টাইটান্স প্লে-অফ নিশ্চিত করে লিগ টেবিলের শীর্ষ চারটি দলের মধ্যে রয়েছে। উল্লেখ্য, ওয়ানডে ক্রিকেটে গুজরাট টাইটান্সের এই অধিনায়ক শেষ তিন ম্যাচে মাত্র ১৪৩ বল খেলে ২৫০ রান করেছেন।

৪. সূর্যকুমার যাদব (মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স)

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়কের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর আবার ব্যাটে ছন্দ খুঁজে পেয়েছেন T20 ক্রিকেটে ভারতীয় দলের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। বর্তমানে হার্দিক পান্ডিয়া পাঁচবারের IPL চ্যাম্পিয়ন দলটিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

সাধারণত ৩ বা ৪ নম্বরে ব্যাট করতে নামা সূর্য এবারের প্রতিযোগিতায় ১১ ম্যাচে ১৭২.৭২ এর মতো ঈর্ষণীয় স্ট্রাইক রেটে এখনও পর্যন্ত ৪৬৫ রান করেছেন। এর ফলে মিডল ওভারে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স দ্রুত রান করতে পারছে এবং দীর্ঘমেয়াদে দল এর সুবিধা পাচ্ছে। ভারতীয় অধিনায়কই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি চলতি ২০২৫ IPL-এ একই সঙ্গে সর্বাধিক রানের তালিকায় শীর্ষ 5-এর মধ্যে রয়েছেন এবং সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেটের শীর্ষ ৫ ব্যাটারের তালিকায় রয়েছেন।

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স যেহেতু নমনীয় ব্যাটিং অর্ডার পছন্দ করে, তাই উইল জ্যাকস, নমন ধীর ও তিলক বর্মার মধ্যে থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী কোনো একজন 3 নম্বরে ব্যাট করছেন। এর ফলে চার নম্বরে সূর্যকুমারের উপস্থিতি টপ অর্ডার ব্যাটারদের ইনিংসের শুরুতেই বোলারদের উপর চড়াও হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।

পার্পল ক্যাপের দৌড়ে যারা এগিয়ে

আধুনিক ক্রিকেটে বিশেষ করে T20 ফরম্যাটে পুরোপুরিভাবে ব্যাটাররা রাজত্ব করে। এর ফলে বিশ্বমানের বোলারদের গুরুত্ব আরও বেড়ে গিয়েছে কারণ, এই বোলাররা পিচ বা মাঠের পরিস্থিতি নির্বিশেষে নিজেদের ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য সাফল্য এনে দিতে পারেন। ২০২৫ IPL মরশুমে আশিষ নেহরা ও জাহির খানের মতো কোচরা সম্পূর্ণ ভারতীয় পেস আক্রমণ নিয়ে সাফল্য পাচ্ছেন। পার্পল ক্যাপের দৌড়ে এগিয়ে থাকা শীর্ষ চার বোলাররের কথা তুলে ধরা হল:

১. প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা (গুজরাট টাইটান্স)

প্রসিদ্ধ কৃষ্ণার প্রত্যাবর্তন আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। এই ফাস্ট বোলার 2024-25 বর্ডার গাভাস্কার ট্রফিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিউ ইয়ার টেস্টে ভারতের হয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে মাঠে নেমেছিলেন। সিরিজের একমাত্র টেস্টে সুযোগ পেয়ে সাদামাটা পারফরমেন্সের পর, কৃষ্ণা ২০২৫ IPL-এর জন্য নেহরার দলে যোগ দেন।

প্রথম ম্যাচে পাঞ্জাব কিংসের ব্যাটারদের কাছে মাঠের মধ্যে রীতিমত নাস্তানাবুদ হলেও, পরের ম্যাচেই মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে ২/১৮ বোলিং পরিসংখ্যান নিয়ে তিনি দারুণভাবে প্রত্যাবর্তন করেন। তারপর থেকে বেঙ্গালুরুতে জন্ম নেওয়া এই সীমার আর পিছনে ফিরে তাকাননি। একের পর এক ম্যাচে কম রান দেওয়ার পাশাপাশি মরশুম জুড়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট তুলে নিয়েছেন।

