সংক্ষিপ্ত

বেশ কিছুদিন ধরে রাজ্য রাজনীতিতে জল্পনা চলছে, তৃণমূল কংগ্রেসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমান্তরাল শক্তি হয়ে উঠেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ইংরাজি নতুন বছরে কি এককভাবে চলবেন অভিষেক?

২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরু থেকেই তিনি দলে গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তাঁর নেতৃত্বে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সমান্তরাল সংগঠন 'যুবা' তৈরি করা হয়েছিল। যা ভালোভাবে নেননি তৃণমূল যুব কংগ্রেসের তৎকালীন সভাপতি শুভেন্দু অধিকারী। পরবর্তীকালে দলে অভিষেকের পর ও প্রভাব যত বেড়েছে, ততই শুভেন্দুর প্রভাব কমেছে। যার ফলশ্রুতিতে দল ছেড়েছেন একদা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ নেতা শুভেন্দু। তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা একাধিকবার ইঙ্গিত দিয়েছেন, দলে তাঁর জায়গা নেবেন অভিষেক। সম্প্রতি শাসক দলের একাধিক নেতা, বিধায়ক দাবি তুলেছেন, রাজ্য সরকারেও অভিষেককে গুরুত্বপূর্ণ পদে আনতে হবে। মমতা এখনও এ বিষয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি। মন্ত্রিসভা রদবদলের ইঙ্গিতও পাওয়া যায়নি। শাসক দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দিল্লিতে জাতীয় রাজনীতি নিয়ে যাঁরা দলের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে বক্তব্য পেশ করবেন, তাঁদের অন্যতম অভিষেক। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কি শুধু দিল্লির রাজনীতি নিয়েই থাকবেন? বাংলার রাজনীতিতে কি তাঁর কোনও ভূমিকাই থাকবে না?

নতুন বছরে 'স্বনির্ভর' অভিষেক?

প্রায় দেড় দশকের সক্রিয় রাজনৈতিক জীবনে বরাবরই মমতার সঙ্গে জুড়ে থেকেছেন অভিষেক। দলের বেশিরভাগ পোস্টার-ব্যানারেই মমতা ও অভিষেকের ছবি দেখা যায়। গত কয়েক বছরে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে নববর্ষের যে শুভেচ্ছাবার্তা জানিয়েছেন অভিষেক, সেখানেও তাঁর সঙ্গে মমতার ছবি দেখা গিয়েছে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। ফেসবুক পোস্টে শুধু নিজের ছবি দিয়েছেন অভিষেক। কোথাও মমতার ছবি নেই। অভিষেকের ফেসবুক পোস্টের উপরে তৃণমূল কংগ্রেসের লোগো ও পতাকা। তারপর লেখা, 'প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সকলেই জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। রাজ্য তথা দেশবাসীর উন্নয়নের স্বার্থে মা মাটি মানুষ সর্বদা নিয়োজিত। তৃণমূল কংগ্রেস পরিবারের সকল কর্মীর আত্মত্যাগ এবং নিরলস প্রচেষ্টাকে আমার কুর্ণিশ। তাঁরাই আমাদের দলের মেরুদণ্ড। নতুন বছরে নব উদ্যমে আগামীর লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হন। সকল ক্লেদ, বিষাদ, গ্লানি মুছে যাক সুখের পরশে- এটাই আমার প্রার্থনা।' অভিষেকের পোস্টে দল, দলীয় কর্মী, মা-মাটি-মানুষের কথা থাকলেও, দলের সুপ্রিমোর কথা কোথাও নেই। এক দশক আগেও রাজনৈতিক মহলে আলোচনা হত, তৃণমূল কংগ্রেস মানেই মমতা। তিনিই দলে প্রথম ও শেষ কথা। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। অভিষেক এখন দলে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তাঁর ফেসবুক পোস্ট যদি কোনও ইঙ্গিত দিয়ে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে, নতুন বছরে আর তিনি মমতার উপর নির্ভর করে চলতে চাইছেন না। বরং একা দলকে নেতৃত্ব দিতে চান। সেটা যদি হয়, তাহলে শাসক দলে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র নিয়ে টানাপোড়েন দেখা যেতে পারে। রাজ্য সরকারের উপর এর প্রভাব পড়তে বাধ্য।

'এক্স' হ্যান্ডলে অন্য বার্তা অভিষেকের

ফেসবুক পোস্টে নিজের ছবি দিলেও, 'এক্স' হ্যান্ডলে কোনও ছবি দেননি অভিষেক। তিনি ইংরাজিতে লিখেছেন, ‘আমরা ২০২৫ সালকে স্বাগত জানাচ্ছি। আসুন, আমরা আশা ও সংকল্প নিয়ে সামনের দিকে তাকাই। প্রতি নতুন বছর নতুন করে শুরু করার সুযোগ দেয়। সাহস, সহানুভূতি এবং উদ্দেশ্য নিয়ে পথ চলার সুযোগ পাওয়া যায়। এই বছর আমাদের সব বাধা অতিক্রম করে সম্প্রীতি গড়ে তুলতে হবে। হাতে হাত মিলিয়ে সবার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য কাজ করতে হবে। আমরা যেন ঐক্যের মধ্যে  শক্তি খুঁজে পাই, আমাদের হৃদয় যেন দয়ায় পূর্ণ থাকে। প্রতিটি পরীক্ষার মুখে যেন আমাদের প্রাণোচ্ছলতা বজায় থাকে। এ বছর যেন অর্থপূর্ণ উন্নতি হয়, সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়া যায় এবং পর্যাপ্ত সুযোগ পাওয়া যায়। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাই।’ 'এক্স' হ্যান্ডলে অভিষেকের পোস্টে কোথাও দলের কথা নেই। তিনি ব্যক্তিগতভাবে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। দুই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ভিন্ন পোস্ট ঘিরে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা চলছে।

 

আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।

আরও পড়ুন-

'উত্তরসুরী কে?' অভিষেক প্রশ্নে আগের অবস্থান থেকে ঘুরে গেলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বাংলাদেশে ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননা! রাগে রক্ত ফুটছে বলে জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

কেন্দ্রীয় সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে,তাতেই সমর্থন করবে তৃণমূল! জানালেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়