সংক্ষিপ্ত

খোদ ক্যাগের অফিসেই আরটিআই অ্যাক্টিভিস্ট বিশ্বনাথ গোস্বামীকে নিগ্রহের অভিযোগ। কিন্তু, এই ঘটনায় অভিযোগ জানানোর পর কেটে গিয়েছে অনেকগুলো দিন। অথচ এফআইআর-ই দায়ের করতে পারেনি হেয়ারস্ট্রিট থানা।

 

তথ্যের অধিকার জানার আইনের কর্মীদের উপরে দেশজুড়েই বেড়েছে নিগ্রহের সংখ্যা। সরকারি দফতরে তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় কিছু জানতে চাওয়া মানেই শুরু হয়ে যায় ঢাকগুড়গুড়। যতটা না তথ্যের অধিকার আইনের আবেদনকারীদের তথ্য দেওয়া হয় তার থেকে নানা আছিলায় তথ্য না দেওয়ার প্রবণতার সংখ্যাটা তাৎপর্যপূর্ণভাবে ক্রমবর্ধমান। তথ্যের অধিকার আইন নিয়ে যারা কাজ করছেন তাঁদের উপরেও নানা সময় নেমে আসছে বহু ধরনের দমন-পীড়ন। এমনকী খোদ সরকারি দফতরেই সরকারি অফিসাররাও এই নিগ্রহকাণ্ডে অভিযুক্ত হয়েছেন বহু সময়ে। এমনই এক ঘটনা এখন হইচই ফেলে দিয়েছে এই বাংলার বুকে। খোদ কলকাতার বুকেই এক আরটিআই অ্যাক্টিভিস্ট-কে সরকারি দফতরের মধ্যেই নিগ্রহের অভিযোগ সামনে এসেছে।

ইতিমধ্যেই এই নিগ্রহের অভিযোগ নিয়ে হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন বিশ্বনাথ গোস্বামী। থানায় ডেকে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে পুলিশ। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কোনও এফআইআর-ই দায়ের করা হয়নি। হেয়ারস্ট্রিট থানা-সহ জয়েন্ট সিপি ক্রাইম এবং ডিসি সেন্ট্রাল-কে এই অভিযোগপত্র ই-মেলও করেছেন বিশ্বনাথ গোস্বামী। কিন্তু, কলকাতা পুলিশের জয়েন্ট সিপি ক্রাইম এবং ডিসি সেন্ট্রালের কাছেও এই নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট তথ্য নেই। এশিয়ানেট নিউজ বাংলার পক্ষ থেকে হেয়ারস্ট্রিট থানা থেকে শুরু করে জয়েন্ট সিপি ক্রাইম মুরলিধধর শর্মার অফিস এবং ডিসি সেন্ট্রাল রূপেশকুমার দফতরেও ফোন করেছিলেন খোদ এডিটর দেবজ্যোতি চক্রবর্তী। হেয়ারস্ট্রিট থানার তদন্তকারী অফিসার জানান যে বিশ্বনাথ গোস্বামীর সঙ্গে কথা বলা হলেও এতে কোনও এফআইআর দায়ের হয়নি। কিন্তু, কেন এফআইআর দায়ের হল না? সে প্রশ্ন করতেই তদন্তকারী অফিসার সাফ জানান আমি এখন আদালতে আছি, এর থেকে বেশি কিছু বলতে পারবো না বলে ফোন কেটে দেন।

হেয়ার স্ট্রিট থানার ইনচার্জকেও ফোন করা হয়। কিন্তু, এফআইআর দায়ের হয়নি বলে তিনি ফোন অন রাখলেও আর কোনও কথা বলেননি। ফোন না কেটেই তিনি থানার অন্য অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে যান। দুবার তাঁকে কল করা হলেও তিনি এই একই ব্যবহার বজায় রাখেন। একজন আরটিআই অ্যাক্টিভিস্ট-এর উপরে খোদ সরকারি দফতরে হামলার অভিযোগ পুলিশ এতটা নির্লিপ্ত কীভাবে থাকতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য।

