সংক্ষিপ্ত

  • ঘূর্ণিঝড় আমফান এবার পরিণত হল সুপার সাইক্লোনে
  • যার জেরে এখন দিঘা ও পারাদ্বীপ সংলগ্ন উপকূল উত্তাল
  • বঙ্গোপসাগরের উপরে হাওয়ার গতিবেগ ২০০ কিলোমিটার পার করেছে
  • পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের জেলাগুলিতেও বইছে ঝোড়ো হাওয়া
     

সুপার সাইক্লোনে পরিণত হল আমফান। যার জেরে এখন এর ভরকেন্দ্রের গতিবেগ ঘণ্টায় ২৭৫ কিলোমিটারের পৌঁছেছে। আর এতে দিঘা ও পারাদ্বীপ এবং হাতিয়া দ্বীপের সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগও ২০০ কিলোমিটার পার করেছে। উত্তাল হয়ে রয়েছে সমুদ্র। বঙ্গোপসাগরের ঢেউ-এর এক একটি উচ্চতাই এখন ৪০ ফুটের উপরে। এই অবস্থায় আরও একবার উপকূলবর্তী এলাকায় সতর্কতা জারি করেছে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর। দিঘা-তেও উত্তাল হয়ে রয়েছে সমুদ্র। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী বুধবার বিকেল থেকে সন্ধের মধ্যে দিঘা উপকূল এলাকায় আঁছড়ে পড়বে আমফান। পারাদ্বীপ আমফানের আওতায় থাকলেও সেখানে এই ঝড় আঁছড়ে পড়বে না। শুধুমাত্র স্পর্শ করে দিঘার দিকে ধেয়ে আসবে আমফান। তবে, পারাদ্বীপ যেহেতু আমফানের যাত্রাপথের প্রথম স্থলভাগ ফলে সেখানে ইতিমধ্যেই ঝোড়ো হাওয়ার গতিবেগ ১০০ কিলোমিটার ছুঁয়েছে। 

আরও পড়ুন-আমফান-এর সঙ্গে করোনা দোসর, মাস্ক-পিপিই পরেই মাঠে নামবে উদ্ধারকারীরা

আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী আমফানের এই সুপার সাইক্লোন অবস্থা বেশিক্ষণ স্থায়ী থাকবে না। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে একটু একটু করে শক্তিক্ষয় হবে তারা। যার ফলে সুপার সাইক্লোন থেকে চরম শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে আমফান। এই সময়ে এর নিজস্ব ভরকেন্দ্রে গতিবেগ ২৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় নেমে আসার কথা। এরপর স্থলভাগ লক্ষ করে আমফান যত অগ্রসর হবে ততই এর গতি কমতে থাকবে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী মঙ্গলবার রাতের মধ্যেই এর গতিবেগ ২১০ কিলোমিটারে নেমে আসবে। ২০ মে অর্থাৎ বুধবার সকালের মধ্যে এটা ২০০ কিলোমিটার গতিবেগে নেমে আসবে। এই গতিবেগ নিয়েই বুধবার বিকেল বা সন্ধে নাগাদ দিঘা উপকূলে আঁছড়ে পড়ার কথা আমফানের।  

আরও পড়ুন-নবান্নকে না জানিয়ে মোদীর আমফান বৈঠকে রেসিডেন্ট কমিশনারকে ডাক, বেজায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী

আমফানের জেরে সোমবার রাত থেকেই আকাশ মেঘলা হয়ে রয়েছে। বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসের পূর্বাভাস থাকলেও কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলিতে ঝোড়ো হাওয়া এখনও শুরু হয়নি। তবে, উপকূলবর্তী এলাকায় আস্তে আস্তে ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনের ফলে ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় প্রবলভাবে ঘাম হচ্ছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে মঙ্গলবারও কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে এবং উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ জেলাতেই বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি এবং বজ্র-বিদ্যুৎ-সহ ঝড়ের সম্ভাবনা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু, উপকূলবর্তী এলাকা এবং উত্তরবঙ্গের বেশি কিছু স্থানে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি হয়েছে।

আরও পড়ুন-আমফানের তাণ্ডবে বিপদের আশঙ্কা, বসিরহাটে হলুদ সতর্কতা জারি প্রশাসনের

মঙ্গলবার সকালে যে আবহাওয়ার বুলেটিন দেওয়া হয়েছে তাতে উল্লেখ করা হয়েছে আমফানের সঙ্গে স্থলভাগের দূরত্বের কথা। পারাদ্বীপ থেকে এদিন সকাল পর্যন্ত সুপার সাইক্লোন আমফানের দূরত্ব ছিল ৫৭০ কিলোমিটার। দিঘা থেকে এই দূরত্ব ছিল ৭২০ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে এই দূরত্ব ছিল ৮৪০ কিলোমিটার। আমফান গত ছয় ঘণ্টায় ১৪ কিলোমিটার গতিতে অগ্রসর হয়েছে। আবহাওয়ার যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে তাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে আমফানের আঁছড়ে পড়ার সময় পশ্চিমবঙ্গীয় উপকূল এলাকায় বাতাসের গতিবেগ ১৯৫ কিলোমিটারে পৌঁছবে। আর এই ঝোড়ো বাতাসের সর্বনিম্ন গতি থাকবে ১৬৫ থেকে ১৭৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। 

ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় মৌসুম ভবন থেকে বঙ্গোপসাগর লাগোয়া রাজ্যগুলিকে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। সবচেয়ে বেশি সতর্কতা জারি করা হয়েছে ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গকে। এছাড়াও বাংলাদেশের সঙ্গে আলাদাভাবে সতর্কতা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কারণ, পারাদ্বীপ ও দিঘা উপকূল যেমন ঘূর্ণিঝড়ের মূল অভিমুখে রয়েছে, তেমনি রয়েছে বাংলাদেশের খেপুপাড়া এবং ল্যান্ড ফলের পর আমফান বাংলাদেশের দিকে ধাবিত হবে। এর জন্য ২০ তারিখ থেকে এই সমস্ত জায়গাগুলি যাতে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকে তার জন্য আগাম সতর্ক করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও বিশেষভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে। খোলা হচ্ছে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোলরুম। রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূল তীবরবর্তী এলাকাগুলি থেকে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ চলছে। মৎস্যজীবীরা যাতে সমুদ্রে না যায় তার জন্য সমানে মাইকিং করা হচ্ছে। আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর স্যাটেলাইট ইমেজে পরিস্কার ধরা পড়েছে যে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ছবি। ঢেউ-এর উচ্চতা বেড়ে গিয়েছে। এমনকী ঘূর্ণিঝড় আমফান-এর কেন্দ্রে থাকা রাগড-আই-কেও চিহ্নিত করা গিয়েছে। তাই আশা করা হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়টি নিজের পর্যাপ্ত শক্তি সঞ্চয় করে নিয়েছে। রাগড-আই থাকার জন্য ল্যান্ড ফল হলেই ঘূর্ণিঝড়টি দূর্বল নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার যাবতীয় সম্ভাবনা রয়েছে বলেও পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।