সংক্ষিপ্ত

  • করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রসূতি
  • শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা অনেকটাই কমে গিয়েছিল
  • সিজারের মাধ্যমে তাঁর গর্ভস্থ সন্তান প্রসবের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা
  • প্রসূতি ভেন্টিলেশনে থাকা সত্ত্বেও তাঁর অস্ত্রোপচার করলেন চিকিৎসকরা

করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রসূতি। এদিকে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা অনেকটাই কমে গিয়েছিল। প্রায় ৬০ থেকে ৬২-তে নেমে যায় অক্সিজেনের মাত্রা। এর ফলে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়েছিল কোভিডে আক্রান্ত অন্তঃসত্ত্বাকে। কিন্তু, তাঁর গর্ভস্থ সন্তানকে কীভাবে বাঁচাবেন তা ভাবতে পারছিলেন না চিকিৎসকরা। এরপর খানিকটা ঝুঁকি নিয়েই ভেন্টিলেশনে থাকা ওই মহিলার অস্ত্রোপচার করে কন্যাসন্তানের জন্ম দিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা। সোমবার ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের মধ্যেই অস্থায়ী অপারেশন থিয়েটার তৈরি করে অস্ত্রোপচার করা হয়। তবে নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নেওয়া সদ্যোজাতকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছে। 

আরও পড়ুন- দৈনিক ৩ লক্ষ করে দিতে গেলে ৫ দিনের টিকা মজুত রাজ্যে, বলছে স্বাস্থ্য দফতর

উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর বাসিন্দা রাখী মণ্ডল বিশ্বাস (৩৩)। করোনা আক্রান্ত হওয়ায় ১২ জুন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেই সময় ৩৩ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন তিনি। যদিও তাঁর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক ছিল। হাসপাতাল সূত্রের খবর, অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকায় তাঁকে বাইপ্যাপ দিয়ে রাখতে হয়েছিল। সঙ্গে চলছিল করোনার বিভিন্ন কড়া ডোজের ওষুধ। সিজারিয়ান পদ্ধতিতে রাখিদেবীর প্রসবের ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন হাসপাতালের অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক অসীম কুণ্ডু। সেই মতো বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। 

এরপর ১৭ জুন হাসপাতালের তরফে পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। স্ত্রীরোগ, নবজাতক, অ্যানাস্থেশিয়া-সহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকরা ছিলেন সেই বোর্ডে। এদিকে রবিবার হঠাৎই রাখী দেবীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। তাঁর রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা তখন অনেকটাই কম ছিল। এরপরই স্বাস্থ্য দপ্তরের বিশেষ নির্দেশে সোমবার রাখীদেবীর অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেয় মেডিক্যাল বোর্ড।

আরও পড়ুন- নারদ মামলায় হলফনামা নিতে অস্বীকার হাইকোর্টের, নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মমতা

অসীমবাবু বলেন, "আলোচনার পরে গত ১৯ জুন, শনিবার সিদ্ধান্ত হয় যে, ওই রোগীকে ক্রিটিক্যাল কেয়ার থেকে স্ত্রীরোগ বিভাগে নিয়ে গিয়ে সিজার করে ফিরিয়ে আনা হবে। সেই মতো সোমবার প্রক্রিয়াটি করার সিদ্ধান্ত হয়।" কিন্তু ২০ জুন, রবিবার ভোর থেকেই ওই মহিলার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৬০-৬২ শতাংশে নেমে যাওয়ার তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, গর্ভাবস্থায় প্রোজেস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির কারণে এমনিতেই শ্বাসের সমস্যা থাকে। জরায়ু বড় হয়ে অনেকটা জায়গা জুড়ে থাকার ফলে ফুসফুসের নিচের পেশির উপর চাপ পড়ে। এই অবস্থায় রাখীদের গর্ভস্থ সন্তানকে সিজারের মাধ্যমে বের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মেডিক্যাল বোর্ড। 

আরও পড়ুন-প্লাস্টিক জমে বন্ধ নিকাশী নালা, হাঁটু জল গলসিতে

সেই মতো সোমবার ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের মধ্যেই অস্থায়ী অপারেশন থিয়েটার তৈরি করে রাখীদেবীর অস্ত্রোপচার করা হয়। সিজারের মাধ্যমে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। তবে নির্দিষ্ট সময়ের আগে হওয়ায় সদ্যোজাতকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছে। তবে এই অস্ত্রোপচারে অনেক ঝুঁকি ছিল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক পূজা। করোনার একাধিক কড়া ওষুধ খাওয়ার ফলে রাখীদেবীর রক্ত পাতলা হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের আশঙ্কা ছিল। যদিও সব প্রতিকূলতাকে জয় করে অসাধ্য সাধন করেন চিকিৎসকরা।