এবারের প্রতিযোগিতায় এখনও পর্যন্ত কৃষ্ণা ১০ ম্যাচে ৭.৪৯ ইকোনমি রেটে ১৯টি উইকেট নিয়েছেন এবং একাধিক ম্যাচ জেতানো পারফরমেন্স করেছেন। যেখানে মহম্মদ শামি ও প্যাট কামিন্সের মতো বিখ্যাত জোরে বোলাররা একই উইকেটে একই ম্যাচে প্রচুর রান দিয়েছেন, সেখানে তিনি নিজের ইকোনমি রেট নিয়ন্ত্রণে রেখে বল করে গিয়েছেন।

২. জশ হ্যাজেলউড (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু)

আগামী ম্যাচে খেলার জন্য জশ হ্যাজলউড ফিট হয়ে উঠতে পারেন

জশ হ্যাজেলউড এই মরশুমে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর জন্য তুরুপের তাস হয়ে উঠেছেন। এই দীর্ঘকায় অস্ট্রেলিয়ান জোরে বোলার বিপক্ষের রানের গতিতে লাগাম টানার পাশাপাশি উইকেট তুলে নিয়ে পার্পল ক্যাপের দৌড়ে এই মুহূর্তে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। দক্ষিণ গোলার্ধের এই দীর্ঘকায় বোলার প্রমাণ করেছেন যে এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের মতো কঠিন পিচে নিয়ন্ত্রিত বোলিংই হল সেরা উপায়।

হ্যাজেলউড এখনও পর্যন্ত ১০টি ম্যাচে ১৮ উইকেট নিয়েছেন। তবে কাঁধের সামান্য চোটের কারণে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে 'দক্ষিণী ডার্বি' তে খেলতে পারেননি। এই চোটের কারণেই তিনি RCB-র হয়ে আরও কয়েকটি ম্যাচ খেলতে নাও পারেন, যা পার্পল ক্যাপ পাওয়ার দৌড়ে তাঁকে পিছিয়ে দিতে পারে।

৩. নূর আহমেদ (চেন্নাই সুপার কিংস)

2025-এর IPL-এ চেন্নাই সুপার কিংস দল হিসাবে ব্যর্থ হলেও, এমএস ধোনির দলে আসা নতুন নূর আহমেদ ছিলেন ব্যতিক্রমী। এই তরুণ আফগান স্পিনার ১১ ম্যাচে ১৬টি উইকেট নিয়েছেন। তবে তিনি আর মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবেন। পিচ যদি ধীরগতির বোলারদের সহায়তা করে, তবে নূরের ম্যাচে একাধিক উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।

যেখানে রবীন্দ্র জাদেজা এবার বলের চেয়ে ব্যাট হাতে বেশি অবদান রেখেছেন এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিনের চেন্নাইতে প্রত্যাবর্তন আশানুরূপ হয়নি, সেখানে নূরের ইকোনমি বোলিং ও উইকেট শিকারের স্পেলগুলোই এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত সুপার কিংসকে প্লে-অফের দৌড়ে টিকিয়ে রেখেছিল।

৪. ট্রেন্ট বোল্ট (মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স)

এবারের মেগা নিলামের মধ্য দিয়ে ট্রেন্ট বোল্ট মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে ফিরে এসেছেন। জসপ্রিত বুমরাহ IPL 2025-এর প্রথম কয়েকটি ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়ায় নিউজিল্যান্ডের এই তারকা জোরে বোলারের উপস্থিতি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বুমরাহের অনুপস্থিতিতে, অধিনায়ক পান্ডিয়া ডেথ বোলিংয়ের দায়িত্ব বোল্টের সঙ্গে ভাগ করে নেন। এই জুটি মরশুমের প্রথম কয়েকটি পয়েন্ট পেতে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে সাহায্য করে।

বোল্ট ১১টি ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়েছেন। পান্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন দলটি লিগ টেবিলের প্রথম চার দলের মধ্যে থাকায় বোল্ট আগামী তিনটি ম্যাচ ও প্লে-অফের ম্যাচগুলোতে আরও কিছু উইকেট নেওয়ার সুযোগ পাবেন। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স যদি ষষ্ঠ IPL খেতাব জিততে চায়, তবে এই বাঁ-হাতি সীমারকে বাকি ম্যাচগুলোতেও তাঁর সেরা ছন্দে থাকতে হবে।

স্যার বলছেন: "MI-এর এবারের শুরুটা ভালো ছিল না, কিন্তু তারা এখন ছন্দ পেয়ে গিয়েছে এবং প্রতিদিন উন্নতি করছে, যা তাদের প্লে-অফে যাওয়ার সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করে তুলেছে।"

আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।