সংক্ষিপ্ত
পৃথিবীতে কি শুরু হয়ে গিয়েছে গণ-বিলুপ্তি (Mass Extinction)? জলবায়ু পরিবর্তন (Climate Change) নিয়ে আশঙ্কার মধ্যে, এমনটাই দাবি করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Hawaii) একদল বিজ্ঞানী।
গত কয়েক দশক ধরে, জলবায়ু পরিবর্তনের (Climate Change) বিপদ নিয়ে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। গত কয়েক বছরে সেই পরিবর্তন চাক্ষুসও করা যাচ্ছে। ব্যাপকভাবে বেড়েছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সংখ্যা। সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের অপরিবর্তনীয় ক্ষতি হয়ে চলেছে। এই সব মিলিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞই অনুমান করেছিলেন, চলতি দশকে পৃথিবীতে বিরাট জলবায়ুগত পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটতে চলেছে। কিন্তু, যার জন্য তাঁরা প্রস্তুত ছিলেন না, তা হল মাস এক্সটিঙ্কশন (Mass Extinction) বা গণ-বিলুপ্তি। একদল বিজ্ঞানীর সাম্প্রতিকতম গবেষণায় উঠে এসেছে এই চমকপ্রদ তথ্য। তাঁদের দাবি, পৃথিবী এখন ষষ্ঠ গণ-বিলুপ্তির পক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। অর্থাৎ পশু-পাখি-মানুষ - সব শেষ হতে চলেছে।
যখন কোনও প্রাণী বা উদ্ভিদের আর একটিও সদস্য জীবিত থাকে না, তখন সেই প্রাণী বা উদ্ভিদকে পৃথিবীর বুক থেকে অবলুপ্ত বলা হয়। আর গণ-বিলুপ্তি মানে, গোটা জীব জগতেরই অবসান। এমন ঘটনা এর আগে কখনও পৃথিবীতে ঘটেনি তা নয়। কখনও গ্রহাণুর সঙ্গে সংঘর্ষে, কখনও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে - এরকম বিভিন্ন ঘটনায় মোট পাঁচবার পৃথিবীতে গণবিলুপ্তির ঘটনা ঘটেছে। তবে, এর আগে কোনওবারই তাতে মানুষ জড়িত ছিল না। এই গ্রহের ষষ্ঠ গণবিলুপ্তির ঘটনায়, সমস্ত মানব সভ্যতা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন - Alaska Earthquake: ৮.২ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে কাঁপল গোটা দেশ, আসতে পারে সুনামি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Hawaii) বিজ্ঞানী রবার্ট কাউই-র (Robert Cowie) নেতৃত্বে একদল গবেষক এই বিষয়ে গবেষণা চালিয়েছেন। এর আগে প্রতিটি গণ বিলুপ্তির ক্ষেত্রে দায়ী ছিল কোনও প্রাকৃতিক বা মহাজাগতিক ঘটনা। তবে, রবার্ট কাউইদের গবেষণা বলছে, এই গ্রহের ষষ্ঠ গণ বিলুপ্তি হতে চলেছে মানুষের কারণেই। তাদের গবেষণা পত্রে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বর্তমানে মানবজাতি প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর ইতিহাসে ষষ্ঠ গণ বিলুপ্তির সূচনা প্রত্যক্ষ করছে।
মানুষের হাতেই নষ্ট প্রকৃতি, বদলে যাচ্ছে জলবায়ু - সচেতন করতে অভিনব প্রতিবাদ জলবায়ু সংরক্ষণবাদীদের
অনেক বিজ্ঞানীই অবশ্য মানতে চান না, যে, পৃথিবী গণ বিলুপ্তির প্রান্তে রয়েছে। তাঁরা নিজেদের বক্তব্যের সপক্ষে আইইউসিএন বা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (International Union for Conservation of Nature)-এর লাল তালিকার (IUCN Red List) কথা উল্লেখ করেন। যে তালিকা এই গ্রহের জীববৈচিত্রগত স্বাস্থ্যের সূচক বলে ধরা হয়। তবে, রবার্ট কাউইর গবেষণা দলের মতে, এই লাল তালিকাটি অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট। তাদের মতে, সংরক্ষণের মানদণ্ডের মূল্যায়ন করা প্রাণীদের প্রায় সমস্তই পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী। অমেরুদণ্ডী প্রাণীর সামান্য অংশকে এই তালিকায় ধরা হয়েছে। অমেরুদণ্ডী বিলুপ্তির প্রকৃত সংখ্যার অনুমানকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে, বোঝা যেত আমরা সত্যিই ষষ্ঠ গণ-বিলুপ্তির সূচনার সাক্ষী।
সম্প্রতি 'বায়োলজিক্যাল রিভিউস' (Biological Reviews) বৈজ্ঞানিক জার্নালে এই গবেষণা পত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, একের পর এক জীব প্রজাতি পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে বিলুপ্ত হওয়ার প্রজাতির সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। বহু প্রাণী ও উদ্ভিদের জনসংখ্যা ক্রমে কমছে। অনেকগুলি বিলুপ্তপ্রায়। এই সমস্তই খুব ভালভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। আর এই সবকিছুই ইঙ্গিত দিচ্ছে, গণ-বিলুপ্তির সূচনার।