সোমবার দুপুর থেকে লাগাতার জয়েন্ট সিপি ক্রাইমের দফতরের ল্যান্ড লাইন নম্বরে ফোন করা হয়, কখনও ১০ মিনিট পরে ফোন করতে বলা হয়, কখনও আবার একটু বাদে ফোন করুন, অথবা যিনি কথা বলবেন তিনি নেই। এমনভাবে চলতে থাকে। মুরলিধর শর্মার সঙ্গে কথা বলার সুযোগই তাঁর অফিস থেকে দেওয়া হয়নি। শেষমেশ অনেক কষ্টে জানা যায় যে বিশ্বনাথ গোস্বামীর করা ই-মেল তারা ডিসি সেন্ট্রালকে ৬ তারিখে ফরওয়ার্ড করে দিয়েছেন। তাদের দিক থেকে কোনও তদন্ত হয়েছে কি না তা নিয়ে কোনও তথ্যই জয়েন্ট সিপি ক্রাইমের অফিস দিতে পারেনি।

ডিসি সেন্ট্রাল-এর অফিসেও ফোন করতে একই দৃশ্য। কোনও আরটিআই অ্যাক্টিভিস্ট-এর উপরে হামলা হয়েছে এমন কথা শুনে তারা যেন আকাশ থেকে পড়েন। ডিসি সেন্ট্রাল মিটিং-এ ব্যস্ত আছেন, কথা বলতে পারবেন না বলে জানিয়েও দেওয়া হয়। ৪ তারিখে বিশ্বনাথ গোস্বামী যে মেল করেছেন সে কথা বলার পরও তারা সে মেল খুঁজে বের করতে পারেননি। এমনকী, জয়েন্ট সিপি ক্রাইম থেকে মেল যে ফরওয়ার্ড করা হয়েছে তা নিয়েও কোনও নির্দিষ্ট তথ্য এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দিয়ে উঠতে পারেনি ডিসি সেন্ট্রালের অফিস।

পুরো বিষয়টি নিয়ে ক্যাগের শীর্ষকর্তা পরভীন মেহতার দফতরেও যোগাযোগ করা হয়েছিল। তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত থাকলেও এই নিয়ে কোনও কমেন্ট করতে চাননি। বিষয়টি নিয়ে ক্যাগের মিডিয়া উপদেষ্টা বিএস চৌহানের সঙ্গেও কথা বলতে বলা হয়। কিন্তু, বিএস চৌহানের দফতর থেকেও জানানো হয় যে তিনি মিটিং-এ ব্যস্ত। বিএস চৌহানের মোবাইল নম্বরে ঘটনার কথা জানিয়ে মেসেজ পাঠিয়ে রাখা হলেও তার কোনও উচ্চর মেলেনি।

খোদ ক্যাগের দফতরের ভিতরে এক সরকারি অফিসার তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে এক আরটিআই অ্যাক্টিভিস্টের উপরে চড়াও হচ্ছেন- এমন অভিযোগের পরও পুলিশ-প্রশাসন থেকে শুরু করে অভিযুক্ত সরকারি দফতরেরর নীরবতা স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক বাড়াতে বাধ্য। বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ক্যাগের অন্যতম শীর্ষ কর্তা সতীশ গর্গের সঙ্গেও কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তিনিও মিটিং-এ ব্যস্ত বলে জানিয়ে দেন সতীশের প্রাইভেট সেক্রেটারি। তবে, তিনি জানান, অভিযোগ তারা পেয়েছেন এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তথ্যের অধিকার আইন যথাযথভাবে মানছে না সরকার। এমন অভিযোগে দেশের বিভিন্ন হাইকোর্ট থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক মামলা চলছ। খোদ সুপ্রিমকোর্টও তথ্যের অধিকার আইন নিয়ে কাজ করা কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যেভাবে নানা আছিলায় তথ্য জানানো হচ্ছে না তাকেও তুমুলভাবে ভর্ৎসন্যা করেছে শীর্ষ আদালত। এতকিছুর পরেও কীভাবে খোদ ক্যাগের অফিসে একজন আরটিআই অ্যাক্টিভিস্ট-কে নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে তা নিয়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় যে এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে কোনও বিভাগীয় তদন্তই শুরু করতে পারেনি ক্যাগ।

আরও পড়ুন- 
CAG অফিসে আক্রান্ত আরটিআই অ্যাক্টিভিস্ট বিশ্বনাথ গোস্বামী, ২ দিন পরে অভিযোগ গ্রহণ পুলিশের  
'লং লিভ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়'- অভিষেককে সঙ্গে নিয়ে উষ্ণ অর্ভ্যথনায় মেঘালয়ে পা তৃণমূল নেত্রীর 
গণ অর্থসংগ্রহ কর্মসূচি সিপিআইএমের, যাদবপুরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অর্থ সংগ্রহ করলেন কমরেড বিমান বসু