সংক্ষিপ্ত
বাড়ির চৌকাঠে আবুল কালাম, আবু তৌহিদ ঢুকতেই পরিবারের সকলে আবেগে কান্নায় ভেঙে পড়ে। যদিও দীর্ঘ পরিশ্রম শেষে বাড়ি ফিরলেও প্রত্যেকের চোখে মুখেই রয়েছে আতঙ্কের ছাপ।
চোখেমুখে আতঙ্কের রেশ। আপনজনদের সঙ্গেও কথা বলতে যেন ইতস্তত করছে তারা। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে মুর্শিদাবাদের মাটিতে তিন পড়ুয়াকে বাড়ি ফেরাল প্রশাসন। রবিবার দুপুরের পর থেকে এলাকায় যেন মেলা বসেছে তাদের মুখ থেকে কথা শোনার জন্য। কলকাতা বিমানবন্দরের নামেন সুমন ঘোষ, আবুল কালাম, আবু তৌহিদ শেখ। আবুল ও আবুর বাড়ি সারগাছি লাগোয়া বেলডাঙা এলাকায়। জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি গিয়ে তাঁদের নিয়ে আসেন। গাড়ি করে প্রত্যেককে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। স্বস্তি মিলেছে পরিবারের। বাড়ির চৌকাঠে আবুল কালাম, আবু তৌহিদ ঢুকতেই পরিবারের সকলে আবেগে কান্নায় ভেঙে পড়ে। প্রত্যেকের চোখে মুখে আতঙ্ক।
বাড়ি এলেও এখনও ইউক্রেনের দুর্বিষহ স্মৃতি তাড়া করছে তাঁদের। আবুল কালাম বলেন, “বাড়ি ফিরতে পেরে অবশ্যই ভালো লাগছে। তবে ওখানে যে সমস্ত বন্ধুরা আটকে আছে তাদের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে আছি। ওদেরকে ফেরানোর জন্য কেন্দ্রের প্রশাসন যথেষ্ট ব্যবস্থা করছে। তবে ইউক্রেন ছাড়ার সময়টা ছিল খুব ভয়াবহ। প্রায় ১৫ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে খারকিভ পৌঁছতে হয়েছিল। আমরা প্রায় ১৫০ জন প্রত্যেকে হাতে ভারতীয় পতাকা নিয়ে হেঁটেছিলাম। রাস্তায় সমস্ত ভাঙা গাড়ি, দু’ধারে ভাঙা বাড়ি। তখনও ধোঁয়া উঠছে, অর্থাৎ কিছুক্ষণ আগে ধ্বংস হয়েছে। এমনকী একটি বোমা এসে পড়ল। রাস্তার পাশে পড়লে ভীষণ বিপদে পড়তাম।”
আরও পড়ুন- রাশিয়ান মহাকাশযান থেকে মুছে গেল আমেরিকা-জাপান-ব্রিটেনের পতাকা, রইল ভারতের তেরঙা পতাকা
এদিনই ইউক্রেন থেকে বাড়ি ফিরল জঙ্গিপুর মহাকুমা সুমন ঘোষ। ভয়াবহ যুদ্ধের মুখ থেকে বাড়ি ফিরা আসায় খুশি পরিবার ও এলাকাবাসী। সুমনের বাড়ি চৌকিগ্রামে। ইউক্রেনের ভিএন করাজিন খারকিভ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলেন ২০১৯ সালে। প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে আটকে পড়া মুর্শিদাবাদের বেশ কয়েকজন পড়ুয়ার খোঁজ পায় জেলা প্রশাসন। তাঁদের তথ্য কেন্দ্র সরকারের কাছে পাঠায় জেলা প্রশাসন। সেই তথ্য বিদেশ মন্ত্রকের কাছে পাঠায় রাজ্য। তারপর তাঁদের ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়। পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি ও রোমানিয়া থেকে দিল্লিতে আসার পর তাঁদের বিমানে করে কলকাতায় আনা হয়। রাজ্য সরকার গেস্ট হাউসে থাকার বন্দোবস্ত করে। সেখানে পৌঁছে যান মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা। জেলা প্রশাসনের অধিকারিকরা পড়ুয়াদের গ্রহণ করে গাড়ি করে মুর্শিদাবাদে প্রত্যেকের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন। ডিস্ট্রিক্ট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অফিসার কমল চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের জেলার তিন পড়ুয়া কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন। তাঁদের নিয়ে আমরা সকালে বাড়িতে পৌঁছে দিলাম"। এদিকে আশা-আশঙ্কার দোলাচলের মধ্যে অবশেষে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসায় খুশির হাওয়া বইছে প্রতিটা পরিবারেই।