সংক্ষিপ্ত

 

  • বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রটি বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে
  • ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশ্যে খুন হন সিপিএমের দাপুটে নেতা প্রদীপ
  •  ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের সময় থেকেই  ব্যাপক প্রতিপত্তি বেড়েছে বিজেপির
  • ১৭ এপ্রিল এই নির্বাচন কেন্দ্রে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতাই যে হতে চলেছে, তাতে সন্দেহ নেই

তাপস দাস:  ২০১১ সালের ভোটে রাজ্যে যে সব মহীরূহপ্রতিম মন্ত্রীরা পরাজিত হয়েছিলেন, তাঁদের অন্যতম তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন। তাঁর কেন্দ্র ছিল বর্ধমান দক্ষিণ। তৃণমূল কংগ্রেসের রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে তিনি হেরেছিলেন ৩৭ হাজার ভোটে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ফের এই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন রবিরঞ্জন। এবার তিনি পরাজিত করেন সিপিএমের আইনুল হককে। জয়ের ব্যবধান ছিল ২৯ হাজারের মত ভোট। 

আরও পড়ুন-বড় চমক, ভোটে না দাঁড়াতে চাওয়া চিরঞ্জিৎ কি পরপর তিনবার ম্যাজিক দেখাবেন বারাসাতে...

১৯৬৯ সাল থেকেই এই কেন্দ্র লাল দুর্গ। প্রাক্তন ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতরের মন্ত্রী বিনয় চৌধুরী এই কেন্দ্র থেকে চারবার জয়লাভ করেছেন। নিরুপম সেন ২০০১ ও ২০০৬ সালে জিতেছেন, তার আগে ১৯৮৭ সালেও এই কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেন তিনি। ২০১১ সালে এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী সন্দীপ নন্দী পেয়েছিলেন মাত্র ৫৬২১ ভোট। ২০১৬ সালের নির্বাচনে অনেকটাই ভোট বাড়িয়ে নিয়েছিল তারা। প্রবাল রায় পেয়েছিলেন ১৬ হাজার ১৯২ ভোট। বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রটি বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে খুব সামান্য ব্যবধানে পিছিয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী এস এস আলুওয়ালিয়া। তিনি পেয়েছিলেন ৮৩ হাজার ৯৬৩ ভোট। আর তৃণমূল কংগ্রেসের মমতাজ সংঘমিত্রা পেয়েছিলেন ৮৫ হাজার ৩০১ ভোট। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বর্ধমান দক্ষিণ অবশ্য উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠেছে আরেক কারণে। এবার এখানে সিপিএমের প্রার্থী হয়েছেন পৃথা তা। পৃথার বাবা ছিলেন প্রদীপ তা। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশ্যে খুন হন সিপিএমের দাপুটে নেতা প্রদীপ। তাঁর হত্যাকাণ্ডে যুক্ত হয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নাম। পৃথা তা বামফ্রন্টের সর্বকনিষ্ঠ প্রার্থীও বটে। বামেরা এবার যে তরুণ প্রজন্মকে ভোটের ময়দানে এনেছে, পৃথা তা তাতে উল্লেখযোগ্য সংযোজন। 

আরও পড়ুন-শহুরে ভোট ধরতে কৌশল বদল, কোন হাতিয়ার ভদ্র বাঙালীর মন জিততে চাইছে বিজেপি...

তৃণমূল কংগ্রেস এই কেন্দ্রে প্রার্থী করেছে খোকন দাসকে। খোকন দাস ভূমিপুত্র। কিন্তু বর্ধমান দক্ষিণ তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জীর্ণও বটে। ২০১৬ সালে যে আইনুল হক সিপিএমের হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে রবিরঞ্জনের কাছে হেরেছিলেন, তিনি দল থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন ভোটের পাঁচ মাসের মধ্যেই। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে তিনি যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। আইনুলের সঙ্গে খোকনের তেমন বনিবনা নেই। জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি রাসবিহারী হালদারের সঙ্গে খোকনের সম্পর্কও যে তেমন ভাল নয়, তা এলাকায় কান পাতলেই শোনা যায়। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি প্রার্থী করেছে সেই সন্দীপ নন্দীকেই, যিনি ২০১১ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের সময় থেকেই এলাকায় ব্যাপক প্রতিপত্তি বেড়েছে বিজেপির। এই আবহে, বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রের ভোট জমে গিয়েছে। ১৭ এপ্রিল এই নির্বাচন কেন্দ্রে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতাই যে হতে চলেছে, তাতে সন্দেহ নেই।