সংক্ষিপ্ত

শহরের বেশ কিছু ধনী পরিবার থাকতেন জোড়াসাঁকো-পাথুরিয়াঘাটা এলাকায়। নতুন বাজার থেকে কিছুটা দূরেই ছিল ‘ঠাকুর’ প্যালেস। সেজন্য ময়রা, অর্থাৎ মিষ্টিশিল্পীদের কাছে ব্যবসা বাড়িয়ে তোলার এটাই ছিল সুযোগ্য সময় এবং স্থান।

কলকাতার নতুন বাজার নামক এলাকাটি মোটেই খুব সুন্দর নয়, অন্তত একজন বহিরাগতের জন্য তো নয়ই। দোকানপাট এবং অস্থায়ী স্টলে সবজি এবং ওষুধ থেকে শুরু করে জামাকাপড় পর্যন্ত সমস্ত কিছুই এখানে বিক্রি হয় অপরিষ্কার গলিগুলির ভেতরে। অর্ধেক ভেঙে পড়া দালান সারিবদ্ধভাবে ঘিরে থাকে। যদিও, দেখার আনন্দ পাওয়ার জন্য এখানে কেউ আসেন না। এটা মূলত খাদ্যরসিকদের জায়গা। বিশেষ করে যাঁরা মিষ্টি খেতে ভালোবাসেন।

১৮৭১ সালে কলকাতার অন্যতম বড় ব্যবসায়ী রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক নতুন বাজারে কিছু মিষ্টির দোকান স্থাপন করেছিলেন। এই দোকানগুলিতে প্রধানত একটি জিনিস বিক্রি হয়, তা হল সন্দেশ। যে কোনও দিন, একজন দর্শনার্থী ঘন গলির ভেতরে পেয়ে যাবেন অমৃতের স্বাদ। কিছু কিছু সাদা মার্বেলের আকারের, শঙ্খের আকারে, কয়েকটি আবার কফি বাদামী রঙের চৌকো আকৃতির বা হলুদ গোলক, এরকম অগণিত আকারের রঙের এবং স্বাদে ভরা সন্দেশ এই বাজারের গলিঘুঁজিতে।

রাজা মল্লিক অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে কলকাতার চিৎপুর রোডে (বর্তমানে রবীন্দ্র সরণি) নতুন বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যখন কলকাতার দুটি এলাকায় বিভক্ত ছিল। হোয়াইট টাউন, যা মূলত ব্রিটিশদের ছিল এবং ব্ল্যাক টাউন, যা মূলত ভারতীয়দের জন্য। এই সময়ে শহরের খুব রমরমা চলছিল, শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছিল। বিভিন্ন প্রকল্প চালু হচ্ছিল। নতুন উদীয়মান ক্ষমতার সময়ে মানুষকে আকৃষ্ট করতে চাইলে তার জন্য একটি সহজ উপায় ছিল বাজার স্থাপন করা।

শহরের বেশ কিছু ধনী পরিবার থাকতেন জোড়াসাঁকো-পাথুরিয়াঘাটা এলাকায়। নতুন বাজার থেকে কিছুটা দূরেই ছিল ‘ঠাকুর’ প্যালেস। সেজন্য ময়রা, অর্থাৎ মিষ্টিশিল্পীদের কাছে ব্যবসা বাড়িয়ে তোলার এটাই ছিল সুযোগ্য সময় এবং স্থান। এখানে একটি সাপ্তাহিক হাট বসত, যেখানে রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক নতুন বাজার তৈরি করার অনেক আগে থেকেই ময়রারা অস্থায়ী স্টলে মন্ডা নামক একটি সাধারণ মিষ্টি বিক্রি করতে আসতেন। পরে যখন বাজার তৈরি হল, তখন তাঁরা স্থায়ী দোকান পেলেন। যা তাঁদের সত্যিকারের উন্নতি করতে সাহায্য করেছিল। এলাকার অভিজাত মানুষদের কাছে এই দোকানগুলি স্থায়ী বলে চিহ্নিত হওয়ায় মিষ্টির ব্যবসা এখানে ফুলেফেঁপে উঠল। ধনী বাঙালিরা প্রথম থেকেই নিজেদের ‘মিষ্টির মনিষী’ হিসেবে দেখতেন। তাঁদের কাছে, মিষ্টি শুধু খাবার সম্পূর্ণ করার একটা উপাদান ছিল না, এটা ছিল একটা শিল্প, একটা যত্নের কারুকাজ। সেই শিল্পের ধারা আজও প্রবহমান। কলকাতার নতুন বাজারের মিষ্টির স্বাদ সারা বাংলা জুড়ে প্রভূত জনপ্রিয়।

আরও পড়ুন-
নীল ড্রামের মুখ খুলতেই বেরিয়ে এল মহিলার ক্ষতবিক্ষত পচা লাশ, বেঙ্গালুরু শহরে একই ধরনের খুনের নেপথ্যে কোন রহস্য?
কুষ্ঠিতে যদি বিরাজ করে রাহু গ্রহের অশুভ প্রভাব, তাহলে তা নিরাময় করবেন কীভাবে? জেনে নিন সহজ কয়েকটি উপায়
রাহুর গ্রাসে কি ডুবে যাচ্ছে আপনার ভাগ্য? রাহুর দশায় কী কী ক্ষতি হয়, দোষ কাটাতে গেলে কী করবেন, জেনে নিন এখনই