সংক্ষিপ্ত

আপনার সিম কার্ড যদি অন্য কেউ ব্লক করে এবং আপনার নম্বরেই নিজের একটি সিম কার্ড বানিয়ে নেয়, তাহলে ব্যাঙ্কের ওটিপি তো তাঁর ফোনেই আসবে। এভাবেই কলকাতায় জালিয়াতির নতুন ফাঁদ। 

মনে করুন, আপনার মোবাইলের সিম কার্ডটি আপনার ফোনেই রয়েছে। হঠাৎ সেটি ব্লক হয়ে গেল। ফলত, টাকা পয়সা সংক্রান্ত যাবতীয় মেসেজ, যা এতদিন আপনার ফোনে ঢুকত, তা এখন থেকে আর আপনার কাছে আসছে না। আপনি কিছুই জানতে পারছেন না। কিন্তু, আরেকদিকে, সেই সব মেসেজ ঢুকছে অন্য কারুর ফোনে। অর্থাৎ, আপনার ব্যাঙ্কের তথ্য চলে যাচ্ছে প্রতারকদের ফোনে। ঠিক এই পদ্ধতিতেই একনাগাড়ে প্রায় ৭২ লক্ষ টাকা খুইয়ে কিছুই বুঝতে পারছিলেন না কলকাতার পোস্তা এলাকার ব্যবসায়ী। এরপরেই দ্বারস্থ হন কলকাতা পুলিশের। সেখান থেকেই হল প্রতারকদের পর্দাফাঁস।

প্রথমে টার্গেট করা হয় একটি মোবাইল ফোন নম্বর। সেই নম্বরটির সিম কার্ড হারিয়ে গেছে, এরকম মিথ্যে তথ্য দিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে প্রতারকরা নিজেই। এর পর, সেই অভিযোগপত্র দেখিয়ে সিম কার্ডের দোকানে গিয়ে পুরনো সিমটি (অর্থাৎ, আসল উপভোক্তার ফোনে সে সিমটি কার্যকর করা থাকে, সেটি) ব্লক করে নতুন সিম কার্ড কিনে নিজেদের ফোনে চালু করে নেয় তারা। তারপর সেটি দ্বারা শুরু হয় অনলাইন ব্যাঙ্কিং। এভাবেই প্রতারিত ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৭২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ২ প্রতারক। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম দীপক শিকদার এবং জগদীশ সর্দার। দুজনেরই বাড়ি দক্ষিণেশ্বরের আলমবাজারে।

ডিসেম্বর মাসে পোস্তা থানা এলাকার এক ব্যবসায়ী একটি চেক দিয়েছিলেন তাঁর একজন পাওনাদারকে। দেখা যায় তাঁর চেকটি বাউন্স করে গেছে, কারণ, অ্যাকাউন্টে নাকি পর্যাপ্ত টাকাই নেই। তখন ওই ব্যবসায়ী খোঁজ নিয়ে দেখেন, ঘটনার এক দিন আগে আরটিজিএস পদ্ধতিতে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৭২ লক্ষ টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই টাকা ভিন্ন ভিন্ন অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে। কিন্তু, দেখা যায়, তাঁর মোবাইলে কোনও মেসেজ ঢোকেনি। এর পরেই ওই ব্যক্তি বুঝতে পারেন, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত থাকা মোবাইল নম্বরটি কাজই করছে না। সঙ্গে সঙ্গে তিনি পোস্তা থানার দ্বারস্থ হন। ঘটনার তদন্তভার নেয় লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ।

তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ৭২ লক্ষ টাকার মধ্যে দীপক শিকদারের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা। সেই টাকা দিয়ে নৈহাটির একটি সোনার দোকান থেকে গয়নাও কেনা হয়ে গেছে। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে দীপককে শনাক্ত করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেফতার করেন লালবাজারের ব্যাঙ্ক প্রতারণা দমন শাখার তদন্তকারীরা। দীপককে জেরা করে খোঁজ মেলে জগদীশের। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা আন্তঃরাজ্য প্রতারণা-চক্রের সদস্য। কলকাতা, দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া-সহ একাধিক জেলায় একই কায়দায় জালিয়াতি করছিল তারা।

ধৃতদের জেরা করে গোয়েন্দারা জেনেছেন, তারা প্রথমে ওই ব্যবসায়ীর ফোন নম্বরের খোঁজ করে। এর পরে সিম কার্ড হারানোর কথা বলে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের একটি থানায় জেনারেল ডায়েরি করে। তার পরে সেই অভিযাগপত্র দেখিয়ে একই নম্বরে নতুন সিম কার্ড কিনে নেয়। ফলত, ব্যাঙ্কে টাকা তোলার বা ওটিপি আসার মেসেজটি সরাসরি তাদের হাতে থাকা ফোনেই ঢুকছিল এবং ব্যবসায়ীর হাতে থাকা ফোনের সিমটি ব্লক হয়ে গিয়েছিল। কোনও মেসেজ সেখানে যাচ্ছিল না। এভাবেই প্রতারকেরা অনলাইনে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের দখল নিয়ে নেয় এবং সেখানে থাকা টাকা আলাদা আলাদা অ্যাকাউন্টে সরিয়ে ফেলে। ফোন অকেজো থাকায় অভিযোগকারী এবিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিলেন।

এক তদন্তকারী অফিসারের দাবি, প্রতারণার এই গোটা ঘটনার সঙ্গে ব্যাঙ্কের কর্মীদের একাংশের যোগসাজেশ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারেন। তাদের সকলের খোঁজ চলছে।

আরও পড়ুন-
আইএসএফ-এর শতাধিক কর্মীকে আটক, ধর্মতলার খণ্ডযুদ্ধে খুনের চেষ্টার মামলা দায়ের
রাজনীতি থেকে নাগরিক জীবন, সারা সপ্তাহ জুড়ে ফোকাসে কোন কোন খবর? দেখে নিন টপ টেন

‘নেতাজি’, ১২৬ তম জন্মবার্ষিকীর আগে ফিরে দেখা তাঁর জীবন, ‘অন্তর্ধান’-এ আজও জিজ্ঞাসাচিহ্ন