সংক্ষিপ্ত
দেশের মধ্যেই এক রাজ্যের মানুষের প্রতি পার্শ্ববর্তী রাজ্যের মানুষের বিতৃষ্ণার ছবি অনেকেরই পরিচিত। কিন্তু, এক রাজ্যের মানুষের অন্য রাজ্যে গিয়ে গ্রাম্য মানুষের ভালোবাসা পাবার কথা আমাদের ‘পঞ্চায়েত’ সিরিজের গল্প মনে করিয়ে দিতেই পারে, তবে, বাস্তবে তা অবশ্যই সম্ভব। অন্ধ্রপ্রদেশের মালা পরমেশের বাংলায় আসার গল্প সেই বন্ধুত্বেরই জলজ্যান্ত নজির।
সাদা জামাতে একের পর এক বাংলার মানুষের স্বাক্ষর। সেই শুভেচ্ছা বার্তায় ভরা জামা আর চোখের জলকে সম্বল করে বীরভূম থেকে জন্মভিটেয় ফিরে যাচ্ছেন অন্ধ্রপ্রদেশের যুবক মালা পরমেশ।
বছর দু’য়েক আগে ডাক বিভাগের কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে বাড়ি ছেড়ে সুদূর অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আসতে হয়েছিল বীরভূম জেলার নলহাটির ২ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত ভদ্রপুর গ্রামে। ২০২২ সালে সেখান থেকে বদলি নিয়ে জন্মভিটেয় ফিরতে গিয়ে চোখের কোণে জল চিকচিকিয়ে উঠছে মালা পরমেশের। তাই প্রথম কর্মক্ষেত্রের স্মৃতি ধরে রাখতে নতুন জামার ওপর ভদ্রপুরের গ্রামবাসীদের স্বাক্ষর ধরে রাখলেন তিনি। কাছের মানুষদের মিষ্টিমুখ করিয়ে আশীর্বাদ চেয়ে নিলেন ভদ্রপুর পোষ্ট অফিসে কর্মরত সকলের পছন্দের পিওন।
মালা পরমেশ। বাড়ি অন্ধ্রপ্রদেশের কুরনল জেলার বানাভানুর গ্রামে। ২০২০ সালে কর্মসূত্রে তাঁকে আসতে হয়েছিল বীরভূমের ভদ্রপুর গ্রামে। ওই গ্রামেই তিনি পিওনের পদে কাজ শুরু করেন। বাংলায় এসে প্রথম দিকে ভাষাগত সমস্যায় পড়তে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু নিজের প্রচেষ্টায় কিছুদিনের মধ্যেই ভাঙা ভাঙা বাংলা শিখে ফেলেন তিনি। দীর্ঘ ২ বছর ধরে বাড়ি বাড়ি চিঠি পৌঁছে দিয়ে এতদিনে তিনি হয়েছিলেন এলাকার খুব পরিচিত মুখ এবং অবশ্যই একজন প্রিয়জন।
দিন দুয়েক আগে তাঁর বদলির কাগজ এসে পৌঁছোয়। অন্ধ্রপ্রদেশে তাঁকে দ্বিতীয় পোস্টিং দেওয়া হয়েছে তাঁর নিজের গ্রামেই। শনিবার নিজের রাজ্যে ফিরে যাবার আগে একটি সাদা জামা কিনে সেটির ওপর তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে স্বাক্ষর করিয়ে নিলেন স্মৃতি হিসেবে। কারও কারও ফোন নম্বরও থেকে গেল জামার ওপরেই। মালা পরমেশ বললেন, “আমি যখন এখানে এসে কাজে যোগদান করি, তখন বাংলা জানতাম না। ফলে, খুব সমস্যায় পড়তে হত। কিন্তু, এলাকার মানুষ যেভাবে আমার পাশে থেকেছেন, সেটা আমি সারা জীবনেও ভুলতে পারব না। আমি কৃতজ্ঞ ভদ্রপুরের মানুষের কাছে। আমি এখন এই এলাকাটাকে সত্যিই ভীষণ ভালোবাসি। তাই জামার ওপর গ্রামবাসীর স্বাক্ষর ও ফোন নম্বর সংগ্রহ করে রাখলাম। নিজের গ্রামে ফিরে গিয়ে এই জামাকেই স্মৃতি হিসাবে আঁকড়ে রাখব।”
স্থানীয় বাসিন্দা শুভাশিস ভট্টাচার্য বলেন, “পরমেশ প্রথম যখন ভদ্রপুরে আসে তখন সে ভাষা সমস্যায় ভুগছিল। আমাদের কাছে এসে বাংলা ভাষাকে রপ্ত করেছে। এখন বদলি নিয়ে নিজের গ্রামে ফিরে যাচ্ছে। তাই আমাদের নাম তার স্মৃতির মণিকোঠায় ধরে রাখতে জামার ওপরে স্বাক্ষর ও ফোন নম্বর সংগ্রহ করে রাখছে। পরমেশ বদলি হয়ে যাওয়ায় আমাদের খুব খারাপ লাগছে।”
দেশের মধ্যেই এক রাজ্যের মানুষের প্রতি পার্শ্ববর্তী রাজ্যের মানুষের বিতৃষ্ণার ছবি অনেকেরই পরিচিত। কিন্তু, এক রাজ্যের মানুষের অন্য রাজ্যে গিয়ে গ্রাম্য মানুষের ভালোবাসা পাবার কথা আমাদের ‘পঞ্চায়েত’ সিরিজের গল্প মনে করিয়ে দিতেই পারে, তবে, বাস্তবে তা অবশ্যই সম্ভব। অন্ধ্রপ্রদেশের মালা পরমেশের বাংলায় আসার গল্প সেই বন্ধুত্বেরই জলজ্যান্ত নজির।
আরও পড়ুন-
পুনেতে মাছ ভাজা নিয়ে অশান্তি, রড দিয়ে মেরে খুন বাংলার শ্রমিককে
'চোর ধরো জেল ভরো'- বামপন্থী শ্রমিক কর্মচারী সংগঠনএর স্লোগান
সম্পূর্ণ উল্টো পথে হেঁটেই সাফল্য জোহোর, ২ হাজার কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা স্টার্টআপ সংস্থার