সংক্ষিপ্ত
ফলাফলে দেখা যাচ্ছে ৬ জেলায় ১টিও আসন জেতেনি বিজেপি
আবার ৩ জেলায় শূন্য হাতে ফিরেছে তৃণমূলও
প্রথম থেকেই বলা হচ্ছিল মেরুকরণের ভোট
তার জন্যই কী এরকম ফল হল
প্রথম থেকেই বলা হচ্ছিল এইবারের বঙ্গভোট হল মেরুকরণের ভোট। যা এর আগে দেখেনি বাংলার রাজনীতি। বিজেপির পক্ষ থেকেও ৩০ শতাংশ ও ৭০ শতাংশের রাজনৈতিক ভাষ্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সত্য়িই কী মেরুকরণ হল বাংলার ভোটে? এখনও পর্যন্ত যে ফল সামনে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ একটা অংশে হয়েছে ঠিকই। কিন্তু, তার থেকেও বেশি হয়েছে বিজেপি-বিজেপি বিরোধী ভোটের রাজনৈতিক মেরুকরণ। আর তার ফলেই ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে ৬টি জেলা একেবারে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে বিজেপিকে। অন্যদিকে ২১৩টি আসন জিতলেও ৩টি জেলায় খাতা খুলতে পারেনি তৃণমূলও।
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচনে ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২৯২টি আসনের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। দুটি আসনের প্রার্থীদের করোনায় মৃত্যু হওয়ায় সেখানে নির্বাচন হয়নি। এই ২৯২টি আসনের মধ্যে মাত্র একটি আসন গিয়েছে সংযুক্ত মোর্চার জোটের শরিক ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএসের থলিতে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙ্গর আসনে জিতেছেন দলের চেয়ারম্যান নওশাদ সিদ্দিকী। আর একটি আসন গিয়েছে কালিম্পংয়ের স্বতন্ত্র প্রার্থী রুডেন লেপচার থলিতে। বাকি ২৯০টি আসন নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি। ২১৩টি আসনে ফুটেছে ঘাসফুল বাকি ৭৭টিতে পদ্ম। এতেই বোঝা যাচ্ছে কতটা দ্বিমুখী হয়েছে লড়াই।
দেখা যাচ্ছে শহরাঞ্চলের মানুষের সমর্থন একেবারেই পায়নি বিজেপি। কলকাতা এবং তার আশপাশের জেলাগুলিতে বিজেপির খারাপ ফল করেছে। রাজ্যের ২৩টি জেলার ৬টিতেই একটিও আসন জোটেনি সর্বভারতীয় দলটির। এই জেলাগুলি হল - কলকাতা, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব বর্ধমান, ঝাড়গ্রাম, এবং কালিম্পং।
অন্যদিকে, ২১৩ আসনে জেতা তৃণমূলও জেতেনি দার্জিলিং, কালিম্পং এবং আলিপুরদুয়ার জেলায়। কালিম্পং-এর একমাত্র আসনে জয়ী হয়েছেন নির্দল প্রার্থী, আর আলিপুরদুয়ারের একমাত্র আসনে জয়ী বিজেপি প্রার্থী। দার্জিলিং-এ পাহাড়ের তিন আসনে প্রার্থী দেয়নি তৃণমূল। সমতলের দুই আসনেই হেরেছে তারা। তাদের সঙ্গীরাও পাহাড়ের তিন আসনে পরাজিত।
তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল স্বাধীনতার পর থেকে এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় কংগ্রেস এবং বাম দলের কোনও প্রতিনিধিত্ব থাকছে না। রাজ্যের ২৩টি জেলাই বাম দল ও কংগ্রেসকে শূন্য হাতে ফিরিয়েছে। এমনকী মালদা, মুর্শিদাবাদেও মুখ থুবড়ে পড়েছে জাতীয় কংগ্রেস। তীব্র রাজনৈতিক মেরুকরণের এবং তার সঙ্গে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ - এই দুইয়ের মিশেলেই এমনটা ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
মালদা-মুর্শিদাবাদে এতদিন সেভাবে ভাল ফল না করা তৃণমূল অভাবনীয় ভালো ফল করেছে। মালদার ১২টি আসনের মধ্যে ৮টিতে জয়ী তারা, আর মুর্শিদাবাদের ২০টি আসনের ১৭টি গিয়েছে তৃণমূলের ঘরে। মালদহ এবং মুর্শিদাবাদ দুটিই মুসলিম অধ্যুষিত জেলা। মালদহে মুসলিম, মোট জনসংখ্যার ৪৯ শতাংশের কিছু বেশি, আর মুর্শিদাবাদে ৬৬ শতাংশের কিছু বেশি। কংগ্রেসের গড় হিসাবে এতদিন পরিচিত এই দুই জেলাতেই, বিজেপিকে রুখতে মুসলমানরা ঢেলে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন - দেশে মোদী বিরোধী প্রধান মুখ হলেন মমতা, এক পায়ে বাংলা জেতার পর এবার কি দুই পায়ে দিল্লি
আরও পড়ুন - আর ভোট-কুশলী হিসাবে কাজ করবেন না প্রশান্ত কিশোর, বাংলার ফল বের হতেই বিরাট ঘোষণা
শুধু এই দুই জেলাতেই নয়, রাজ্যের প্রায় সর্বত্রই এই ৩০ শতাংশ, অর্থাৎ রাজ্যের মুসলিম জনসংখ্য়ার ভোট তৃণমূলের ঝুলিতে সংহত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সেই একই ঘটনা দেখা যায়নি ৭০ শতাংশ, অর্থাৎ হিন্দু ভোটারদের ক্ষেত্রে। বরং রাজ্যের শিক্ষিত অংশ প্রধানত এখনও বাম মনোভাবাপন্ন এবং তাঁরা বিজেপিব় চড়া দাগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যানই করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। আর এই কারণেই শহরাঞ্চলে সেভাবে ভোট পায়নি বিজেপি। শুধু তাই নয়, বিজেপি বিরোধী শক্তির প্রধান মুখ হিসাবে বাম-কংগ্রেস নয়, তাঁরা বেছে নিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসকেই। এই ক্ষেত্রে আইএসএফ, যাদের ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে তর্ক রয়েছে শিক্ষিত সমাজে, তাদের সঙ্গে জোট গড়া বাম-কংগ্রেসের কাল হয়েছে।
"
আর এই সব কারণেই বিজেপি-তৃণমূল রাজনৈতিক মেরুকরণ এতটা স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে এইবারে বঙ্গ নির্বাচনে, এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।